সবাই বদলি হতে চান শহরের স্কুলে। গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতায় বেশির ভাগ শিক্ষকেরই অনাগ্রহ বেশি। শুধু সরকারি স্কুলের শিক্ষকই নন, গ্রামের তুলনায় শহরের স্কুলে বদলি নিয়ে আসতে বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের আগ্রহেরও কোনো কমতি নেই। সম্প্রতি সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের মতো বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদেরও বদলির সুযোগ দেয়ার উদ্যোগ নেয়ার পর শহরপ্রীতির এমন আভাসই মিলেছে। ফলে সবকিছু চূড়ান্ত হলেও একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে শিক্ষকদের বদলির সেই সুযোগ আপাতত বন্ধ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে প্রথমবারের মতো সরকারি শিক্ষকদের মতো বেসরকারি শিক্ষকরাও বদলি হতে পারবেন এমন উদ্যোগ নিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করে প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে গত রোববার বৈঠকে বসেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে শেষ মুহূর্তে এসে সেই প্রক্রিয়া আটকে গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা চূড়ান্ত করতে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গত ৫ মে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। এর আগে গত ২০ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক-১) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ৫ মের বৈঠকের বিষয়টি জানানো হয়।
এদিকে বৈঠকে অংশ নিয়ে মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান, সাম্প্রতিককালে গ্রামের স্কুলের শিক্ষকরা এখন সবাই চান শহরের স্কুলে বদলি হতে। ফলে গ্রামের স্কুলগুলোর শিক্ষাকার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কাও করেন তারা। এসব বিষয় বিবেচনায় বৈঠকে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বদলির প্রক্রিয়া চালু না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সূত্র জানায়, বদলি প্রক্রিয়া চালুর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার আপত্তি থাকায় আপাতত বদলির সুযোগ পাচ্ছেন না দীর্ঘদিন ধরে বদলি ব্যবস্থা চালুর দাবি করে আসা এসব শিক্ষকরা।
গত ৫ মের সভায় উপস্থিত দুইজন কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে ৯৬ হাজারের বেশি শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম চলছে। ৯৬ হাজারের বেশি শূন্য পদের গণবিজ্ঞপ্তি থাকলেও অর্ধেক পদও পূরণ হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এই অবস্থায় বদলি চালু করা হলে গ্রামের সব শিক্ষক শহরে চলে আসবেন। গ্রামের স্কুলগুলোতে খালি হওয়া ওই পদগুলো আর পূরণ করা সম্ভব হবে না। এজন্য আপাতত বদলি চালু না করতে শিক্ষামন্ত্রীকে মত দেন ওই কর্মকর্তারা।
সভা সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির বিরোধিতা করে যুক্ত উপস্থাপন করেন। তার উত্থাপিত যুক্তির ওপর ভিত্তি করেই বদলি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া এই বৈঠকে সমপদে এবং সমস্কেলে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব আসলেও মামলা জটিলতা থাকায় এই প্রস্তাবও আপাতত ভেস্তে গেছে।