শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন

সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন, কর্মব্যস্ত সুখী জীবন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৩৬৪ বার

সুপ্রিম কোর্ট বারের ল’ইয়ার্স মেডিটেশন সোসাইটির আমন্ত্রণে আমরা ছিন্নমূল শিশুদের কৃতিত্ব, পাহাড় ও ঝর্ণা দেখার জন্য বান্দরবান গিয়েছিলাম। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের বৈরী আবহাওয়াসহ স্বাস্থ্যগত কারণে সঙ্গীরা আমাকে রেখেই হাজার ফুট উপরের খেলার মাঠ দেখতে চলে গেলেন। শরীরের কাছে মনের করুণ পরাজয়ের বিষয়টি টের পেয়ে ঘাবড়ে যাই। মন খারাপ করে ঘরে অবস্থানকালে দূর থেকে সম্মিলিত মধুর কণ্ঠে, ‘সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন, কর্মব্যস্ত সুখী জীবন’ স্লোগান ভেসে আসছে। ওই শব্দ লক্ষ করে রাস্তার দিকে চোখ ফেলতেই দেখি কচিকাঁচার দল। ওদের একটি দল কালো সালোয়ার, গোলাপি গেঞ্জি, কারো কারো গলায় সবুজ ওড়না এবং অপর দল গোলাপি সালোয়ার, সাদা বর্ডারযুক্ত ব্লু কামিজ পরিহিত।

দেশের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা অর্থাৎ পার্বত্য এলাকা দেখার আকাঙ্ক্ষা অনেক দিনের। কারণ, ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থাপনা পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার দেখার জন্য ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। আমাদের সফরসঙ্গী ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার হাশেম ভাই। প্রথম বিদেশ গমন হিসেবে মালয়েশিয়ার যে দিকে তাকাই, সে দিকেই বিস্ময়। বিস্ময় ও চমকের ষোলোকলা পূর্ণ হয় গেন্টিং হাইল্যান্ডে গিয়ে। ছয় হাজার ফুট উপরে পাহাং রাজ্যের ভয়ঙ্কর এই সেক্টরটি পর্যটকদের কাছে রহস্যপুরী, আলো-আঁধারির দেশ, রোদ-বৃষ্টির মেলা, মেঘকুমারীর রাজ্য ইত্যাদি নানা অভিধায় অভিহিত।

কুয়ালালামপুর থেকে গেন্টিং হাইল্যান্ড দু’ঘণ্টায় পথ। এর মধ্যে দেড় ঘণ্টার পথই পাহাড়ি এলাকা। পাহাড়ের ওপর দিয়ে কখনো কখনো পাশ ঘেঁষে কঠিন পাথর কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। কোনো কোনো পাহাড় এত উঁচু যে, চূড়া দেখা যায় না। পাহাড় ও গিরি কন্দরের পাশ ঘেঁষে আমরা এঁকেবেঁকে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে উপরের দিকে উঠছি তো উঠছিই। একসময় মেঘরাজ্য হাতের নাগালে চলে আসে। আমাদের সামনে, পেছনে, ডানে, বামে, দূরে, পাহাড়ের ঢালে, গর্তে ও চূড়ায় সর্বত্র খণ্ড খণ্ড, পেঁজা পেঁজা তুলার মতো মেঘপরী। কাচের সামান্য ফাঁক পেলেই দুরন্ত মেঘশিশুরা শাঁ করে ঢুকে পড়ে গাড়িতে। মুহূর্তে নরম হাতের কোমল পরশে ভিজিয়ে দেয় শরীরের উপরের অংশ। কচিৎ পাহাড় ও বৃক্ষরাজির ফাঁক-ফোকর গলিয়ে এক ঝলক সোনালি রোদ ভীতু চোখে উঁকি মেরে মুচকি হেসে বিজলির মতো মিলিয়ে যায়। পরে এবার ক্যাবল কার। কারণ, ছয় হাজার ফুট উপরে ওঠার আরো অনেকটাই বাকি। এটা কুয়ালালামপুরের শ্রেষ্ঠ বিনোদনকেন্দ্র। এখানে রয়েছে অর্ধডজন তারকাখচিত হোটেল, যার কক্ষ সংখ্যা ছয় হাজারেরও বেশি। এসব কক্ষে একসাথে ১০ হাজারের বেশি লোক অবস্থান করতে পারে। রহস্যময় আবহাওয়া; এই রোদ এই বৃষ্টি। দিনমান চলে ভেজানো শুকানোর খেলা। এক অদ্ভুত অনুভূতির জগৎ। এ জগতের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পর্যটকরা পঙ্গপালের মতো সর্বক্ষণ গিজগিজ করেন।

