ছোট ও বড়পদার্র জনপ্রিয় অভিনেত্রী সোহানা সাবা। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে অভিনয় করেছেন কলকাতার ছবিতেও। অভিনয়ের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ সরব তিনি। নানা বিষয়ে প্রায়ই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন অভিনেত্রী।
প্রিয় মানুষকে হারানোর অনুভূতি ব্যক্ত করে গতকাল ফেসবুকে সোহানা সাবা এক পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন- ‘প্রথম যখন বাজিকে (আমার নানিকে) হারালাম, ঠিক করে কাঁদতে পারিনি। কারণ যখনই কাঁদতে যাই, আত্মীয়-স্বজনরা বলে “আমি কাঁদলে বাজি আমার কান্নার জলে আমার থেকে দূরে ভেসে যাবে”। বাজি যাতে দূরে ভেসে না যায়, তাই কান্না চেপে রাখলাম। রাতে ঘুমাতে পারতাম না তখন। ধরফর করে উঠে বসতাম। বুকে ব্যথা, দম বন্ধ হয়ে আসে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার তখনকার পার্টনারকে বলতাম “কাছের মানুষ হারানোর এত কষ্ট, এতদিন কি তাহলে আমি ভুল অভিনয় করেছি?” (আমার আবার জীবনের সব এক্সপেরিয়ান্স গিয়ে শেষে অভিনয়ের এক্সপেরিয়ান্সের সাথে কম্পেয়ারে ঠেকে।) এর আগে, এতটা কাছের, এতটা পছন্দের-ভালোবাসার মানুষকে হারাইনি আমি। সেই ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির কথা।
২০১৩ সালের আরও একটি ঘটনা উল্লেখ করে সোহানা সাবা লিখেছেন, ‘২০১৩ সালের মে-তে সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে হারালাম- রিপা। রিপা আমাকে ছেড়ে যাবার পর কি যে কষ্ট, কি যে অপরাধবোধ! নানা কারণে ওকে সময় দিতে পারতাম না। সেই অপরাধবোধ আমাকে আজও কুড়ে কুড়ে খায়।’
বাবাকে হারানোর স্মৃতি স্মরণ করে তিনি লিখেছেন, ‘এত যুদ্ধ, এত চেষ্টা করার পরও পাপাকে হারালাম ২০১৯-এর সেপ্টেম্বর মাসে। পাপার জন্যে ২ মিনিটও কাঁদতে পারিনি। ২ মিনিটের মাথায় পাপার মৃত্যুর পরবর্তী সব দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে শক্ত হয়ে। পৃথিবীতে একটা মাত্র মানুষ আমাকে পুরোটা বুঝতে পারতো-জানি না ঠিক পুরোটা বুঝতোও কিনা আমাকে। কিন্তু আমাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতো। আমি ভুল হলেও হয়তো আমার ডিসিশনই ১০০% ঠিক মনে হতো তার। আমি পুরোটা ভুল জানলেও আমার পাশেই থাকতো সবসময়। সেই মানুষটাকে আমি বাঁচাতে পারলাম না। শুধু বাবা নয়- একজন বন্ধু, একজন নিঃশব্দ সহচর হারালাম। একেবারে, এরপরেও… এখনও… পাপার জন্যে আর কান্না করা হয়নি। বুকে চেপে আছে আরেকটা কাছের মানুষকে হারানোর কষ্ট।’
সবশেষে সোহানা সাবা লিখেছেন, ‘হলিউডের অনেক সিনেমায় দেখেছি অপরাধীকে যখন কোনো অফিসার ইন্টারোগেশন করে তখন অন্য অফিসাররা বাইরে থেকে অপরাধীর মুভমেন্ট-স্টেটমেন্ট দেখে-শোনে। এই দুইপক্ষের মধ্যে থাকে একটা গ্লাসের পার্টিশন। একপক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করতে পারে কিন্তু আরেক পক্ষ একপক্ষ যে তাদের অবসার্ভ করছে তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারছে না। ঠিক তেমনি আমার আজকাল মনে হয় না এই কাছের মানুষরা আমাকে ছেড়ে গেছে। আমি বুঝি কাঁচের (সিম্বলিক) ঠিক ওপাশেই তারা। আমাকে দেখছে, শুনছে, আশির্বাদ করছে। আমি যদিও ওদের কাউকেই দেখতে পারছি না। শুধু এতটুকু জানি, “ওরা” ঠিক পর্দার ওপারে। আমি ক’দিন বাদে সেই পর্দার ওপারে যাবো। ওদের সাথে যাবো। ওদের ছুঁতে পারবো। তখন আমিও ওদের সাথে দেখতে-শুনতে পাবো পর্দার এপারের মানুষগুলোকে। ততদিন এপারের জীবনকে উপভোগ করে নেই…।’