মালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রমবাজার দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে স্থগিত হয়ে রয়েছে। নেপালের সাথে চুক্তি করলেও তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার ব্যাপারে এখনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ অবস্থায় মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা শ্রমিক সঙ্কটে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। ইতোমধ্যে অনেক কোম্পানি শ্রমিক সঙ্কটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকগুলো বন্ধের পথে। তারা দ্রুত এ থেকে উত্তরণে বিদেশী শ্রমিক (বাংলাদেশ) আমদানি শুরুর ওপর সরকারকে চাপ অব্যাহত রেখেছেন।
এসব তথ্য জানিয়ে মালয়েশিয়ায় থাকা বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা বলছেন, মালয়েশিয়ান ব্যবসায়ীরা তাদের সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, সোর্স কান্ট্রিভুক্ত ১৪টি দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশীরাই বেশি পরিশ্রমী। মালয়েশিয়ার উন্নয়নে তাদের ভূমিকা অনেক। তাদের দিয়ে যেকোনো কঠিন কাজ করিয়ে নেয়া যায়। তারাও চাচ্ছেন শ্রমিক আসা শুরু হলে যেন বাংলাদেশ থেকেই আসে আগে।
গতকাল ঢাকার এক কূটনীতিক নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, শ্রমবাজার খোলার ব্যাপারে কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তির ইন্টারেস্টের কারণেই সম্ভাবনাময় মার্কেটটি এখনো খুলছে না। তবে আশা করা যাচ্ছে, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভালো একটা খবর আসবে।
গতকাল জনশক্তি রফতানিকারক একজন ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, দু-একদিনের মধ্যে মালয়েশিয়ার হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্ট্রিতে একটি চিঠি যাচ্ছে। এরপরই আশা করছি, বন্ধ থাকা মার্কেটটি খোলার রাস্তা অনেকটা পরিষ্কার হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে পজিটিভ অনেক খবরই আছে। তবে এমওইউতে আগেরবার যে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির নাম ছিল, এবারো তারাই থাকছে। তাদের সাথে কনসোর্টিয়াম মেম্বার হিসেবে আরো ২০০ রিক্রুটিং এজেন্সির নাম অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এ নিয়ে গত সপ্তাহে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাথে ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মধ্যে এ/বি/সি/ডি ক্যাটাগরি করা হচ্ছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ক্যাটাগরি তৈরির কাজ আগেই শুরু হয়েছে। তবে তার চেয়ে এ মুহূর্তে দরকার মার্কেট ওপেন করা।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-এর সেক্রেটারি জেনারেল শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান গতকাল রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার ব্যাপারে এখনো একটি গ্রুপ বাধা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। তারপরও আমরা আশা করছি, ঢাকায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকটি (আন-অফিসিয়ালি) আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের ৬ তারিখ বা তার পরও হতে পারে। ওই মিটিংয়ে টার্মস অ্যান্ড রেফারেন্স ঠিক করার পর প্রটোকল সই হতে পারে।
শোনা যাচ্ছে, এবারো পুরনো ১০ এজেন্সির সাথে মালয়েশিয়া থেকে আরো ২০০ রিক্রুটিং এজেন্সির নামের তালিকা যোগ হতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই নিয়ম তো গতবারও ছিল। সেবারও মূল মালিক কিন্তু ১০ রিক্রুটিং এজেন্সিই ছিল। বাকিরা ছিল সাব-এজেন্ট হিসেবে। এ বিষয়টি তার জানা নেই জানিয়ে বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে।
গত রাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: সেলিম রেজার সাথে বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এর আগে মালয়েশিয়ায় শাহআলম এলাকার স্থানীয় এক এজেন্ট ইব্রাহিম নয়া দিগন্তকে বলেছেন, শ্রমবাজার জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারি মাসে খুলছে- এমন মেসেজ বিভিন্নভাবে আমরা পাচ্ছি। এখানকার কোম্পানির মালিকরাও আমাদের বলেছে কর্মী নিয়োগের প্রোফাইল রেডি করার জন্য। তিনি বলেন, কোম্পানির মালিকরা আমাকে আরো বলেছেন, পুলিশি অভিযানে ব্যাপক শ্রমিক ধরা পড়ায় এবং স্বেচ্ছায় কর্মীরা দেশে ফিরে যাওয়ার কারণে অনেক কোম্পানি বন্ধের পথে। তা ছাড়া নেপাল ও মিয়ানমার থেকে চুক্তি মোতাবেক যেসব শ্রমিক আসেন তারা ঠিকভাবে কাজ করেন না। কিন্তু তাদের বেতন বেশি দিয়ে আনতে হয়। সেই তুলনায় কম বেতন দিয়ে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বেশি কাজ করানো যায়। এর জন্য তারা এখন বাংলাদেশী শ্রমিকদের আনার ব্যাপারেই বেশি আগ্রহী।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশী শ্রমিক যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা (এসপিপিএ) জারি করে মালয়েশিয়া সরকার। এরপরই ট্যুরিস্ট ভিসায় দেশটিতে অবৈধভাবে কর্মী যাওয়া শুরু হয়। আর অবৈধ শ্রমিকের সংখ্যা বাড়তে থাকায় মালয়েশিয়া সরকার চার মাসের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে, যা আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হতে যাচ্ছে। এরপরই শুরু হবে ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান। এ আতঙ্কে মালয়েশিয়ার শাহআলম ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য অফিসে হাজার হাজার অবৈধ শ্রমিক লাইন ধরছেন স্পেশাল পাস পেতে। কিন্তু তারা আদৌ পাবেন কি না তা নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায়।