সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন

ব্রিটিশ আমলে বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলোকে যুগ যুগ পর একত্র করছেন যিনি

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ১৪৭ বার

‘আমি যখন কোনো নিখোঁজ পরিবারকে খুঁজে পাই তখন খুব আবেগপ্রবণ হয়ে যাই। এটা আমাকে কিছু একটা পাওয়ার অনুভূতি দেয়।’

আবেগপ্রবণ হয়ে কথাগুলো বলছিলেন শামসু দ্বীন।

তিনি ত্রিনিদাদ ও টোবেগোর একজন ভূগোল শিক্ষক। প্রায় ২৫ বছর ধরে ক্যারিবীয় অঞ্চলের তিন শ’টিরও বেশি পরিবারকে তাদের হারিয়ে যাওয়া আত্মীয়-স্বজনকে ভারতে খুঁজে পেতে সহায়তা করছেন।

তার সাফল্যের গল্পের মধ্যে রয়েছেন দু’জন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তার নিজের পরিবারের সদস্যরা।

তিনি আরো বলেন, “এটা অনেকটা বার বার প্রেমে পড়ার মতো, ’যখন আপনি জানতে পারলেন যে আপনার পরিবারের এমন সব সদস্য রয়েছে যাদের সম্পর্কে আপনি কিছুই জানতেন না’ তাৎক্ষণিকভাবে আপনার একটি নতুন সম্পর্ক তৈরি হয়।”

‘নতুন দাসপ্রথা’র শিকার হয়ে দেশত্যাগী যারা
ভারতে ব্রিটিশ শাসন, যার আরেক নাম ছিল ব্রিটিশ রাজ, ওই সময় দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছিল। কিন্তু তখন শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দিলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যজুড়ে ভারতীয় চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের ‘সস্তা শ্রম’ হিসাবে ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়।

১৮৩৮ থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যে আখের খামারে কাজ করার জন্য অনেক ভারতীয়কে ক্যারিবিয়ান, দক্ষিণ আফ্রিকা, মরিশাস এবং ফিজিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই প্রক্রিয়াটির প্রভাব এতটাই সুদূরপ্রসারী ছিল যে এর প্রভাব এখনো বিশ্বব্যাপী দেখা যায়। ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের বিশাল এক সম্প্রদায় এখনো এসব দেশে বসবাস করছেন।

যদিও এসব শ্রমিকের বেশিরভাগই স্বেচ্ছায় ওই দেশগুলোতে গিয়েছিলেন, কিন্তু সম্ভবত তারা কোনো পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছেন, সে সম্পর্কে তারা পুরোপুরিভাবে সচেতন ছিলেন না। তারা নিরক্ষর ছিলেন বলে চুক্তির শর্ত তারা বুঝতে পারেননি এবং চুক্তিপত্রে তারা শুধু টিপসই দিয়েছিলেন। ফলে অনেক শ্রমিককে জোর করে অন্য উপনিবেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

এমনকি অনেকে জানতেনও না যে কোন দেশে তারা কাজ করতে যাচ্ছেন এবং কিছু ইতিহাসবিদ চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক ব্যবহারের ব্যবস্থাকে ‘নতুন দাস ব্যবসা’ হিসাবে বর্ণনা করেন।

এখন ক্যারিবীয় অঞ্চলের এসব চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের নাতি-নাতনিরা ভারতের পথে ফিরতে শুরু করেছেন। এক শতাব্দী আগে তাদের পূর্ব-পুরুষরা যে পথ ধরে এসব উপনিবেশগুলোতে গিয়েছিলেন, এখন তাদেরই উত্তরপুরুষ ঠিক বিপরীত পথটি ধরে ভারতে ফিরছেন। এবং শামসু দ্বীনের সহায়তায় তাদের আত্মীয়-স্বজনকে খুঁজে বের করছেন, যাদের অস্তিত্ব সম্পর্কেই তাদের ধারণা ছিল না।

বালকসুলভ কৌতূহল থেকে শুরু পরিবারের সন্ধান
শামসু দ্বীনের পরিবারের অন্য সদস্যদের খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল তার নিজের পারিবারের বংশলতিকা সম্পর্কে কৌতূহল থেকে। স্কুলে পড়ার সময় তিনি এ রকম একটি তালিকা দেখেছিলেন।

শামসু দ্বীন ব্যাখ্যা করে বলেন ‘আমাদের বাড়িটি যে জমির ওপর তৈরি করা হয়েছিল সেটি কিনেছিলেন মুনরাদিন (মনিরুদ্দিন)। তিনি ছিলেন আমার দাদার দাদা। কিন্তু পরিবারের কেউ তার সম্পর্কে আমাদের আর কিছু জানাতে পারেননি।’

