“দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশিদের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এর ৭৩ স্ট্রিটের নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ আমেরিকার প্রতি। আমেরিকানদের প্রতি। বিশেষ করে সিটি কাউন্সিল মেম্বার শেখর কৃষ্ণান নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিটের নাম প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন লাভ করেছে। আমেরিকায় বাংলাদেশিদের দৃষ্টান্তমূলক এক অর্জন।” এ কথা বলেছেন, নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রিয় ব্যক্তিত্ব জয় বাংলাদেশ ইনক্ এর প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমা-ার আবু জাফর মাহমুদ। আনুষ্ঠানিকভাবে কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান ও নিউইয়র্ক সিটির অন্যান্য কর্মকর্তারা বাংলাদেশ স্ট্রিট উদ্বোধনের পর তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সাংবাদিকদের কাছে উচ্ছ্বাসমাখা প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।
নিউইয়র্কে হোম কেয়ার সেবার পথিকৃৎ, বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের চেয়ারম্যান এ- সিইও এবং জয় বাংলাদেশ ইনক্ এর প্রতিষ্ঠাতা আবু জাফর মাহমুদ বলেছেন, পৃথিবী যতদিন থাকবে, ততদিন বাংলাদেশ থাকবে। আর বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন থাকবে এই বাংলাদেশ স্ট্রিট।
আবু জাফর মাহমুদ জ্যাকসন হাটস এর বাংলাদেশ স্ট্রিটটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের র্যালী নিয়ে উপস্থিত হন। র্যালীটি জ্যাকসন হাইটস এর ৭২-২৬ নাম্বার বাংলা সিডিপ্যাপ অফিস থেকে বের হয়ে ৭৩ স্ট্রিটে নির্ধারিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে শেষ হয়। সেসময় র্যালী থেকে ‘জয় বাংলাদেশ’ ‘জয় আমেরিকা’ ‘জয় স্বাধীনতা দিবস’ শ্লোগান দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বীরত্ব, গর্ব ও অর্জন সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ বক্তব্যে নিউইয়র্ক সিটির ২৫ ডিস্ট্রিক্ট এর কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান বলেন, নিউইয়র্কে ভারতীয় আমেরিকান সমাজের প্রথম জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার গুরুত্ব ও তাৎপর্য গভীরভাবে উপলব্ধি করি। আমি জানি, স্বাধীনতার পেছনে কত দীর্ঘ ইতিহাস, কত বীরত্বগাথা ও ত্যাগের দৃষ্টান্ত রয়েছে। আজকের এই উপলক্ষটি আমার অফিস ও আমার কামউনিটির জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটি সারা পৃথিবীতেই পরিচিত। এই জ্যাকসন হাইটস এ তারা অনেক বেশি উচ্চকণ্ঠ।
এখানকার কমিউনিটির প্রতিনিধিত্বশলি ব্যক্তিবর্গ গৌরবোজ্জল ভূমিকা রেখে চলেছেন। বাংলাদেশিরা তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি দায়িত্বশীল। তারা ভাষা ও সংস্কৃতিকে নিউইয়র্কের জীবনধারার সঙ্গে যুক্ত করতে সমর্থ হচ্ছে। বাংলাদেশিদের আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে পূর্ব পুরুষদের গুুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, একটি রাস্তার নামকরণ ছোটো কোনো বিষয় নয়, এটি নিউইয়র্কের গোটা ল্যান্ডস্কেপের সঙ্গে যুক্ত একটি বিষয়। এখানে এই সড়কে উপস্থিত হলে, বাংলাদেশ স্ট্্িরট নামটি দেখা যাবে, এর মধ্য দিয়ে ভেসে উঠবে একটি ইতিহাস। আর এই নামকরণের সঙ্গে এই কমিউনিটির প্রত্যেকটি মানুষের অবদান যুক্ত।
শেখর কৃষ্ণান বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদের নামোল্লেখপূর্বক সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, তাদের অবদান যুগ যুগ ধরে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশ স্ট্রিট। এটি সেই বাংলাদেশ স্ট্রিট, যে দেশ বাংলা সংস্কৃতি, ভাষা আন্দোলন, বাঙালির ইতিহাস ধারন করে। তিনি বলেন কমিউনিটির শক্তি কতখানি হতে পারে, তা বাংলাদেশি আমেরিকানরা প্রমাণ করেছেন।
বাংলাদেশি কমিউনিটির কৃতি ব্যক্তিত্ব ডেমোক্র্যাট রাজনীতিক মিলন রহমানের উচ্ছ্বাসমাখা সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং, সিনেট ডেপুটি লিটার মাইকেল জিনােরিস, সেম্বলি মেম্বার ক্যাটালিনা ক্রুজ, মাইকেল জিনারো, স্টেট এসেমব্লিওম্যান জেসিকা গোনজালেজ, সিটি কাউন্সিলওম্যান লিন্ডা লি প্রমুখ। বক্তারা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশি আমেরিকানদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এমন দিনে নিউইয়র্কের বাংলাদেশিরা অসামান্য একটি অর্জনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।
বক্তৃতা ও আলোচনা পর্ব শেষে জ্যাকসন হাইটস এর ৭৩ স্ট্রিট ফলকের পাশে সবুজের ওপর সাদা রঙে লেখা ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ ফলকটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করেন কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণানসহ নিউইয়র্ক রাজ্য ও সিটির প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গ। সেসময় শত শত বাংলাদেশি উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। শেখর কৃষ্ণানকে তারা কাঁধে তুলে নেন। শেখরও তখন দুই হাত উঁচুতে তুলে ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ ধ্বনি তোলেন দ্বিগুণ উচ্ছ্বাসে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জফর মাহমুদ, আজ আমরা কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছি। আজ আমাদের দলমতের উর্ধে ওঠার দিন। আজ আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকা উচিৎ নয়। আমরা সকল বাংলাদেশিরা সর্বোচ্চ কৃতজ্ঞতা জানাই আমেরিকা সরকার থেকে শুরু করে বাংলাদেশ স্ট্রিট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি মানুষের প্রতি।