শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন

খেলার উন্মাদনায় বাংলাদেশী নাগরিকরা

সাইফুল ইসলাম তানভীর
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১১৯ বার

১৩ ডিসেম্বর রাত। বাসার চার দিকে উচ্চশব্দে আমার শিশুকন্যা-স্ত্রী উভয়ে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। একটু পরপর চিৎকার উল্লাস। পছন্দের দল জিতলে সেই দেশের তাদের প্রিয় খেলোয়াড়ের নাম বলে মিছিল করল। সজোরে আঘাত করল লোহার বিভিন্ন দরজায়। যাতে শব্দদূষণ হয়। বাজিও ফুটাল। তারা বড় বড় ডেকচিতে খাবার রান্নার আয়োজনও করেছিল। এমনটি শুধু ১৩ ডিসেম্বরে নয়, এবার ফুটবল বিশ্বকাপ শুরুর পর কয়েক রাতে এমন অশোভন কাণ্ড ঘটেছে। বিগত ফুটবল-ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময়ও ঘটেছে। এমনিতে সারা বছর ক্রিকেট খেলা চলতে থাকে, সাথে থাকে উন্মাদনাও। বিশ্বকাপ ফুটবল এলে পরিবেশ অতিরিক্ত বাজে হয়ে ওঠে।

আমাদের দেশে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আছে। সেখানে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। হঠাৎ হঠাৎ দেখি গ্রামের উঠতি বয়সের বিভিন্ন ছেলে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে এবং তাদের নিয়ে পুরো দেশের বেশির ভাগ নাগরিক চরম উৎসাহ দেখান। প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে কি না।

ক্রীড়া নিয়ে বড় বড় সংগঠন রয়েছে। ফিফা,আইসিসি ইত্যাদি। এসব সংগঠনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ উড়ানো হয়। এসব যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে তারা বিশ্বকে ইতিবাচক কিছু দিতে পারেন না। এসব যারা পরিচালনা করেন তারা সবাই বিলিয়নিয়ার। বড় বড় করপোরেট গোষ্ঠী এতে জড়িত। পুঁজিবাদতান্ত্রিক অর্থনীতি এসব খেলার আয়োজন নিয়ে মাতামাতি করে। তাদের সবার ক্রীড়া-বিষয়ক ডেস্ক তৈরি করতে হয়। ক্রীড়া সম্পাদক পদ তৈরি করতে হয়। ক্রীড়াকেন্দ্রিক বিশ্বে হাজার হাজার কোটি ডলারের মাদক, জুয়ার আসরও চলে। ব্যাংক, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অনেক কোম্পানিকে এসবের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়। অনেক মিডিয়া রয়েছে যারা এসবে খুব উৎসাহি কিন্তু তারা এবং তাদের মালিকেরা পৃথিবীর জন্য ভালো কিছু দিতে পারে না।
ক্রীড়াকেন্দ্রিক বিশ্বে হাজারো রকমের অশ্লীলতা ঘটে। ফুটবলের নামকরা এক দেশে বিশ্বকাপকেন্দ্রিক ঝলমলে আয়োজন দেখা গেল। অথচ তাদের দেশের মানুষরা দরিদ্র। তাদের বসতি বিশেষভাবে ঢেকে রাখতে হয়েছে তখন। যাতে বিদেশীরা তাদের যেন দেখতে না পায়। আর তারা যৌনতাকে ব্যবসা হিসেবে কাজে লাগিয়েছে এই সময়।

খেলোয়াড়দের বড় একটি অংশকে দেখা যায় তাদের অনেক বান্ধবী। এই অবস্থায় সন্তানও জন্ম দেয় তারা। দুঃখজনক হচ্ছে এই খেলোয়াড়দের জন্য বাংলাদেশী নাগরিকদের বৃহৎ একটি অংশ পাগল। কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সরকারি কর্মচারী, বেসরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, ছাত্র, কৃষক প্রায় সবাই তাদের ভক্ত! এ খেলোয়াড়দের সম্পর্কে তারা অনেক তথ্য জানে। অথচ নিজ দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য তারা জানে না। এখন খেলাধুলাকেন্দ্রিক মারামারি কাটাকাটি হচ্ছে দেশের সবখানে। বৃদ্ধ নাগরিকরা পর্যন্ত তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হন।