স্নাতক ডিগ্রি নেয়ার পর শামসু দ্বীন চাকরি নিয়ে কানাডায় চলে যান। ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো ত্রিনিদাদে ফিরে আসার পর তিনি রেড হাউস নামে এক সরকারি অফিসে যান যেটি পরবর্তীকালে আইন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়। সে সময় তার সাথে ছিলেন তার স্ত্রী, শ্যালক এবং তার ভাই। ওই অফিসের সেলারে রাখা নথিপত্রের স্তূপের মধ্যে তারা মুনরাদিনের নাম খুঁজতে থাকেন। এভাবে প্রায় চার ঘণ্টা অনুসন্ধানের পর প্রথমবারের মতো তারা আশার আলো দেখতে পান।

‘আমার জন্য সেটা ছিল এক ইউরেকা মুহূর্ত। পোকায় কাটা একটি দলিলের শেষ পৃষ্ঠায় আমরা খুঁজে পেলাম মুনরাদিনের নাম,’ হাসিমুখে সে দিনের কথা বলেন তিনি।

‘১৮৫৮ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি কলকাতা ত্যাগ করেন এবং ১০ এপ্রিল এখানে আসেন।’

এরপর মুনরাদিনের জীবনযাত্রার একটি ছবি তৈরির জন্য শামসু দ্বীন ত্রিনিদাদে পাওয়া বিভিন্ন নথির সাহায্য নেন।

‘আমরা জানতে পারি তিনি শিক্ষিত ছিলেন এবং ইংরেজিতে কথা বলতে পারতেন। মুনরাদিন আখের বাগানে কাজ করতেন। পরে তিনি অনুবাদের কাজ শুরু করেন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মুনরাদিন শিক্ষকতা শুরু করেন এবং শেষে দু’টি দোকানের মালিক হন। তার ছিল দুই স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তান। তিনি যে বাড়িতে থাকতেন পরে সেখানে তার সন্তানরাও থাকতেন। কিন্তু এক সময় আগুন লেগে বাড়িটি ধ্বংস হয়ে যায়।’

যুগ যুগ পর হারানো স্বজনদের সাথে দেখা
মুনরাদিনের মতোই এ রকম আরো অনেক চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন-যাপন করেছেন এবং মারা গেছেন দূরদেশে। মুনরাদিনকে নিয়ে গবেষণার সময় শামসু দ্বীন তার পরিবারের তিনটি শাখা খুঁজে পান।

শামসু দ্বীন বলেন, ‘আমার বাবার দাদির বাবা মোহাম্মদ মুকিত ১৮৫২ সালে কলকাতা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেন।’

মোহাম্মদ মুকিত ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি, যাকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তখন মুনরাদিনের বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর। শুধুমাত্র ১৮৫৯ সালের পর থেকে সরকারি নথিতে শ্রমিকরা যেসব গ্রাম থেকে থেকে এসেছিলেন সে সব গ্রামের নাম উল্লেখ আছে। তার মানে মুনরাদিন কোনো গ্রাম বা শহর থেকে এসেছিলেন তা কেউ জানে না।

শামসু দ্বীন যখন তার মায়ের বংশ সম্পর্কে গবেষণা শুরু করেন, তখন তিনি দেখতে পান যে তার পরিবারের সদস্যরা ১৮৬৫, ১৮৬৮, ১৮৭০ এবং ১৮৭৫ সালের কিছুটা পরে এসেছেন। যার অর্থ, যে গ্রামগুলো থেকে তারা এসেছিলেন তিনি সেগুলোকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন।

‘আমার নানার নানী জোসেমিয়া ১৮৭০ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২৬ নভেম্বর কোনো এক সময়ে উইল্টশায়ার জাহাজে চেপে যাত্রা শুরু করেছিলেন এবং আমি উত্তর প্রদেশে তার ভাই জুমান জোলার বংশধরদের খুঁজে পেয়েছি।’

যদিও শামসু দ্বীন ভারতীয় জমিজমার নথিপত্র থেকে জোসেমিয়াকে খুঁজে পাননি। কিন্তু একটি ডেথ-রেজিস্টার দেখে এবং সেখান থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করে তিনি তার পরিবারের হারিয়ে যাওয়া শাখার অংশবিশেষ খুঁজে পেতে সক্ষম হন।

তারপর তার পরিবারের শেষ সদস্য, যিনি ১৮৭২ সালে ভারত থেকে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসাবে ক্যারিবিয়ানে এসেছিলেন, সেই ভোনজি’র উত্তরপুরুষদের সাথে দেখা করেছিলেন। ভোনজি ত্রিনিদাদে এসেছিলেন তার মা-বাবা এবং তিন ভাই-বোনের সাথে, মাত্র সাত বছর বয়সে। এরপর শামসু দ্বীন ক্যারিবিয়ান এবং ভারত উভয় দেশেই ভোনজি’র আত্মীয়দের সাথে দেখা করেন।

