শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩ অপরাহ্ন

সিরিয়া অভিযানে তুরস্কের সাফল্য

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৯
  • ৩২০ বার

সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তুরস্ক প্রস্তাবিত ‘সেফ জোন’ তৈরির জন্য পরিচালিত সামরিক অভিযান, ‘অপারেশন পিস স্প্রিং’ এ কিছু শর্তে সাময়িক বিরতি দিতে সম্মত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো হলো, এক- ১২০ ঘণ্টার মধ্যে সিরীয় কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠী ওয়াইপিজি সেফ জোন থেকে সরে যাবে; দুই- আমেরিকা তাদেরকে আর সামরিক সহায়তা দেবে না; তিন- তুরস্ক প্রস্তাবিত সেফ জোন মেনে নেয়া; চার- সেফ জোন তুর্কি সামরিক বাহিনীর অধীনে থাকবে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ও আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের মধ্যে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত দীর্ঘ বৈঠকের পর উভয় দেশ শর্তগুলোতে সম্মত হয়। এর মাধ্যমে অপারেশন পিস স্প্রিংয়ের একটি সমাপ্তি হলো বলে ধরে নেয়া যায়। যদিও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ‘পুরোপুরি সমাপ্তি তখনই হবে যখন শর্তগুলো কার্যকর করা হবে। আপাতত ১২০ ঘণ্টার বিরতি থাকবে। তুরস্কের সামরিক বাহিনীকে আমরা ওখান থেকে প্রত্যাহার করছি না কিংবা সরিয়েও আনছি না, এটা আপাতত একটা বিরতি।’

সিরিয়ার ওই এলাকায় একটি সেফ জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত ৯ অক্টোবর থেকে এ অভিযান শুরু করে তুরস্ক। এ সেফ জোনে তুরস্কে থাকা প্রায় ৩৫ লাখ সিরিয়ান উদ্বাস্তুর বড় একটি অংশকে পুনর্বাসন করা হবে। অভিযান শুরুর আগে এলাকাটি সশস্ত্র কুর্দি গোষ্ঠী ওয়াইপিজির অধীনে ছিল যাদেরকে তুরস্ক সন্ত্রাসী গ্রুপ পিকেকের সহযোগী মনে করে। সিরিয়ার সরকারপন্থী বাহিনীর পর সবচেয়ে বড় এলাকা ওয়াইপিজির দখলে রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে তুরস্ক এ সেফ জোনের কথা বলে আসছিল কিন্তু বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর কেউই এ বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। বরং আমেরিকা ও তার মিত্ররা কুর্দি এ সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছিল। তুরস্ক ওয়াইপিজির এই উত্থানকে সার্বভৌমত্বের জন্যও হুমকি মনে করে। উল্লেখ্য, ওই অঞ্চলে তুরস্কের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কুর্দি জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য বেশি। এলাকাগুলোতে প্রায়শই সন্ত্রাসী হামলা হয়ে থাকে।

তুরস্ক সরকার কয়েক মাস পূর্বে সিরিয়া সীমান্তজুড়ে ৪৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৩২ কিলোমিটার প্রস্থ এ সেফ জোনের মানচিত্র এবং সেখানে কিভাবে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন করবে তার একটি খসড়া প্রকাশ করে। মানচিত্রটি প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবারের জাতিসঙ্ঘ অধিবেশনে দেয়া তার বক্তব্যেও তুলে ধরেছিলেন। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে কয়েক বছর ধরেই তুরস্কের কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে।

এই এলাকায় তুরস্ক সামরিক অভিযান শুরুর পর আমেরিকা, ব্রিটেন ও জার্মানিসহ কয়েকটি দেশ তুরস্কের বিরুদ্ধে অবরোধের ঘোষণা দেয়। রাশিয়া এবং ইরানও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। ইসরাইল ও ফ্রান্স কঠোর হুমকিও দিচ্ছিল। সৌদি আরব ও আরব আমিরাতও নেতিবাচক মন্তব্য করেছিল। সব মিলে উল্লেখযোগ্য কোনো দেশকেই পাশে পায়নি তুরস্ক। কিন্তু তুরস্ক থেমে থাকেনি। প্রেসিডেন্ট এরদোগান টার্গেট পূরণ হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। এ দিকে তুর্কি সামরিক বাহিনীর সর্বাত্মক অভিযানে পিছু হটতে বাধ্য হয় কুর্দিরা। একপর্যায়ে ওই এলাকা থেকে আমেরিকার সৈন্য সরানোরও ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

এ বিষয়গুলো নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই আমেরিকা ও তুরস্কের মাঝে কূটনৈতিক নানা টানাপড়েন চলছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযান বন্ধে কখনো তুরস্ককে হুমকি প্রদান আবার কখনো নরম সুরে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে রাজি করানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট এরদোগান অনড় থাকায় অবশেষে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তুরস্কে পাঠিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেন। যার ফলশ্রুতিতে দুই দেশ এই ঐকমত্যে পৌঁছে।

তুরস্কের দেয়া শর্তগুলো পূরণ হলে গত আট বছর ধরে চলা সিরিয়া যুদ্ধ নাটকীয় মোড় নেবে। তুরস্কের জন্য সবচেয়ে বড় সফলতা হলো, তাদের এই সামরিক অভিযান এবং সেফ জোনের বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেল। বিশ্বরাজনীতিকে এককভাবে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই ঐতিহাসিক অর্জনটি একদিন আগেও তুরস্কের জন্য অনেকটা কঠিন ছিল যা এখন বাস্তবে রূপ নিলো। বিশ্ব মোড়লদের কাউকে পাশে না পাওয়ার পরও এত তাড়াতাড়ি বিষয়টি একটা সমাধানের দিকে যাবে এটা তুরস্কও হয়তো চিন্তা করেনি।

সব মিলে, এ অভিযানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে তুরস্কের নতুন অভিষেক হলো। বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান জটিল সময়ে কূটনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতায় তুরস্ক কতটুকু এগিয়েছে এটা তার প্রমাণ বহন করে। এর পেছনে রয়েছে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং দেশের স্বার্থে জনগণের ঐক্য ও দেশপ্রেম। গত কয়েক দিন ধরে তুরস্কে যে ঐক্য এবং বলিষ্ঠ দেশপ্রেম দেখা গেছে তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী প্রায় সব দল এ অভিযানকে সমর্থন করেছে। সব মতের লোকজন সামরিক বাহিনীকে মানসিকভাবে সমর্থন দিয়েছে। পুরো দেশ এই অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com