শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০৫ অপরাহ্ন

গার্মেন্টে শ্রমিক ছাঁটাই হবে: প্রণোদনা নিয়ে এই ঘোষণা লজ্জাকর

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৬ জুন, ২০২০
  • ২৭৫ বার

দেশের অর্থনীতির ওপর চলমান মহামারীর বিরূপ প্রভাব এখন দৃষ্টিগ্রাহ্য হতে শুরু করেছে। লকডাউন শুরুর পর অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত মানুষের সংখ্যা মোট শ্রমিকের ৮৫ শতাংশ। এখন সেই কর্মহীনতার ধাক্কা লাগছে প্রাতিষ্ঠানিক খাতেও। ঈদুল ফিতরের পর থেকে পোশাক শিল্পে শুরু হয়েছে শ্রমিক ছাঁটাই। ঘোষণা দেয়া না হলেও পত্রপত্রিকায় সে খবর আসছে। সর্বশেষ ঘটনা হলো, পোশাক শিল্পে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কাজটি রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করলেন বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক।
নানা পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেছেন, শ্রমিক ছাঁটাই অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতা এবং এই বাস্তবতার কারণেই শ্রমিক ছাঁটাই ছাড়া উপায় থাকবে না। ৫৫ শতাংশ সক্ষমতায় কারখানা চালিয়ে শতভাগ কর্মী রাখা উদ্যোক্তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ এই মহাসঙ্কটকালে শ্রমিকরা যাতে কর্মহীন না হয় সে জন্যই সরকার এই খাতের জন্য সবার আগে বড় ধরনের আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে। সেই প্রণোদনার অর্থ তারা নিয়েছেন। আর এখন বলছেন, সেই টাকা চলতি মাসে শেষ হয়ে যাবে। প্রণোদনার সরকারি টাকা শেষ হয়ে গেলেই তারা শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করবেন এমন ঘোষণা দিয়ে আদতে কী বোঝানো হচ্ছে তা অস্পষ্ট নয়। যেন তারা আশা করছেন, তাদের জনগণের অর্থে অনির্দিষ্টকাল ধরে প্রণোদনা দেয়া হোক। কিন্তু বিজিএমইএ সভাপতি আরও দু’টি তথ্য দিয়েছেন, যা তাদের অক্ষমতার দিকেই ইঙ্গিত করে। করোনা পরিস্থিতিতে চীনের রফতানি আদেশ কমেছে ৫২ শতাংশ। অন্য দিকে বাংলাদেশের কমেছে ২ শতাংশ আর ভিয়েতনামের বেড়েছে ৭ শতাংশ। ভিয়েতনামের মতো দেশের যদি রফতানি আদেশ বেড়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশের কমলো কেন? ভিয়েতনাম কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে যা বাংলাদেশ নিতে পারেনি? কেন পারেনি সেই ব্যাখ্যাও তাদের দিতে হবে। প্রণোদনাও নেবেন, ছাঁটাইও করবেন, এ দুটো একসাথে চলতে পারে কি?
রুবানা বলেছেন, বাংলাদেশের সামনে এখনো সুযোগ রয়েছে, ‘কোভিড পরীক্ষায়’ পাস করলে আমাদেরও সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। এই কোভিড পরীক্ষার মূল দায়িত্ব ছিল সরকারের। এ কাজে তাদের ব্যর্থতার পাল্লা এতটাই ভারী যে এ প্রসঙ্গে কিছু না বলাই ভালো। লকডাউনে উপর্যুপরি কারখানা খোলা ও বন্ধের ঘোষণা দিয়ে শ্রমিকদের শিল্পাঞ্চলে টেনে আনার ঘটনায় তারা নজিরবিহীন দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এখন শ্রমিক ছাঁটাই করলে দেশের মানুষ তা ভালো চোখে দেখবে না, এটা নিশ্চিত।
শেয়ারবাজার ধ্বংস হয়েছে আগেই। প্রবাসী আয়ও নাজুক পরিস্থিতিতে। এখন লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিক বেকার হয়ে, নিঃস্ব অবস্থায় ফিরেছেন। আরো ১৪ লাখ ফিরবেন বলে জানা যাচ্ছে নানা সূত্রে। সুতরাং আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা অনুমান করা কঠিন কিছু নয়।
এই করোনাকালে নানা কারণে সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে দেশের তৈরী পোশাক খাত। রফতানি আয়ের ৮৩ শতাংশের জোগান দেয়া এই খাতে কাজ করেন প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো তৈরী পোশাক খাতের শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি করোনার এই দুর্যোগেও অগ্রাধিকার পায়নি। তার ওপর সাধারণ ছুটির মধ্যে বিপুলসংখ্যক কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা এবং শ্রমিকদের মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা নিয়েও চলছে চরম বিশৃঙ্খলা। অথচ করোনার অভিঘাত সামলানোর জন্য সরকার সবার আগে রফতানিমুখী এই খাতের জন্যই পাঁচ হাজার কোটি টাকার সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করে। বহু বিতর্কের পর অবশেষে শ্রমপ্রতিমন্ত্রী এপ্রিল মাসে বন্ধ থাকা কারখানার শ্রমিকদের জন্য ৬০ শতাংশ বেতন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আর যেসব কারখানা চালু রয়েছে সেখানকার শ্রমিকদের পূর্ণ বেতন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কারখানা মালিকরা। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো শ্রম মন্ত্রণালয় এবং বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ লে-অফ ও ছাঁটাই না করার ঘোষণা দিলেও বহু কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই ও লে-অফ ঘোষণার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com