গত ১৪ ডিসেম্বর একটি নামকরা প্রিন্ট মিডিয়া শিরোনাম করেছে- ‘বিশ্বকাপের ডামাডোলে এক মাসে ১২ মৃত্যু।’ তারা উল্লেখ করেছে- বিশ্বকাপ ফুটবলের কারণে বাংলাদেশের কোথায় কিভাবে কতজনের মৃত্যু হয়েছে। কেউ পতাকা উত্তোলন করতে গিয়ে, কেউ মারামারি করে, কেউ আত্মহত্যা করে, কেউ স্ট্রোক করে! এই রিপোর্টের বাইরেও আরো মৃত্যুর ও আত্মহত্যার ঘটনা অন্যান্য বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে। হয়তো অনেক ঘটনা মিডিয়ায় আসেইনি।

এবার মুসলিম দেশ কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে। এটি ইতিহাসে ব্যতিক্রম এক আয়োজনের ঘটনা ছিল! কাতার অশ্লীলতামুক্ত আয়োজন করার চেষ্টা করেছে। তারা এই আয়োজনে ২০ বিলিয়ন ডলার অর্থ খরচ করেছে। এ নিয়ে অনেকের সমালোচনা রয়েছে। এই অর্থ দিয়ে বিশ্বের দরিদ্র কয়েকটি দেশের দারিদ্র্যবিমোচন করা যেত। হয়তো বা কাতার মুসলমানদের সম্মান বৃদ্ধির জন্য বিশেষ এ আয়োজন করেছে।

বিনোদনের প্রয়োজন আছে। তার একটা শোভন রূপ আছে। আমাদের দেশে খেলার মাঠ কমে গেছে, তরুণরা খেলাধুলা করতে পারছে না। নাগরিকদের খেলাধুলা ও সুস্থ ধারার বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। দেশের বেশির ভাগ নাগরিক সাঁতার জানে না। সাঁতারও একধরনের খেলা ও বিনোদন। সাঁতার শেখার জন্য রাষ্ট্র যথাযথ ব্যবস্থা রাখেনি। সাঁতার না জানার কারণে প্রতি বছর অনেক নাগরিক জীবন হারাচ্ছে। ক্যান্টনমেন্টগুলোতে সুন্দর সুন্দর অনেক গলফের মাঠ আছে। এখানে সাধারণ নাগরিকদের যোগদানের সুযোগ থাকলে ভালো হতো। এটি উচ্চবিত্তের জন্য রক্ষিত।

আমাদের দেশের নাগরিকরা ফুটবল খেলা উপলক্ষে বিদেশী পতাকা উড়ায়। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে তা এভাবে জোয়ারের মত দেখা যায় না। দেশের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসেও নিজ দেশের এত পতাকা উড়ানো হয় না। এটি লজ্জাজনক ব্যাপার। দেশের তরুণরা নিজ দেশকেই ভালোভাবে চিনে না। তারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে তেমন সচেতন নয়। সেগুলোর জানানোর জন্য আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোও কর্মসূচি নেয় না। মিডিয়াও এ ব্যাপারে একেবারে বেখবর। বর্ষা মৌসুমে প্রতিবেশী দেশ কৃত্রিমভাবে বন্যা ঘটিয়ে দিচ্ছে! শুকনো মৌসুমে পানি দেয় না। দেশের ৫৪টি নদী মরে গেছে। ফসলের ক্ষতি হচ্ছে । এসব ব্যাপারে আমাদের তরুণরা কথা বলতে শেখেনি। খেলার বিনোদন নিতে গিয়ে অন্যের জীবন যাপনে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। গোল ও চার, ছক্কার জন্য এতটাই চিৎকার দিচ্ছে হৃদরোগীরা বিপদে পড়ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com