সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্র অনেক বিষয়ে আগে থেকেই ‘স্মার্ট’

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৭৮ বার

একটি ‘স্মার্ট সিটি’ বা দেশ বলতে যা বুঝায়, তার একটা স্বাদ মেলে যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এসে স্মার্ট সিটির ধারণা নিয়ে এগোচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ অনেক আগেই ‘স্মার্ট সিটির’ স্বাদ পাচ্ছেন। একটা স্মার্ট সিটির যেসব সুযোগ-সুবিধা, সেগুলোর সবই পান যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টেটের নাগরিকরা এক ক্রেডিট কার্ড দিয়েই কেনাকাটা থেকে শুরু করে বাস কিংবা মেট্রোরেলের ভাড়া পরিশোধ সবই করতে পারেন। আর বাংলাদেশে প্রত্যেকটা যানবাহনেই আলাদাভাবে মূল্য পরিশোধ করতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে মেট্রোরেল কিংবা সিটি বাস সব নগর পরিবহনে একই ভাড়া। দূরত্ব কোনো বিষয় নয়। বাস বা মেট্রোতে একবার উঠলেই কেটে নেয় ২ ডলার ৭৫ সেন্ট, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৯০ টাকার মতো। এই টাকায় পুরো নিউইয়র্ক সিটি ঘুরে বেড়ানো যাবে। প্রতিবার নগর পরিবহনে ওঠার সময় কার্ড দিয়ে ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। মেট্রোতে বা বাসে একই কার্ড। মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোটেশন অথরিটির (এমটিএ) কার্ড থাকলে পুরো নিউইয়র্ক ঘুরে বেড়ানো যায়। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা সেখানকার নাগরিক সুবিধায় অভ্যস্ত। নিউইয়র্ক

পুলিশ ডিপার্টমেন্টে (এনওয়াইপিডি) কাজ করেন অনেক বাংলাদেশি। এখানেও স্মার্ট সিটির ছোঁয়া। পুলিশের চাকরির জন্য উচ্চতা বা বয়স বিষয় নয়। এখানে চাকরি পেতে হলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই সুযোগ মিলে যায়। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমানা নেই; অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ রয়েছে। কোনো নাগরিক ৫৯ বছরেও সরকারি চাকরিতে ঢুকতে পারেন।

এনওয়াইপিডিতে চাকরি করেন মো. রিয়াজ উদ্দীন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি ডিবি লটারির মাধ্যমে এসেছি। প্রথমে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। হোটেলে, দোকানে কাজ করেছি। ডেলিভারি ম্যান হিসেবেও কাজ করেছি। যখন পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কাজ করার সুযোগ এলো, আমি আবেদন করি। সব প্রক্রিয়া শেষ করে বসে থাকি। হঠাৎ একদিন ডাক আসে।’

রিয়াজ উদ্দীন বলেন, ‘এখানে চাকরিতে যোগদানের বয়স নেই। অবসরের বয়স আছে। কোন দেশের কোন ধর্মের কোন এলাকার মানুষ এসব এখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। চাকরির একমাত্র যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগেই বাংলাদেশের অনেক লোক কাজ করেন।’

স্মার্ট সিটির আরেকটি নজির মেলে স্বাস্থ্যসেবায় নজর দিলে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রত্যেকের রয়েছে স্বাস্থ্য বীমা (হেলথ ইন্স্যুরেন্স)। ডাক্তার দেখানো, পরীক্ষা-নীরিক্ষা, ওষুধ সব খরচই জীবনবীমার মাধ্যমে মিলবে। আর ডাক্তার দেখানোর পর রোগীর হাতে কোনো ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) যায় না। সেটি সরাসরি চলে যায় নির্ধারিত ওষুধের দোকানে। সেখানে গিয়ে আইডি বা ইন্স্যুরেন্স কার্ড দিলেই ওষুধ মিলবে।

পড়ালেখা নিয়েও নেই বাড়তি ভাবনা। যাদের বার্ষিক আয় ৪৫ হাজার ডলারের নিচে, তাদের সন্তানদের লেবেল-১০ পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়ালেখা করার সুযোগ রয়েছে। আর যাদের বার্ষিক আয় ৪৫ হাজার ডলারের ওপরে, তাদের জন্য কিছুটা ফি নির্ধারণ করা আছে। নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানদের যাবতীয় খরচ রাষ্ট্রই বহন করে বলে জানিয়েছেন সেখানে বসবাসরত মো. রিয়াজ উদ্দীন।

নিউইয়র্কের ব্রঞ্চ শহরে থাকেন নজরুল ইসলাম। তার দুই সন্তান সেখানকার ভালো একটি স্কুলে লেখাপড়া করেন। তাদের পেছনে কোনো খরচ নেই। উল্টো টাকা পান তিনি। গেল করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় টিফিনের টাকা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও ‘স্মার্ট’। ষাটোর্ধ্ব শাকের আলী বলেন, ‘আমি তো লেখাপড়া জানি না। ছেলে একবার দেখিয়ে দিয়েছে। এখন চলাচল করছি; কোনো সমস্যা হয় না। এখানে সবাই লাল বাতি দেখলেই দাঁড়িয়ে যায়; আমি দাঁড়িয়ে যাই।’ তিনি বলেন, ‘শুনেছি ঢাকায়ও লাল বাতি আছে। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে যখন গ্রামে যাই, বাতির কাজ দেখি না।’ শাকের আলী মনে করেন, ‘পদ্ধতি ঠিক হলে মানুষও মেনে নেবে। মানুষ ভালো পদ্ধতি রপ্ত করতে সব সময় আগ্রহী।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com