‘সব কিছুই যেন দুঃস্বপ্নের মধ্যে ঘটে গেছে। আমি বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম ভাঙার পর দেখি রক্ত আর লাশ! হাতে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে ঘুম ভাঙে আমার। বাসের মধ্যে থেকে কে বের করে এনেছে জানি না। ’ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি এলাকার যুবক উজ্জ্বল এভাবেই দুর্ঘটনার বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই বাস দ্রুত গতিতে চলছিল। এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রীদের অনেকেই নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিলেন তখন। কেউ চোখ বন্ধ করে ঝিমুচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় কিছুই টের পাইনি। যখন জ্ঞান ফেরে দেখি চারপাশে রক্ত আর লাশ। উঠে বসতে গেলে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। পরে কিছুটা সুস্থবোধ করলে চারপাশে বোঝার চেষ্টা করি। তখন টের পাই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেছে! সড়ক থেকে গাড়ি উল্টে নিচে পরে দুমড়েমুচড়ে গেছে। ’
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানান, হঠাৎ করেই বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। তারা দৌড়ে এসে দেখতে পান একটি বাস মহাসড়ক থেকে নিচে পরে উল্টে যাচ্ছে বার বার। এরপরই গগন বিদারী চিৎকার আর আহাজারি ভেসে আসে। কালক্ষেপন না করে স্থানীয়রা দ্রুত ছুটে যায় সেদিকে। বাসের মধ্যে থেকে গোঙানির শব্দ বের হচ্ছিল তখন। চারপাশ রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। স্থানীয়রা আহতদের বের করার কাজে নেমে পড়ে। ততক্ষণে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ আসে।
মো. আল আমিন নামের এক স্থানীয় যুবক বলেন, ‘এতো বড় দুর্ঘটনা আমরা আগে দেখিনি। আমার কাছে মনে হচ্ছিল সময় থেমে গেছে। কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না! পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝে উঠতে কিছু সময় পার হয়ে যায়। ’
খুলনার রুপসা এলাকার যাত্রী আহত মহারাজ খাঁ বলেন, বাসটি শূন্যে উঠে লাফিয়ে নিচে পড়ে গেলে। অনেকবার উল্টে নিচে পড়ে বাসটি। আরিফ শেখ নামের খুলনার আহত আরেক যাত্রী বলেন, দ্রুতগতিতে চলছিল বাসটি। মুহূর্তেই রাস্তার রেলিং ভেঙে উল্টেপাল্টে নিচে পড়ে। চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে মনে হয়েছিল।
রোববার সকাল ৮ টার দিকে শিবচরের এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকার ঢাকাগামী লেনে ইমাদ পরিবহনের বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিং ভেঙে উল্টে নিচে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। হাসপাতালে মারা যান আরও ২ জন। এরপর আরও একজনের মৃত্যুর খবর আসে। হতাহতের সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে। দুর্ঘটনার পর হাইওয়ে পুলিশ, শিবচর থানা পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের টিম উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন।