শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১২ অপরাহ্ন

শিরকের শাস্তি থেকে বাঁচার উপায়

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৫ মে, ২০২৪
  • ৬৬ বার

আমরা যারা নিজেদের ঈমানদার বলে মনে করি তারা সালাত-সিয়াম এবং অন্যান্য এবাদত করে থাকি। কিন্তু যার জন্য আমাদের এই কর্মকাণ্ড সেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশিত পথে চলার জন্য আমাদের অকৃত্রিম চেষ্টা কতটুকু? এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কী বলেন? আমরা অনেকেই জানি যে, আল্লাহ তায়ালার প্রতি সবচেয়ে বড় জুলুম হচ্ছে শিরক করা; কিন্তু আমরা কি সেই শিরক থেকে বেঁচে থাকতে পারছি?

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, এ (কুরআন) হচ্ছে মানুষের জন্য এক (মহা) পয়গাম, যাতে করে এ (গ্রন্থ) দিয়ে (পরকালীন আজাবের ব্যাপারে) তাদের সতর্ক করে দেয়া যায়, তারা যেন (এর মাধ্যমে) এও জানতে পারে, তিনিই একমাত্র মাবুদ, (সর্বোপরি) বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা যাতে করে (এর দ্বারা) উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। (ইবরাহিম-৫২)

উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তিনিই একমাত্র মাবুদ’। অর্থাৎ ‘আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো মাবুদ নেই।’
উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, তিনি একক ও অভিন্ন সত্তার অধিকারী। আর এটাই হচ্ছে ইসলামের বুনিয়াদ, যার ওপর ইসলামী জীবনবিধানের গোটা ইমারত দাঁড়িয়ে আছে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো মাবুদ নেই- কেবল এ সত্যটুকু জানিয়ে দেয়াই এই ঘোষণার উদ্দেশ্য নয়; বরং এই ঘোষণার উদ্দেশ্য হলো, মানুষ এই সত্যটুকু জানার সাথে সাথে তার গোটা জীবন সেই মোতাবেক পরিচালনা করবে। তার গোটা আনুগত্য ও দাসত্ব একমাত্র আল্লাহর জন্যই নিবেদিত থাকবে। কারণ যিনি মাবুদ বা উপাস্য, তিনিই রব বা প্রতিপালক হওয়ার যোগ্য। আর যিনি ‘রব’ হওয়ার উপযুক্ত, একমাত্র তিনিই হবেন সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, মনিব, সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী, আইনদাতা ও বিধানদাতা। যাদের গোটা জীবন এই ভিত্তির ওপর, এই আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত, তাদের জীবন সেসব লোকের জীবন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, স্বতন্ত্র, যারা মানুষের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ, যারা মাখলুকের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী, এই উভয় শ্রেণীর লোকের চিন্তাচেতনা, আকিদা-বিশ্বাস, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও স্বভাব চরিত্রের মাঝেও ওই পার্থক্য পরিলক্ষিত হবে। এই পার্থক্য উভয় শ্রেণীর আদর্শ ও মূল্যবোধ, তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যাবে। একক ও অভিন্ন সত্তার প্রভুত্বে বিশ্বাস হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধানের ভিত্তিস্বরূপ। এটা কেবল মানুষের বিবেকে লুকায়িত একটা বিশ্বাসই নয়; বরং এই বিশ্বাসের সীমারেখা আরো সুবিস্তৃত। এর পরিধি নিছক বিবেকনির্ভর বিশ্বাসের তুলনায় আরো ব্যাপক। কারণ এর আওতার মধ্যে পড়ে মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র।

ইসলামের দৃষ্টিতে সার্বভৌমত্বের প্রতিটি শাখা-প্রশাখা এই আকিদা-বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত। এমনিভাবে গোটা নৈতিকতার বিষয়টিও এই আকিদা-বিশ্বাসেরই একটি অঙ্গ। কাজেই আকিদা-বিশ্বাস থেকেই উদ্ভূত হয় জীবনবিধান, যার আওতায় পড়ে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ। তেমনিভাবে এর আওতায় পড়ে আইন ও বিধানসহ জীবনের অন্যসব দিক। ইসলাম এই আকিদা-বিশ্বাসের সীমারেখা কী? কালেমা শাহাদাতে এর মর্মবাণী কী?