অগ্রিম বুকিং না থাকলে হোটেলে সিট পাওয়া মুশকিল। শত শত লোক হোটেলের লবিতেই রাত পার করে দেয়।
‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ গেন্টিং হাইল্যান্ড একদিন ভয়ঙ্কর ভয়ের কারণ ছিল। ছিল আমাদের লামা, নীলগিরি ও নাইক্ষ্যংছড়ির মতোই শ্বাপদঙ্কুল ভয়ঙ্কর নির্জন বিদঘুটে অন্ধকার ও দুর্গম এলাকা। মালয়েশিয়ার উলুকালি পাহাড়ের মতো এখানেও ভয়ে লোকজন আসত না। সাত দশক আগে টং নামে জনৈক চাইনিজ ভদ্রলোক ভাগ্যের সন্ধানে শূন্যহাতে মালয়েশিয়া আসেন। ঠিকাদারি ব্যবসা করে একসময় প্রচুর বিত্ত-ভৈববের মালিক হয়েছিল। তিনি জীবনের শেষ দিনগুলো কোলাহলপূর্ণ শহরের বাইরে ভিন্ন পরিবেশে নিরিবিলি কাটাতে চাচ্ছিলেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর শহর থেকে দূরে জনমানবহীন অরণ্যঘেরা পাহাড়চূড়ার স্থানটি তার পছন্দ হলো। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি লিজ নিয়ে পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের দ্বারা নির্মাণ করেন বিশ্বের বিলাসবহুল, অন্যতম সেরা অবকাশকেন্দ্র।

জনমানবহীন ভয়াবহ অন্ধকার এবং পরিত্যক্ত একটি জঙ্গলের বিস্ময়কর পরিবর্তন দেখে ইঞ্জিনিয়ার হাশেম ভাই আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘১০ বছর রাঙ্গামাটি ছিলাম, যার একদিকে বিশ্বের বৃহত্তর বেলাভূমি; অপর দিকে মায়াময় সবুজ পাহাড়। উলুকালির মতো আমাদের পাহাড়ের খন্দ-খোঁড়লে জমাট বাঁধে মেঘ। উদ্যোগ নিলে আমাদের পাহাড়িয়া এলাকায় এর চেয়েও সুন্দর, পৃথিবীর বৃহত্তর স্বপ্নপুরী নির্মাণ করা সম্ভব। কিন্তু তা বোধ হয় আমরা পারছি না। সেখানকার উপজাতিরা স্বায়ত্তশাসনের নামে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করছে। ইচ্ছাকৃতভাবে অশান্ত করে রাখছে পাহাড়ি এলাকা। অনেকের ধারণা, একদিন পার্বত্য এলাকা হবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দ্বিতীয় গেন্টিং হাইল্যান্ড। তবে এর কৃতিত্বে ও কর্তৃত্বে কে থাকে, সেটিই দেখার বিষয়।

কৃতিত্বটা শহীদ আল বোখারী মহাজাতককে দিয়েই শুরু হয়েছে। সুখপাখির সন্ধানে যারা দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছেন, তারা দুর্গম পাহাড়কে বাসযোগ্য করাসহ বিদ্যা ও জ্ঞানের মশাল জ্বেলে অমর হয়ে থাকতে পারেন।

পার্বত্য এলাকা দেখার আকাক্সক্ষা ২০০০ সাল থেকেই। নানা কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এর মধ্যে অন্যতম কারণ, বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা। তাই সাইফুদ্দিন আহমদ রতনের মুখে সুপ্রিম কোর্টের একদল আইনজীবীর সাথে ভ্রমণের প্রস্তাব পেয়েই রাজি হয়ে গেলাম। ৭ নভেম্বর রাত ১১টায় নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড থেকে সৌদিয়া গাড়িতে আরোহণ করি। রাত পৌনে ১টায় গাড়ি কুমিল্লা পার হয়ে বিরতি নেয় হোটেল জমজমে। প্রায় ৩০০ লোকের রাতের খাবার। সাদা ভাত, ভর্তা, ভাজি, সবজি ও মুরগি। সাথে চটপটি ও চা। যার যত ইচ্ছে, জনপ্রতি ২০০ টাকা।

