দুজনের মিলের জায়গা অনেক। শেখ কামাল ক্লাব কাপে দুই স্থানীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করছেন দুজন। দুজনের নামেই রয়েছে ইয়াসিন শব্দটি। একজন ইয়াসিন খান, আরেকজন ইয়াসিন আরাফাত। প্রথমজন জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠিত। অন্যজন জাতীয় দলের আঙিনায় ঠাঁই পেলেও সেরা একাদশে সুযোগ পাননি। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিচারেই দুজনের নাম উঠে আসছে ঘুরেফিরে। তাদের সামনে এখন দু’রকম চ্যালেঞ্জ। বড় ইয়াসিনের জাতীয় দলে ফিরে পাওয়া জায়গাটা ধরে রাখার। ছোট ইয়াসিনের চ্যালেঞ্জ সিনিয়রদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লেফটব্যাক পজিশনে প্রতিষ্ঠা পাওয়া।
বড় ইয়াসিনের ৯ বছরের ক্যারিয়ারে চড়াই-উতরাই কম ছিল না। ২০১০ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ক্যারিয়ার শুরু মোহামেডান দিয়ে। ক্লাব পর্যায়ে সেন্টারব্যাক পজিশনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেও ২০১৪ সালে প্রথম সুযোগ আসে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার। ভারতের বিপক্ষে গোয়ায় প্রীতি ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় তার আন্তর্জাতিক পথে যাত্রা। দু’বছর নিয়মিত খেলার পর হঠাৎ ইয়াসিন খানের জীবনে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার। ২০১৬ সালের শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ক্যাম্পে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ছ’মাসের জন্য নিষিদ্ধ হতে হয় তাকে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে শেখ জামালের হয়ে গত মৌসুমের আগে ভালোই খেলছিলেন। কিন্তু মিনিসকাস ইনজুরি দীর্ঘ সময়ের জন্য ছিটকে দেয় তাকে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। তবে হাল ছাড়েননি। কঠোর পরিশ্রম দিয়ে গত মৌসুমে শেখ রাসেলের হয়ে মাঠে ফেরেন। সঙ্গে গত বছর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ফের জাতীয় দলে ডাক পান। ফিরেই আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন কোচ জেমি ডে’র। চলতি বিশ^কাপ বাছাইপর্বে দলের রক্ষণভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দারুণ দক্ষতায়। ভুটানের বিপক্ষে সম্প্রতি গোল করার পর কাতার ও ভারতের বিপক্ষে দলের রক্ষণ আগলে রাখতে বড় ভূমিকা ছিল তার। ভারতের বিপক্ষে কপালে ব্যান্ডেজ বেঁধে যেভাবে খেলে গেছেন, তা দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সতীর্থদের সাহস জোগাতেই নিজের চোটকে পাত্তা দেননি।
জাতীয় দলে নিজের ভূমিকা নিয়ে বললেন, ‘ভারত ম্যাচে ব্যথা পাওয়ার পরও খেলা চালিয়েছি কারণ মনে হয়েছে এখানে আমার অনেক দায়িত্ব। জুনিয়রদের খেলানোর একটা দায়িত্ব ছিল, তাছাড়া ভারতের বিপক্ষে তাদের মাঠে তাদের হারানোর একটা জেদও কাজ করছিল। জিততে পারিনি। তবে আমরা যেভাবে খেলেছি, তা নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই।’ চোটের কারণে জাতীয় দল থেকে বাইরে রয়েছেন তপু বর্মন। তবে দীর্ঘদিনের সতীর্থর সঙ্গে নতুন করে জুটি গড়ার সুযোগ তিনি পেয়ে যাচ্ছেন তার নতুন ক্লাব বসুন্ধরা কিংসে, ‘তপুর সঙ্গে আমার বোঝাপড়াটা সবসময়ই ভালো হয়। দুজনই লড়িয়ে মানসিকতার। ওর সঙ্গে আবার বসুন্ধরায় ও জাতীয় দলে খেলার জন্য মুখিয়ে আছি।’ তপু ফিরলে তো জাতীয় দলে জায়গা ধরে রাখার লড়াইটা আরও বাড়বে। সেটা বুঝেই বড় ইয়াসিনের প্রত্যয়, ‘তপু নেই। তারপরও জায়গা ধরে রাখার লড়াইটা ঠিকই আছে। বাদশা বেশ কিছু ম্যাচ খেলে চোটের কারণে একটু অনিয়মিত হয়ে পড়ে। তার জায়গায় রিয়াদ এসেই ভালো খেলছে। ফলে বাদশা এখন একাদশে আসতে পারছে না। নিজের সেরাটা যে দিতে পারবে না, সে ঝড়ে পড়বেই। জুনিয়রদের সঙ্গে এই লড়াইটাই আমাকে ভালো খেলতে স্পৃহা জোগাচ্ছে।’ ছোট ইয়াসিন, অর্থাৎ ইয়াসিন আরাফাতের প্রসঙ্গ তুলতেই প্রশংসা ঝরল বড়’র কণ্ঠেÑ‘ও দারুণ খেলোয়াড়। ওর মধ্যে সব কিছুই আছে। আত্মবিশ^াসটা বাড়াতে হবে। লিখে রাখুন, ও ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সেরা লেফটব্যাক হবে।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে উঠে এসে কদমতলার হয়ে এক মৌসুম তৃতীয় বিভাগে খেলেই প্রিমিয়ারের সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের নজর কাড়েন ইয়াসিন আরাফত। গত মৌসুমে সাইফের মূল দলে নিয়মিত খেলে নজর কাড়েন জেমি ডে’র। ডাক পড়ে বিশ্বকাপ বাছাই দলে। সেই থেকে দলে নিজেকে গড়ে তুলছেন। শনিবার শেখ কামাল টুর্নামেন্টে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে বামপ্রান্ত থেকে দারুণ এক গোল করে আস্থার প্রতিদান দেন তিনি। ইয়াসিন আরাফাত নিজেও বিস্মিত নিজের গোল নিয়ে, ‘আমি আসলে বাম দিক দিয়ে ক্রস ফেলেছিলাম। কিন্তু সেটা যে বাঁক খেয়ে জালে ঢুকে যাবে ভাবিনি। শুরুতে তো বিশ^াসই হচ্ছিল না। পরে খুব ভালো লেগেছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রথম গোল করতে পেরে।’ ব্রাজিল তারকা মার্সেলোর ভক্ত ইয়াসিন আরাফাত নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান জাতীয় দলে, ‘জাতীয় দলের সেরা একাদশে এখনো খেলার সুযোগ পাইনি। ভুটানের বিপক্ষে একটি ম্যাচে অল্প সময়ের জন্য খেলেছি। সুযোগ পেলে নিজেকে প্রমাণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’ বড় ইয়াসিনের কাছ থেকে অনুপ্রেরণার খোঁজার চেষ্টা করছেন ছোট, ‘আসলে ইয়াসিন ভাইদের সঙ্গে একসঙ্গে খেলা, অনুশীলনের সুযোগ পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার। তিনি আমাকে অনেক উজ্জীবিত করেন, সাহস জোগান। তাদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা পেতে যেমন লড়াই করি, তেমনি তাদের কাছে শেখারও আছে অনেক কিছু।’ বদলে যাওয়া বাংলাদেশের রক্ষণের গুরুদায়িত্ব ইয়াসিনদের কাঁধে। বড় ইয়াসিন যেমন আত্মনিবেদনের প্রতীক, তেমনি তারুণ্যের প্রতীক হয়ে উঠে আসছেন ছোট ইয়াসিন।