বাংলাদেশে নির্বাচনী পরিবেশের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে সফল হতে পারছে না। জনগণ নিজেদের ভোটের অধিকার যথাযথ প্রয়োগ করতে না পারার কারণে তারা ভোট দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বিগত দু’টি জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারে নগণ্য। কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সারা দিন বসে বসে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে। নির্বাচন কমিশন কাগজকলমে ভোটার উপস্থিতির একটি হার দেখিয়েছে। বাস্তবে জানা গেল, আগের রাতেই ব্যালটে সিল মেরে ভোটের বাক্স পূর্ণ করা হয়েছে। ঢাকা সিটিতে এর আগের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের জোরজবরদস্তি প্রকাশ্যে দেখা গেছে। এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে শেষ পর্যন্ত দুপুরের মধ্যে বিরোধী দলের প্রার্থীরা হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এর মধ্যে স্থানীয় সরকারের একটি নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়নি যেখানে স্বাধীনভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটররা অংশ নিতে পেরেছেন। এবারের ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার ও বিরোধী দলের প্রার্থীরা নিজেদের পক্ষে জোর প্রচারণা চালিয়েছেন। আজ ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোটকে সফল করতে হলে সব ভোটরকে স্বতঃস্ফূর্ত ভোটকেন্দ্রে আসতে হবে।
ঢাকা সিটির এবারের নির্বাচনেও প্রচার-প্রচারণায় সরকারি দলের আধিপত্য লক্ষ করা গেছে। মাইকিং-পোস্টারিং ও জনসংযোগ করতে গিয়ে তারা কোনো বাধাবিঘেœর শিকার হননি। অন্য দিকে, বিরোধী দলের প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণার সময় বিভিন্নভাবে বাধার মুখে পড়েছেন। তাদের পোস্টারিং-মাইকিং সরকারি দলের সমান সমান মনে হয়নি। এর ওপর বিভিন্নভাবে তাদের বাধা দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও হামলা করে মারধর করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণার সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ আটজনকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। একই সময় রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ক্যাডারদের জড়ো করার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। বহিরাগতদের ঢাকায় জড়ো করে জাল ভোট দান ও শক্তি প্রয়োগের আয়োজন করার কথাও জানা যাচ্ছে। তাই নির্বাচনের উপযুক্ত সমতল মাঠ নেই। নির্বাচন কমিশনকে এসব ব্যাপারে একেবারে নির্বিকার দেখা গেছে।
এ অবস্থায় বিরোধীরা যদি সফলতা চান তাহলে তাদের প্রার্থীদের দৃঢ়তাপূর্ণ অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সেটি হচ্ছে নির্বাচনের মাঠে সাহসের সাথে শেষ পর্যন্ত নিজেরা থাকবেন। নিজেদের এজেন্টদের ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান নিশ্চিত করবেন।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিপুল সদস্য ইতোমধ্যে নিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণের। এ অবস্থায় নির্বাচন সফল করার জন্য দরকার ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ৫৫ লাখ ভোটার যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে ছুটে আসেন তাহলে সন্ত্রাসীরা সেভাবে সুবিধা করতে পারবে না। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের কোনো আপত্তি আমলে নেয়নি। আশা করা যায়, জনগণ জোরালো অংশগ্রহণ করলে সূক্ষ্ম কারচুপি হবে না।
নির্বাচন কমিশন বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বিতর্কিত একটি প্রতিষ্ঠান। দেশের সংবিধান নির্বাচন চলাকালীন একে বিপুল ক্ষমতা দিয়েছে। এর রয়েছে উপযুক্ত জনবল ও প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম। দুঃখজনক হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি জনগণের পক্ষ হয়ে সেই ক্ষমতার চর্চা করে না। যেভাবে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম চালায় তাতে মনে হয় তারা নিয়োগকর্তার স্বার্থই শুধু দেখে, প্রজাতন্ত্রের স্বার্থ দেখে না। ঢাকা সিটি নির্বাচনটি তাদের জন্য এখন একটি সুযোগ। নির্বাচনের দিন তাদের ক্ষমতার পুরো প্রয়োগ করার মাধ্যমে জাতিকে তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারেন। সবাই আশা করছে, নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্বটি এবার যথাযথ পালন করবে। ভোটাররা সবাই এতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করবে।