এবাদাত বন্দেগি কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যেই হতে হবে- এর অর্থ কী? এসব বিষয় যদি আমরা সঠিক ও যথার্থভাবে জানতে বুঝতে না পারি, তাহলে এই পবিত্র কুরআনের মর্মবাণী ও উদ্দেশ্য লক্ষ্য অনুধাবন করা আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে না এবং এই সত্যটুকুও উপলব্ধি করা সম্ভব হবে না যে, আল্লাহর দাসত্ব আনুগত্য কেবল সালাত-সিয়াম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা জীবনের প্রতিটি দিক ও বিষয় পর্যন্ত বিস্তৃত। দেব-দেবীর পূজা থেকে নিজের সন্তানদের মুক্ত রাখার জন্য হজরত ইবরাহিম (আ:) আল্লাহর কাছে যে আরজি পেশ করেছিলেন, সেখানে দেব-দেবী বলতে কেবল সেই জাহেলি যুগের আরবদের মাঝে প্রচলিত বিভিন্ন আকৃতি-প্রকৃতির দেব-দেবীকেই বুঝানো হয়নি। এই দোয়ায় শুধু তৎকালীন যুগের প্রচলিত প্রস্তরমূর্তি, গাছরূপী মূর্তি, জীবজন্তু বা পশুপাখিরূপী মূর্তি, গ্রহ-নক্ষত্র বা অগ্নিরূপী মূর্তি অথবা ভূতপ্রেত জাতীয় ইত্যাদি নানা প্রকারের দেব-দেবীর কথাই বলা হয়নি। কারণ আল্লাহর সাথে শিরক করা বলতে কেবল এই পূজা অর্চনাকেই বুঝায় না। শিরক বলতে কেবল এই কাজগুলোই যখন আমরা বুঝতে থাকি, তখন অন্য আরো অসংখ্য শিরকের প্রকার ও রূপ আমাদের দৃষ্টির আড়ালে পড়ে থাকে। ফলে নব্য জাহেলিয়াতের যুগে গোটা মানবজীবনকে যে অসংখ্য শিরক গ্রাস করে ফেলছে সেই বাস্তবতাটুকু উপলব্ধি করার মতো ক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলছি। (তাফসির ফি জিলালিল কুরআন)

কুরআন-হাদিসের আলোকে জানা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা সব গুনাহ ক্ষমা করেন শিরক ব্যতীত। তবে শিরকের শাস্তি থেকে বাঁচার উপায় কী? এ থেকে বাঁচার উপায় হলো বিশুদ্ধ তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা।

রাহমানুর রাহিম আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে বলেছেন, হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা (নিজেদের গুনাহখাতার জন্য) আল্লাহর দরবারে তাওবাহ করো একান্ত খাঁটি তাওবাহ; আশা করা যায়, (এর ফলে) তোমাদের মালিক (আল্লাহ তায়ালা) তোমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন এবং এর বিনিময়ে (পরকালে) তিনি তোমাদের প্রবেশ করাবেন এমন (সুরম্য) জান্নাতে, যার পাদদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে (সুপেয়) ঝরনাধারা, সেদিন আল্লাহ তায়ালা (তাঁর) নবী এবং তাঁর সাথী ঈমানদারদের অপমানিত করবেন না, (সেদিন) তাদের (ঈমানের) জ্যোতি তাদের সামনে ও তাদের ডান পাশ দিয়ে (বিচ্ছুরিত হয়ে এমনভাবে) ধাবমান হবে যে, সর্বদিক থেকেই তাদের এ আলো পর্যবেক্ষণ করা যাবে, তারা বলবে, হে আমাদের মালিক, আমাদের জন্য আমাদের (ঈমানের) জ্যোতিকে (জান্নাতের জ্যোতি দিয়ে আজ তুমি) পূর্ণ করে দাও, তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও, অবশ্যই তুমি সবকিছুর ওপর একক ক্ষমতাবান। (আত-তাহরিম-৮)

লেখক :

  • নাজমুল হুদা মজনু

সাংবাদিক

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com