রমজান মাস মুসলমানদের জন্য বিশেষ একটি মাস। মুসলমানদের ওপর এই মাসে রোজা রাখা ফরজ। গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি না—এ নিয়ে অনেক হবু মা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে থাকেন।
গর্ভস্থ শিশুর মেধা বিকাশ ও বেড়ে ওঠা অনেকাংশে নির্ভর করে গর্ভবতীর সঠিক পুষ্টিপ্রাপ্তির ওপর। এ সময় রোজা রাখা যাবে কি না, তা নির্ভর করে হবু মা ও তাঁর গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতার ওপর। এছাড়া ইসলাম ধর্মে গর্ভবতীর রোজা রাখার ওপর শিথিলতা রয়েছে।
গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠিত হয়। তাই এ সময় মায়ের শরীরে সঠিক মাত্রার পুষ্টি সরবরাহ জরুরি। তাই পুষ্টিবিদের মতে, গর্ভের প্রথম তিন মাস রোজা না রাখাই ভালো। তবে রাখতে চাইলেও ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত প্রচুর পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।
মধ্যবর্তী ৩ মাস বা সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার এ মা ও গর্ভস্থ শিশুর কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকলে এ সময় মায়ের রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। তবে তার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তবে প্রথম তিন মাসের মতো শেষ তিন মাসও বেশ স্পর্শকাতর সময়। এ সময় শিশুর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে, তাই সঠিক নিয়মে খাওয়াদাওয়া ও পুষ্টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোজা না রাখাই ভালো।
সাহরি ও ইফতারে পুষ্টিকর খাবার: গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখলে অবশ্যই ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে ফলমূল, শাকসবজি, ফলের রস দিয়ে তৈরি শরবত বেশি করে খেতে হবে। যাতে করে মা ও শিশু দুইজনের পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত হয়।
প্রচুর পানি পান: গর্ভবতী মায়েদের ইফতার ও সাহ্রিতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। গর্ভাবস্থায় যাতে কোনভাবেই পানিশূন্যতা তৈরি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
চাকরিজীবী গর্ভবতী: গর্ভাবস্থায় রোজা রেখে বাসার বাইরে দীর্ঘসময় যাদের ডিউটি করতে হয়, তারা ইফতারের সময় ওরস্যালাইন বা ডাবের পানি খেতে পারেন। এতে পানিশূন্যতা ও দুর্বলতা কমবে। বাসার তৈরি খাবার যতটা খাওয়া যায় ততটাই ভালো।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম: গর্ভাবস্থায় রোজা রাখলে দুশ্চিন্তামুক্ত ও প্রশান্ত থাকতে হবে, বিশ্রামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে এবং পরিশ্রম কমিয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে সম্ভব হলে দিনে দুই ঘণ্টা বিশ্রাম ও রাতে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
যা খাবেন: গর্ভবতী মায়েরা সাহরিতে খাদ্যতালিকায় খেজুর, বাদাম, দুধ, ডিম, ওটমিল, ফলমূল, ভাত, সবজি খাবেন। আর ইফতারে খেজুর, শরবত, ফল, স্যুপ, ভাত, মাছ, মাংস, ডাল ইত্যাদি খেতে পারেন। কোনভাবেই ভাজাপোড়া খাওয়া উচিত হবে না।
চিকিৎসকের পরামর্শ: যেকোনো গর্ভবতীই রোজা রাখার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া উচিত। এছাড়া রোজা রাখার সময় কোন সমস্যা হলে বা কোন ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত।