দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ নগরবাসী। একে তাপমাত্রা সহন ক্ষমতার বাইরে, তার সঙ্গে রয়েছে বাতাসের অত্যধিক আর্দ্রতা। এ দুইয়ের আক্রমণে সাধারণ মানুষের অবস্থা খুবই নাজেহাল। এমন তীব্র তাপদাহে একটু প্রশান্তির খোঁজে সকলেই ঠাণ্ডা পানি পান করে তৃষ্ণা মিটাচ্ছেন। আবার অনেকে গরম থেকে ঘরে ফিরেই হুটহাট করে একেবারে ফ্রিজ থেকে বের করেই বরফজমা ঠাণ্ডা পানি পান করছেন। তবে ঠাণ্ডা পানি পান করা নিয়েও নানা সময়ে বারণ শুনতে হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে হুটহাট করে একেবারে ফ্রিজ থেকে বের করেই বরফজমা ঠাণ্ডা পানি পান করা ঠিক নয়। শুধু গরম বলে নয়, যেকোনো সময় ঠাণ্ডা পানি পানের বিষয়ে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা।
ঠাণ্ডা পানি পান কী স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর-
গরমে ঠাণ্ডা পানি পান করা যেতেই পারে। তবে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি পান করা শরীরের জন্য খারাপ হতে পারে। ঠাণ্ডা পানি হজমে ব্যাঘাত ঘটায়। গ্রীষ্মের গরমের কথা মাথায় রেখে যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা পানি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ঠাণ্ডা পানি খেলে কি কি হতে পারে তা নিচে দেওয়া হলো-
শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্যহীনতা: শরীরের তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি পান করার কারণে দেহের তাপমাত্রা তখন আর ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটে থাকে না। তখন শরীরে টনসিলের সমস্যা, মাইগ্রেনের সমস্যা, দাতে ব্যথা, খাদ্যনালির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া সর্দি, কাশি বা জ্বরের ঝুঁকি বেড়ে যায় অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি পান করলে।
গলাব্যথা: গরমে ঠাণ্ডা পানি পানে গলাব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া সর্দি-কাশির অন্যতম কারণ হতে পারে ঠাণ্ডা পানি। খাবারের পরপর ঠাণ্ডা পানি পানে অতিরিক্ত মিউকাস (শ্লেষ্মা) তৈরি হয়। এটি শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা তৈরি করে। যখন শ্বাসনালিতে বাধা তৈরি হয়, তখন নানা প্রদাহযুক্ত সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠাণ্ডা পানি পান হৃদস্পন্দন কমিয়ে দিতে পারে। তাইওয়ানের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঠাণ্ডা পানি পান করা হার্টের জন্য ক্ষতিকর। তাই বিপদ থেকে বাঁচতে ঠাণ্ডা পানি পানের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। যাদের আগে থেকেই হার্টের সমস্যা রয়েছে, তারা ঠাণ্ডা পানি পুরোপুরি এড়িয়ে চলবেন।
হজমে বাধা: বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠাণ্ডা পানি বা ঠাণ্ডা কোমল পানীয় রক্তনালির সংস্পর্শে আসে এবং হজমপ্রক্রিয়ায় বাধা দেয়। হজমের সময় যে পুষ্টি শোষিত হয়, সে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়। শরীর তখন হজমপ্রক্রিয়ার চেয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শরীরে বেশি পানিশূন্যতা দেখা যায়।
ঈষদুষ্ণ পানি পান করুন: অসহনীয় গরম পড়েছে বলে অনেকেই কুসুম গরম পানি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। বরং ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি খাচ্ছেন। কিন্তু এ ভুল করতে যাবেন না। সকালে ঈষদুষ্ণ পানি পান করলে শরীরের ফ্যাট কমে, হজম প্রক্রিয়া ঠিকমতো কাজ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তাও ভালো হয়ে যায়। তাই রোজ সকালে হালকা গরম পানি পান করতে মোটেও ভুল করবেন না।
পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের মতে, তীব্র এ গরমে দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি অবশ্যই পান করতে হবে। পাশাপাশি ডাবের পানি, ফলের জুস, ঘোল, লেবুর শরবত খেতে পারেন।