ফজরের আজানের সময় কর্ণফুলী ব্রিজ পার হয়ে আমাদের গাড়িবহর বাম দিকে বাঁক নেয়। ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য পটিয়া এলাকায় এক মসজিদের পাশে বাস থামে। রাস্তার একপাশে মসজিদ অপর পাশে মাজার। রাস্তার পাশে দাঁড়াতেই দূরপাল্লার বাসগুলো শাঁ শাঁ করে চলে গেল পার্বত্য এলাকার দিকে। শাঁ শাঁ করে চলে যাওয়ার মতো নতুন ঝকঝকে রাস্তাই বটে। এখান থেকে আমাদের গন্তব্য আরো ৯০ কিলোমিটার। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া হয়ে সকাল পৌনে ৭টায় আমাদের বাসের শেষ গন্তব্য লোহাগাড়ায়। সেখান থেকে দক্ষিণ-পূর্বে কিলো বিশেক পরেই পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজেলা লামার সীমানা। এতে প্রবেশ করতেই শুরু হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের নামকরণের সার্থকতা। চলার পথে দুই পাশে ছোট ছোট পাহাড়-টিলাসহ চাকমাদের উপজাতি পাড়াও চোখে পড়ে। কখনো সমতল, কখনো পাহাড় কেটে মাঝখান দিয়ে সরু পথ। দু’পাশে ধানক্ষেত, বাজার, দোকানপাট, বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বন, পুকুর-খাল, ডোবা-নালা ইত্যাদি। একস্থানে পাহাড় ধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়ার উপক্রম। স্থানীয় ড্রাইভার অনেক দক্ষতার সাথে বাধা অতিক্রম করে গন্তব্যে পৌঁছেন। গন্তব্যে গিয়ে সিএনজি থামতেই দেখি ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’ লেখা সাইনবোর্ড।

‘সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন, কর্মব্যস্ত সুখী জীবন’
স্লোগানটির প্রবক্তা শহীদ আল বোখারী বা মহাজাতক। বৈজ্ঞানিক মেডিটেশন চর্চার পথিকৃৎ এবং নতুন সহস্রাব্দের জীবনযাপনের বিজ্ঞান কোয়ান্টাম মেথডের উদ্ভাবক ও প্রশিক্ষকও মহাজাতকই। তার ভাষায়, ‘অর্থ-বিত্ত, বংশমর্যাদা, শান-শওকত, জ্ঞান-গরিমা, ডিগ্রি-পদবি না থাকলেও কোনো অসুবিধা নেই। প্রয়োজন শুধু মুক্ত বিশ্বাসের। কারণ মুক্ত বিশ্বাসই বদলে দিতে পারে জীবনের সব কিছুকে।’

তার মতে, প্রতিটি মানবশিশু ‘সুপ্ত মহামানব’রূপে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু কায়েমি স্বার্থ সৃষ্ট মনোজাগতিক জিঞ্জির বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ধীরে ধীরে তাকে পরিণত করে এক অসহায় নিরুপায় প্রাণীতে। সার্কাসের হাতির জীবনের দিকে তাকালে এই মনোজাগতিক দাসত্বের বিষয়টি বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না। ‘আমি পারি, আমি পারব’- এই বিশ্বাস ও ধারণাই একজন রাজমিস্ত্রিকে একটি বাঁশের ওপর ভর করে ৮-১০ তলা ভবনের দেয়ালে রঙ করতে শক্তি ও সাহস জোগায়।

বিচারপতি এ কে এম সাদেক ‘মুক্ত বিশ্বাস বদলে দেয় জীবন’ নামক নিবন্ধে বলেন, এ শরীর নিয়েই এত দিন দিব্যি ছিলাম। যে দিন টেনশন করলাম, মনে কষ্ট পেলাম, সে দিনই অসুস্থ হলাম। তার মানে অসুখটা মনে, হৃৎপিণ্ডে নয়; সমস্যাটা ব্রেনের চিন্তায়, স্নায়ুতে নয়। তাই সমাধানের সূত্রও রয়েছে মনে আর দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে।
‘আমি পারি, আমি পারব,
আমার জীবন আমি গড়ব।’
এবং
সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন, কর্মব্যস্ত সুখী জীবন।