‘আমার কাছে ভোনজি’র একটি মাত্র ছবি আছে, তখন আমার বয়স তিন বছর। তিনি তার নাতি-নাতনি দেখে যেতে পেরেছিলেন। ধারণা করা হতো, মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ১১৫ বছর। কিন্তু নথিপত্র ঘেঁটে আমি দেখেছি তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর ’

শখ যখন পরিণত হলো ক্যারিয়ারে
শামসু দ্বীন কর্মজীবনে ছিলেন ভূগোলের শিক্ষক। কিন্তু তার এই শখ মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে শুরু করে। তাই ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ১০টি হিন্দু এবং ১০টি মুসলমান পরিবারের স্বজনদের খুঁজে বের করার জন্য তিনি একটি বৃত্তি পান।

এরপর চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের কমপক্ষে তিন শ’টি পরিবারকে তিনি সাহায্য করতে গিয়েছিলেন। পরে এটা তার পেশা হয়ে দাঁড়ায়। বংশ-বৃত্তান্ত সম্পর্কে তিনি একজন বিশেষজ্ঞে পরিণত হন, এবং ত্রিনিদাদ এবং ভারত দেশের গবেষণা দলকে সহায়তার জন্য তিনি অর্থ পান।

ত্রিনিদাদ ও টোবেগোর দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাসদের পাণ্ডে এবং কমলা প্রসাদ বিশ্বেশ্বরের পারিবারিক পুনর্মিলনে তিনি সরাসরিভাবে সাহায্য করেছেন।

যদিও ডিজিটাল মানচিত্র এবং ঐতিহাসিক রেকর্ডগুলোতে ভালো অ্যাক্সেসের সুবাদে এ ধরনের অনুসন্ধান চালানো এখন অনেকটাই সহজ। কিন্তু শামসু দ্বীন বলেন, এখনো বহু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এবং তার কাজে সাফল্যে হার শতকরা ৮০ ভাগ বলে তিনি মনে করেন।

শামসু দ্বীন ব্যাখ্যা করেন ‘সব মানুষের বংশ পরিচয় আমি করতে পারিনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাকে যে সব নথি দেয়া হয়েছে তার তথ্যে ভুল ছিল।’

নতুন পথ চলা শুরু জীবনের
দুর্ভাগ্যবশত, কিছু চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক ভারত থেকে ত্রিনিদাদে যাওয়ার পথেই মারা যান। এবং যারা শেষ পর্যন্ত হাজির হতে পেরেছিলেন তারা প্রায়ই কঠোর এবং চ্যালেঞ্জিং জীবনের মুখোমুখি হন। তবে তাদের মধ্যে কিছু সাফল্যের গল্পও রয়েছে।

শামসু দ্বীন ব্যাখ্যা করেন, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অনেক শ্রমিক স্বেচ্ছায় ত্রিনিদাদে রয়ে গিয়েছিলেন এবং মুক্ত মানুষ হিসেবে বসবাস করেছিলেন।

ত্রিনিদাদের এক দম্পতি বালি এবং লীলা মহারাজকে সাহায্য করার কথাও তিনি মনে করতে পারেন। তাদের পারিবারিক বংশলতিকা অনুসন্ধান করে তিনি খুঁজে পান সাবেক চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক পল্টু প্রসাদকে, যিনি ভারতে তার নিজ গ্রামে ফিরে গিয়ে জমি কিনেছিলেন এবং সেই জমির ওপর স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শামসু দ্বীন এমনকি ওই দম্পতিকে স্কুলটি ঘুরে দেখারও ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

শামসু দ্বীন বলেন, এ ধরনের ঘটনা এবং পারিবারিক পুনর্মিলন থেকে তিনি অনুপ্রাণিত হন, যেমনটা ঘটেছিল ডেভিড লাখান এবং তার পরিবারের ক্ষেত্রে।

ত্রিনিদাদের নাগরিক ৬৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি বলছেন, ‘আমার দাদা কোথা থেকে এসেছিলেন স্কুল জীবন থেকেই তা জানতে আমি খুবই আগ্রহী ছিলাম।’

তিনি বলেন, ১৮৬৮ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে তার দাদা ত্রিনিদাদে গিয়েছিলেন। একটি নথিতে তার নাম শুধু লেখা ছিল ‘লাখান’। কিন্তু এত দূরদেশে আসার সিদ্ধান্তের পেছনে আমার দাদার মনোবল এবং দৃঢ়তা সম্পর্কে জানতে চাইতাম।’

