শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

করোনার প্রভাব: বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিশ্ব

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৪ মার্চ, ২০২০
  • ৩৬৬ বার

বিশ্বায়নের এই যুগে পৃথিবী পরিচিতি পেয়েছিল ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ বা বিশ্বপল্লী হিসেবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রাণঘাতী একটি ভাইরাসের বিস্তার সেই পরিচিতি যেন মুছে দিয়েছে। অথচ সমকালীন বিশ্বব্যবস্থায় এক দেশ আরেক দেশের ওপর নিবিড়ভাবে নির্ভরশীল। বিশ্বায়নের এই যুগে এক দেশের নাগরিকদের আরেক দেশে যাতায়াত করা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু তিন মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে প্রতিটি দেশ একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯-এর বিস্তার ঠেকাতে সংক্রমিত দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে, বাতিল করা হচ্ছে যাত্রীদের দেয়া ভিসা ও বিমানের ফ্লাইট। প্রতিটি দেশের সরকার নিজস্ব সীমানা সুরক্ষায় জোর দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিচ্ছিন্নতা আগামী জুন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরু। চলতি বছরের জানুয়ারির শেষদিকে তা ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করে। চীনে এর প্রকোপ কমে এলেও এখন ছড়িয়ে পড়েছে অনেক দেশে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১২০টির বেশি দেশে কোভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ছয় শ’র বেশি মানুষের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এটিকে বৈশ্বিক মহামারী বলে ঘোষণা করেছে। সংস্থার প্রধান ড. টেডরস এ সম্পর্কিত ঘোষণায় বলেন, গত দুই সপ্তাহে চীনের বাইরে করোনা সংক্রমণের ঘটনা বেড়েছে ১৩ গুণেরও বেশি। এ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন। সংস্থার হিসাবে, যে রোগ একই সাথে একাধিক দেশে সংক্রমিত হতে শুরু করে তাকে বিশ্ব মহামারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত দুই সপ্তাহে এন্টার্কটিকা বাদে পৃথিবীর সব মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। এ শতাব্দীর সব থেকে বড় অবরোধ চলছে ইউরোপে।
বিশ্বের দেশগুলো করোনার বিস্তার ঠেকাতে উঠেপড়ে লেগেছে। করোনা সংক্রমিত দেশগুলোর ওপর আরোপ করা হচ্ছে বিধিনিষেধ। নাগরিকদের বিদেশ সফরে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। থেমে গেছে পর্যটন। করোনা আতঙ্কে বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে কয়েকটি জাতি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। ব্যাহত হচ্ছে সাংস্কৃতিক আয়োজন এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসর ও ব্যবসাবাণিজ্য। ইউরোপের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, করোনার বিস্তার রোধে যুক্তরাষ্ট্র যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে ইউরোপ তেমন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত চীন। সেখানে আক্রান্ত হয়েছে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছে তিন হাজার ১৬৯ জন। তবে চীন সরকারের প্রচেষ্টায় এখন দেশটিতে করোনাভাইরাস প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছে ৭০ হাজার নাগরিক। চীনের পাশের দেশ দক্ষিণ কোরিয়াও সাম্প্রতিক সময়ে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে এর বিস্তার। ইরানের অবস্থাও গুরুতর। সেখানে আক্রান্ত ১০ হাজারের বেশি। একই সাথে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশই এখন করোনা আক্রান্ত। দেশগুলো করোনা নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নিজেদের নাগরিকদের বিদেশে যাতায়াতে নিষেধ আরোপ করছে। ইতোমধ্যে ইউরোপের দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে সৌদি আরব। পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সুদান, কেনিয়া, জিবুতি ও সোমালিয়াসহ আরো বেশ কিছু দেশ থেকেও সৌদি আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাময়িক বাতিল করা হয়েছে বেশ কিছু দেশের ফ্লাইট। তবে করোনার বিস্তার রোধে বড় পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে ভারত। ১৩ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব পর্যটন ভিসা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত থাকলেও দেশটিতে করোনার বিস্তার হচ্ছে ইতালি, ইরান ও স্পেন থেকে। তাই বলা যায়, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থাপনায় করোনাভাইরাস যেভাবে আঘাত হেনেছে; তাতে সাময়িকভাবে হলেও বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com