সে দিন এই স্লোগানের অনুরণন অনুসরণ করে কচিকাঁচার পেছনে পেছনে আমিও হাঁটছিলাম। হ্যামিলনের ইঁদুর বাহিনীর মতো কচিকাঁচার দল আয়ার পেছনে পেছনে দক্ষিণের পাহাড়ের দিকে বাঁক নেয়। পাহাড়ের গোড়া থেকে উপরের দিকে খাড়া পথ। মাটি খাঁজ কেটে বাঁশ বিছিয়ে পা রাখার মতো সিঁড়িপথ। এর গোড়ায় গিয়েও থামেনি, সমভূমিতে যেভাবে হাঁটছিল তার চেয়েও জোরকদমে তরতর করে পাহড়ে উঠতে শুরু করে তারা। শেষ শিশুটির শেষে উঠতে শুরু করি আমি নিজেও। অর্ধেক উঠেই হার্টবিট বেড়ে যায়। উপরে যাবো না, নিচে নামব, দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম। উপরে ওঠার চেয়ে নিচে নামার ঝুঁকি বেশি। ‘আমি পারব’ বলে আস্তে আস্তে উপরের দিকেই হাঁটতে থাকি। উঠে দেখি কচিকাঁচার দল এ ধরনের আরো দু’টি সিঁড়ি অতিক্রম করে কেবল উপরের দিকেই যাচ্ছে। একসময় পঁয়ষট্টি তলা উচ্চতার সমান উচ্চতায় তাদের স্কুলের গেটের কাছে পৌঁছতেই আটকে দেয় দারোয়ান। ততক্ষণে স্কুলমাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলনসহ সম্মিলিত কণ্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ শুরু হয়ে গেছে। আমার পরিচয় দেয়াসহ নেমে যাওয়ার বিকল্প পথ আছে কি নেই, জানতে চাই। বিকল্প পথ না থাকায় ভয় পেয়ে যাই। দারোয়ান একটি লাঠির ব্যবস্থা করে লাঠির সাহায্যে সাবধানে নেমে যেতে বললেন। ‘আমি পারি, আমি পারব’ এই ধারণাই এখানকার শিশুদের ভেতর থেকে সব ভয়ভীতি, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূর করে অজয়কে জয় করার পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। শিশুমস্তিষ্কে প্রবিষ্ট এই শাশ্বত বিশ্বাসই অবহেলিত ছিন্নমূল এতিম শিশুদের পৌঁছে দিয়েছে লক্ষ্যে। জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশের কুচকাওয়াজে আবারো প্রথম হয়েছে বান্দরবানের লামার কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে পরপর চারবার প্রথম স্থান দখল করল স্কুলটি। ‘বান্দরবান জেলার লামায় নির্মিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের জিমন্যাসিয়াম ভবন। কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের ১২ হাজার ৮০০ বর্গফুটের এ ভবনের উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। অলিম্পিকে সোনা আমরা জিতবই- এ স্বপ্ন সামনে রেখে ২০১২ সালে কসমো স্কুলের জিমন্যাস্টিকস বিভাগের যাত্রা শুরু’ (২০১৯ সালে কয়েকটি জাতীয় পত্রিকার খবর)।

আমাদের আড়াই শতাধিক আইনজীবীর সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা, রাতে ডকুমেন্টারিসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতিম শিশুদের শ্বাসরুদ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল মনে দাগ কাটার মতো। শিশুদের ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে অনেক দর্শক-শ্রোতা চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি।

৯ নভেম্বর বিদায় নেয়ার পালা। আইনজীবীদের বিদায় দিতে গিয়ে কোয়ান্টাম এডুকেশন প্রোগ্রামের ইনচার্জ সালেহ আহমদ বলেন, ‘আপনারা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সম্মানিত বিজ্ঞ আইনজীবী। আমরা আমাদের শিশুদের প্রতিদিন যা খেতে দিই (তেল, চর্বি ও ননীবিহীন খাবার), আপনাদেরও তাই খাইয়েছি। গুরুজি (শহীদ আল বোখারী মহাজাতক) জানতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তার পরামর্শেই আজ একটু মাটনের ব্যবস্থা করেছি। লেখাপড়ার বিষয়ে আপনাদের সমভূমির বাক্সবন্দী আদরের সন্তানরা যা না পারে, আমাদের এতিম সন্তানেরা প্রকৃতির মধ্যে বাস করে তা পারে। আমাদের লক্ষ্য, আগামী অলিম্পিকে দেশের জন্য সোনা-জয়সহ কসমো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।’

‘আমি পারি, আমি পারব’ কোয়ান্টামদের এ আপ্তবাক্যের শেষ প্রমাণ পেয়েছি ফিরে আসার পথে। ফিরে আসার পথে যে স্থানে পাহাড় ধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে, সে স্থানটি আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। সে স্থানে আটকে যায় গাড়ি। খবর পেয়েই চলে আসে কসমোর শিক্ষার্থীরা। হাঁটু পরিমাণ লালমাটির কাদায় আটকে পড়া যাত্রীসহ ৫২টি সিএনজি ধরাধরি করে পার করা সাধারণ মানুষের সাধ্য নয়।

এই অসাধ্য সামনে নিয়েই কসমোরা যেভাবে এগোচ্ছে, তাদের কাছে কোনো বাধাই অসাধ্য হয়ে উঠতে পারে না। পরিবেশদূষণসহ অখাদ্যে-কুখাদ্যে সারা দেশ থেকে ‘সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন, কর্মব্যস্ত সুখী জীবন’ হারিয়ে যাচ্ছে এবং শিক্ষার আলো নিভু নিভু। সেখানে দুর্গম পাহাড়চূড়ায় কসমোদের জীবনযাত্রা, খাদ্য, আদর্শ ও শিক্ষার আলো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া আবশ্যক।

লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com