মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনে বাঁধার সৃষ্টি হলে ব্রেন স্ট্রোক হয়। বিশ্বের প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রতি বছর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় স্ট্রোকের দুইটি নতুন কারণ সামনে এসেছে।
গবেষণায় জানা গেছে, দাঁত অপরিষ্কার থাকলে ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। জাপানের হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তাদের গবেষণার পর দাবি করেন, দাঁত অপরিষ্কার থাকলে দাঁতের ফাঁকে যে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, যা দাঁতের ক্ষয়ের জন্য দায়ী, সেই একই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে স্ট্রোকের ঝুঁকিও।
জাপানের এই গবেষকদের ব্যাখ্যা, এই ব্যাকটেরিয়া মস্তিষ্কের শিরায় রক্ত সঞ্চালনের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এতে মস্তিষ্কে পরিমিত রক্ত সঞ্চালন বিঘ্নিত হয়, ফলে বাড়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি। প্রায় ৩৫৮ জন রোগীর উপর গবেষণা চালিয়ে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
গবেষকদের মতে, এই ৩৫৮ জনের মধ্যে অধিকাংশের বয়সই ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। তাদের প্রত্যেকেরই দাঁতে ব্যাকটেরিয়ার ব্যপক উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন গবেষকরা। তাই দাঁতের যত্ন নিন। নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করুন। দাঁতের ক্ষয় রোধের পাশাপাশি কমিয়ে ফেলুন স্ট্রোকের ঝুঁকিও।
অপর একটি গবেষণায় স্ট্রোক ইন আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, যেসব ব্যক্তি দৈনিক আট বা তার বেশি ঘণ্টা বসে থাকে এবং শারীরিকভাবে খুব বেশি সুস্থ নন, তাদের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি সাত গুণ বেশি। আর যারা চার ঘণ্টারও কম সময় ধরে বসে থাকে তারা যেন প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট ব্যায়াম করে।
কানাডার অন্টারিওতে ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল স্কলার লিড স্টাডি লেখক ডা রায়েদ জাউন্ডি বলেন, অলস সময়ে গ্লুকোজ নষ্ট হয় বলে ধরা হয়। এছাড়াও লিপিড বিপাক এবং রক্ত প্রবাহকে বাধা দেয় এবং শরীরে প্রদাহ বৃদ্ধি করে। এই পরিবর্তনগুলি সময়ের সাথে সাথে রক্তনালীর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
জউন্ডি বলেন, এগুলি হল সবচেয়ে সাধারণ ধরনের স্ট্রোক, এবং এগুলি ঘটে যখন মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী একটি ধমনী বন্ধ হয়ে যায়। যদি স্ট্রোকের দ্রুত চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে মস্তিষ্কের কোষগুলি অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে শুরু করতে পারে।
স্ট্রোক আসলে কী-
সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্যে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে, এমনকি মস্তিষ্কের কোষেও অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন। কোনও কারণে মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনীর পথ সংকীর্ণ হয়ে বা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কের কোষ অক্সিজেনের অভাবে নিস্তেজ হয়ে যায়। এটাকেই চিকিত্সকেরা স্ট্রোক বলেন।
স্ট্রোক হওয়ার কারণ-
যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তাদেরও স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি।
মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। বিশেষ করে অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড প্রেশার থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
স্ট্রেস ও ডিপ্রেশনসহ অন্যান্য মানসিক সমস্যা থাকলেও এই সমস্যার সম্ভাবনা থাকে।
যারা দিনভর বসে কাজ করেন, হাঁটা চলাসহ কায়িক শ্রম নেই বললেই চলে তাঁদের এই রোগের ঝুঁকি অন্যদের থেকে বেশি।
পুষ্টিকর খাবারের পরিবর্তে ভাজাভুজি, ফাস্ট ফুড বেশি খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
ধূমপানের ফলে অন্যান্য অনেক অসুখের সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রোকের ঝুকিও অনেকটাই বেড়ে যায়।
নিয়মিত অতিরিক্ত মদ্যপানের অভ্যাস স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়েট বা এক্সারসাইজ করেন না, তাদেরও স্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
হার্টের অসুখ থাকলে ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।
স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে যা করণীয়-
ওজন কমাতে সুষম খাবারের উপরেই ভরসা রাখুন। ডায়েটে রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি ও ফল।
সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন আধ-ঘণ্টা করে দ্রুত পা চালিয়ে হাঁটতে হবে।
ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
প্রতিদিন অন্তত ৫-৬ ঘণ্টা ঘুমোতে হবে।
ব্লাড প্রেশার আর সুগার থাকলে তা তো নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রণে রেখে চলতে হবে।
ভুঁড়ি বাড়তে দেওয়া চলবে না।
শরীরচর্চার সময় খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অত্যাধিক পরিশ্রমসাধ্য বা ক্লান্তিকর না হয়ে ওঠে।
যদি আচমকা হাত, পা বা শরীরের কোনও একটা দিক অবশ, অসাড় লাগে বা চোখে দেখতে বা কথা বলতে অসুবিধে হয় অথবা ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে দ্রুত চিকিত্সকের শরণাপন্ন হন।