শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন

ভারতে এলপিজি পাঠিয়ে সুযোগ নেবে বাংলাদেশ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৯
  • ৩৪৭ বার

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ও উত্তর-পূর্ব রাজ্যে এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সরবরাহ করে বাণিজ্যিক সুবিধা নিতে চায় বাংলাদেশ। ভারতে অভ্যন্তরীণভাবে রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা তুলনামূলক ব্যয়বহুল ও দুর্গম। কেন্দ্রীয়ভাবে রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় বাংলাদেশের নদীবন্দর ব্যবহার করতে চায় দেশটি। এ সুবিধা নিয়ে ভারত ওইসব রাজ্যে এলপিজি পাঠাতে আগ্রহী। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সুবিধা নিতে আমদানি করা এলপিজি রপ্তানি করতে চায় দেশটিতে। গত সেপ্টেম্বরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফরে গিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে এসেছে। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি মাসের শুরুতে ভারত সফর করে এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা চুক্তি করেন। শুধু এলপি গ্যাসই নয়, পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের কী অংশীদারত্ব থাকবে এবং এর শর্ত কেমন হবে অর্থাৎ স্ট্যান্ডার্ড অপারেশনাল প্রসিডিউর বা এসওপির একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ তার অবকাঠামো ব্যবহার করতে দিয়ে কী ধরনের সুবিধা আদায় করতে পারে সে বিষয় নিয়ে কাজ করছে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিদেশ থেকে আমদানি করা এলপিজি ভারতে রপ্তানি করবে বেসরকারি দুয়েকটি কোম্পানি। সেখানে সরকারি সম্পৃক্ততা থাকবে খুব কম। তবে বিদেশ থেকে পণ্য এনে রপ্তানি পণ্যের ওপর সরকারের ১০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডের নিয়ম পালন করা হবে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে সরকারের ১০ শতাংশ লাভ হবে। এ ছাড়া সরকার আরোপিত ভ্যাট-ট্যাক্স পাবে সরকার।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ভারতে এলপিজি রপ্তানি বাংলাদেশের জন্য পজেটিভ। ত্রিপুরাসহ দেশটির বেশ কিছু রাজ্যে যোগাযোগব্যবস্থা দুর্গম। এ সুযোগে বাংলাদেশ ব্যবসায়িক সুবিধা নিতে পারে। এতে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক বৈষম্যটাও কমে আসবে। ওই কর্মকর্তা বলেন ত্রিপুরায় এলপিজি পাঠানোর সমঝোতা চুক্তি করা হলেও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয়ও এলপিজি পাঠানো যাবে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ত্রিপুরায় এলপিজি সরবরাহের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই দুদেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকো ভারতের ত্রিপুরায় পরীক্ষামূলক এলপিজি পাঠিয়েছে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোদমে এলপিজি সরবরাহ করা হবে। আপাতত ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় এলপিজি পরিবহনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলেও অদূর ভবিষ্যতে আসাম, মিজোরাম, মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যে এলপিজি রপ্তানির সুযোগও রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে কাতার থেকে এলপিজি আমদানি করে তা বাংলাদেশের বন্দর ও সড়ক ব্যবহার করে ত্রিপুরা ও অন্য রাজ্যগুলোয় পাঠানো হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অংশে পণ্য পরিবহনের দায়িত্বে থাকবে বাংলাদেশের বেসরকারি কোম্পানিগুলো।

সরকারি বেসরকারি সূত্রে জানা যায়, প্রথম দিকে বছরে ১৫ হাজার টন এলপিজি ভারতে রপ্তানি করা হবে। ক্রমান্বয়ে দুদেশের মধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও চাহিদা বাড়লে পরিমাণও বাড়তে থাকবে। চট্টগ্রামের মোংলায় বাংলাদেশ একটি এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপনেও কাজ করছে। সুত্রে জানাযায়, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এখন ১০ লাখ টন এলপিজি সরবরাহের ক্ষমতা রয়েছে। এর বিপরীতে দেশে চাহিদা রয়েছে ৭ লাখ টনের।

জ্বালানি বিভাগ জানায়, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেডের (আইওসিএল) সঙ্গে দেশের বেক্সিমকো পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এবং ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথ উদ্যোগে এলপিজি বাণিজ্য করবে। আইওসিএল ত্রিপুরায় এলপিজি বোতলজাত করার পাশাপাশি বিতরণ করবে।

বেসকারি এলপিজি কোম্পানিগুলো সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে এলপিজি নিয়ে ভারত ভর্তুকি দিয়ে সেখানকার গ্যাসের চাহিদা পূরণ করতে চাইছে। এ জন্য বাংলাদেশের দুই কোম্পানির সঙ্গে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলো মোংলা বন্দর দিয়ে এলপিজির কাঁচামাল আমদানি করে তা প্রক্রিয়া ও বোতলজাতের মাধ্যমে দেশের মধ্যেই সরবরাহ করে।

সরকার এখন পর্যন্ত ৫৬টি এলপিজি প্ল্যান্ট নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি বেসরকারি উদ্যোক্তা এলপিজি সরবরাহ করছে। তাদের অনেকেই বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে এসেছে। কিন্তু চাহিদা না থাকায় সক্ষমতার পুরো উৎপাদন করতে পারছেন না। তাই তাদের রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে দেশের চাহিদা পূরণের পর রপ্তানি করতে পারবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com