নিউইয়র্কের ওজনপার্কে বাংলাদেশী শাহাব উদ্দীন (৭২) নামের এক বাংলাদেশী দূর্বৃত্তের হামলায় আহত হওয়ার পর গত এক সপ্তাহে একজন নারী সহ আরো ২জন বাংলাদেশী আবার দূর্র্বত্তের হামলার শিকার হয়েছেন। আহত ঐ নারীর নাম রাবেয়া বেগম এবং আহত অপর বাংলাদেশীর নাম সৈয়দ আজিজ আহমেদ। গত ৯ ফেব্রুয়ারী রোববার ওজনপার্কে শাহাব উদ্দীন হামলার শিকারের পর গত গত ১৩ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার ব্রঙ্কসে ছুরিকাঘাতে আহত হন রাবেয়া বেগম। এর দু’দিন পর অর্থাৎ গত ১৫ ফেব্রুয়ারী শনিবার ওজনপার্কে দূর্বৃত্তের হামলায় আহত হন সৈয়দ আজিজ আহমেদ। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে কয়েক মাসের ব্যবধানে ওজনপার্ক এলাকায় একাধিক হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশীদের ওপর একের পর এক এমন ঘটনায় উদ্বীগ্ন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। সাম্প্রতিককালে নিউইয়র্কে প্রায়ই দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। কয়েক বছর অগে ওজনপার্কে দূর্বৃত্তের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা নজমুল ইসলাম, ইমাম আকুঞ্জী ও তার সহযোগি মারা যান। গত বছর আরো এক বাংলাদেশী হামলার শিকারে মারা যায়। এছাড়াও অতীতে বাংলাদেশী ফটো সাংবাদিক মিজানুর রহমান সহ বেশ কয়েকজন হতাহত হন। একের পর এক এ ধরণের ঘটনা বন্ধে প্রবাসীরা আইন-শৃংখলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ দাবী করেছেন।
জানা গেছে, নিউইয়র্কে ব্রঙ্কসে সাবওয়ে ট্রেনের ভিতরেই আক্রান্ত হলেন বাংলাদেশী নারী রাবেয়া বেগম। গত ১৩ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার ব্রঙ্কসের মটহ্যাভেন এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারী রাবেয়া বেগমের কপালে, ঘাড়ে এবং বাহুতে ছুরিকাঘাত করে। এসময় রাবেয়া সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। গুরুতর আহত অবস্থায় রাবেয়াকে পুলিশ উদ্ধার করে লিংকন হাসপাতালে ভর্তি করে। পুলিশ ও আহত রাবেয়া এবং তার ভাই জানায়, রাবেয়া ব্রঙ্কসের হারলেম এলাকায় একটি ডানকিন ডোনাটের দোকানে কাজ করেন। গত ১৩ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে রাবেয়া তার কর্মস্থল থেকে পার্কচেষ্টার এলাকার তার বাসায় ফেরার জন্য ৬ ট্রেনে চড়েন, ব্রুক এভিনিউর আগে আচমকাই ঐ ব্যক্তি রাবেয়ার উপর ধারালো চাকু দিয়ে হামলা চালায়। এসময় ঐ ব্যক্তি রাবেয়ার উপর উপর্যপুরি আঘাত করতে থাকলে রাবেয়া সাহায্যের জন্য চিৎকার করে কিন্তু কেউ তাকে সাহায্য করেনি। পরে আক্রমণকারী ব্রুক এভিনিউ স্টেশনের নেমে পালিয়ে যায়। এ নিয়ে পুলিশ তাৎক্ষকিনভাকে হামলাকারীকে গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করলে তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। উদ্ধার হয়নি আক্রমনে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও। এ নিয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার এনওয়াইপিডির ক্রইম স্টপার বিভাগ থেকে টুইটারে একটি ভিডিউ প্রকাশ করেছে যাতে সন্দেহভাজন আক্রমনকারী ব্যক্তি পুরোপুরি কালো পোষাক এবং মাথায় হাল্কা রংয়ের টুপি পরিহিত দেখানো হয়েছে। ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে পুলিশের এনওয়াইপিডিক্রাইম স্টপারস ডট কম, অথবা ১-৮০০-৫৭৭-৮৪৭৭ নম্বরে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। আহত রাবেয়া বেগম জানান, তিনি আগে কখনও হামলাকারী ওই লোকটিকে দেখেননি। হামলার কারণও তিনি জানেন না বলে জানান। অবিবাহিত রাবেয়া বেগম ৬ মাস আগে অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তিনি ব্রঙ্কসের সেন্ট লরেন্স এলাকায় তার এক ভাই সহ বাবা-মা’র সাথে বসবাস করছেন। তাদের দেশের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার নিমাইদল গ্রামে।
এদিকে রাবেয়া বেগমের উপর হামলার খবর পেয়ে বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এন মজুমদার ও বাংলাদেশী কমিউনিটি অব নর্থ ব্রঙ্কসের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর চৌধুরী জগলুল সহ বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ তার বাসায় ছুটে যান।
অপরদিকে আরেক বাংলাদেশী সৈয়দ আজিজ আহমেদ গত ১৫ ফেব্রুয়ারী শনিবার রাত ৮টার দিকে ওজনপার্কের ৭৭ স্ট্রীট ও লিবার্টি এভিনিউতে হামলার শিকার হন। এতে তার মাথা ফেটে যায় এবং মুখে আঘাত পান। ঘটনার পরপরই তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ওজনপার্কেই বসবাস করেন। তার দেশের বাড়ী সিলেট। ঘটনার সময় তিনি বাসায় ফিরছিলেন। এদিকে একের পর এক হামলার ঘটনায় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের নিরব ভূমিকা সচেতন প্রবাসীদের মাঝে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে তাদের নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়ে। আলোচনা হচ্ছে কমিউনিটি বোর্ডের প্রতিনিধিরা কি করছেন। তাদের দাবী সময় থাকতেই কমিউনিটি নেতাদের এগিয়ে আসা উচিৎ। প্রয়োজন পুলিশ আর সিটি প্রশাসনের সাথে জরুরী বৈঠক করে ঘটনাগুলো জানানো এবং প্রতিকারে ব্যবস্থা করা।