শামসু দ্বীন ত্রিনিদাদের জাতীয় আর্কাইভের কিছু ইমিগ্রেশন কাগজপত্র খুঁজে পান যেখানে লাখানের ভাই, বাবা, তার জাত এবং তার গ্রামের নাম লেখা ছিল। ভারতে তার পরিচিত লোক ব্যবহার করে শামসু দ্বীন ডেভিড লাখানের দীর্ঘ দিনের হারিয়ে যাওয়া আত্মীয়দের খুঁজে করতে সফল হন। ২০২০ সালে তিনি ভারতে একটি পারিবারিক পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করেন।

ওই পরিবারের জন্য ১৩২ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটি ছিল এ ধরনের প্রথম কোনো ঘটনা।

আবেগপূর্ণ পুনর্মিলন
ডেভিড লাখান বলেন, ‘স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়ার ঘটনা ছিল ওই ঘটনা। সম্পর্কের পরিচয় ছিল খাঁটি। আমি তো বেশ কয়েকবার কেঁদেই ফেলেছিলাম, নিজের পরিবার সম্পর্কে জানতে পারা ছিল দুর্দান্ত এক অনুভূতি।’

লাখানের আত্মীয়-স্বজনেরা তাদের গ্রামে যাওয়ার আগে ভারতের পবিত্র শহর কাশীতে তার সাথে প্রথম দেখা করে।

ডেভিডের স্ত্রী গীতা লাখান বলেন, ‘আমরা আশাই করিনি যে পুরো গ্রাম বেরিয়ে এসে আমাদের অভ্যর্থনা জানাবে। আমাদের গলায় মালা পরিয়ে দেবে।’

এরপর তারা লাখানের ভাইয়ের নাতি-নাতনিদের সাথে দেখা করেন। এরা গাজীপুরে লাখান যে বাড়িটিতে থাকতেন সেই জায়গার ওপর নতুন বাড়ি তৈরি করেন।

বাস্তবে দেখা হওয়ার আগেই পরিবারগুলো ভিডিও বার্তার মাধ্যমে একে অপরের সাথে কথা বলেছে। আর এখন অনুবাদের অ্যাপ ব্যবহার করে তারা ভাষা-গত বাধাও কাটিয়ে উঠেছে এবং নিজেদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।

গীতা লাখান বললেন, তার ভারতীয় আত্মীয়দের সাথে তিনি অনেক মিল খুঁজে পেয়েছেন এবং বিশ্বাস করেন যে এটা ঘটেছে কারণ চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকরা তাদের সংস্কৃতি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমার মা যে তরকারি রান্না করতেন তার সুগন্ধ ভারতে আমাদের মতোই। আমরা একই গান গাই। আমার মা-বাবা হিন্দিতে কথা বলতেন। আমি হিন্দি পারি না, কিন্তু আমি হিন্দিতে প্রার্থনা করি।’

গীতা এবং ডেভিড লাখান বলেন, তারা এখন তাদের সাত বছর বয়সী নাতিকে তাদের ভারত ভ্রমণের গল্প করেন। তাদের আশা যে সেও তার ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহী হবে।

আর শামসু দ্বীন অবসর নেয়ার পরেও তিনি সেই কাজটি করে যাচ্ছেন যা তাকে এখনো উত্তেজিত করে তোলে। ১৯৯৬ সালে তিনি ছয় মাসের জন্য ভারতে যান এবং আরো ১৪টি পরিবারের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালান।

শামসু দ্বীনের বয়স এখন ৭৬ বছর। তিনি বলেন, যে কাজ আমি করেছি সেটা এখনো আমায় ‘সুখ আর সুস্বাস্থ্য’ এনে দেয়।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিটি কেস হচ্ছে একেকটি ধাঁধার মতো। দু’টি কেস কখনই এক রকম হয় না। যতক্ষণ আমার দেহে শক্তি থাকবে, আমার স্মৃতিশক্তি কাজ করবে, এটা আমি করে যাব। এটা আমাকে বাঁচতে সাহায্য করে।’

কিন্তু নিজের পারিবারিক ইতিহাস জানার যে প্রচেষ্টা, সে সম্পর্কে তিনি কী বলবেন?

‘ত্রিনিদাদ ও টোবেগো হচ্ছে আমার দেশ। আমার সন্তান ও নাতি-নাতনিরা কানাডায় থাকে। ত্রিনিদাদ ও ভারত দু’টি দেশের সাথেই তারা বংশগত এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।

শামসু দ্বীন বলেন ‘আমি বিশ্বাস করি পুরো মানবজাতির মতোই, আমরা সবাই অভিবাসী। আফ্রিকা থেকে শুরু করে ভারত, তারপর ত্রিনিদাদ, তারপর কানাডা এবং এরপর কোথায়, তা জানি না। কিন্তু আমাদের অস্তিত্বের গভীরে বাঁধা রয়েছে ভারতীয় ঐতিহ্যের বিনি সুতো।’

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com