শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ্য দেলোয়ার হোসেনকে দেখতে গিয়ে সিংড়ার সংসদ সদস্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এসব কথা বলেন।
এর আগে প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক লুৎফুল হাবীবের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী দোলোয়ার হোসেন সোমবার বিকেলে অনলাইনে দাখিল করা মনোনয়নপত্রের অনুলিপি নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে জমা দিতে যান। সেখান থেকে প্রতিমন্ত্রী ও তার শ্যালক লুৎফুল হাবীবের ঘনিষ্টরা দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ করে শারীরিক নির্যাতন করে অচেতন অবস্থায় নিজ বাড়ির সামনে ফেলে যায়। সেখানকে দেলোয়ারকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। এখনো তিনি সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীব ও তার সহযোগীরা অপহরণ ও মাধরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। লুৎফুল হাবীব সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার পর নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক লুৎফুল হাবীবের সাথে নির্বাচনি মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ৫ প্রার্থী মাঠে নামেন। কিন্তু প্রতিমন্ত্রীর ঢাকার বাসায় বৈঠকে লুৎফুল হাবীবকে একক প্রার্থী করার ঘোষণা দেওয়ার পর তিন প্রার্থী নির্বাচন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন। প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন দেলোয়ার হোসেন। এ কারণে সোমবার দুপুরে দেলোয়ারের দুই ভাইকে অপহরণের পর বিকালে তাকে অপহরণ করে মারধর করা হয়।
অপহরণের ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের ভাই অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে একজন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন। ওই জবানন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও নির্বাচনের প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের পক্ষ হয়ে তারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
জুনাইদ আহমেদ শুক্রবার সকালে উড়োজাহাজে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে দেখতে। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা ছিলেন। তিনি প্রায় আধঘণ্টা দেলোয়ারের কাছে অবস্থান দায়িত্বরত চিকিৎসকের কাছে শরীরের খোঁজখবর নেন এবং সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার আহ্বান জানান। পরে হাসপাতালের নিচতলার করিডরে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি বিদেশে ছিলাম। গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত একটায় দেশে ফিরেছি। বিদেশে থাকলেও সব সময় ঘটনার খোঁজখবর নিয়েছি। আমি ভাবতেও পারিনি নাটোরের মাটিতে এই ধরণের ঘটনা ঘটবে। এ ঘটনায় আমি লজ্জিত, দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনার খোঁজ খবর রাখছেন। এ ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের সুষ্ঠু বিচার হবে। কেউ ছাড়া পাবে না।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জুনাইদ আহমেদ বলেন, ‘লুৎফুল হাবীব আমার আত্মীয় তা অস্বীকার করব না। তবে আত্মীয়তার সুবাদে বা রাজনৈতিক কারণে সে বা অন্য কেউ বাড়তি সুবিধা পাবেন না। বরং এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যা এমপি মন্ত্রীর স্বজনদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে আমরা দলের পক্ষ থেকেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’
গত সোমবার বিকেলে নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে থেকে দেলোয়ার হোসেনকে কালো রঙের মাইক্রোবাসে অপহরণ করে নিয়ে যায় প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক লুৎফুল হাবীবের ঘনিষ্টরা। গাড়ির ভেতর তাকে মারধর করা হয়। ঘণ্টাখানেক পর সিংড়ার সাঐল গ্রামে নিজের বাড়ির সামনে তাকে অচেতন অবস্থায় ফেলা যায় তারা। ওই দিন রাতেই মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবীড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রার্থীর ভাই মুজাহিদ হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ দুই অভিযুক্তকে সেই রাতেই গ্রেপ্তার করে।