শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন

১৯ বছর পরে জানা গেল বাবাই হত্যাকারী

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৬৮ বার

রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় হত্যার ১৯ বছর পরে খোলাসা হয়েছে, মেয়ের হত্যাকারী ছিলেন বাবা। আর এই বাবাই ছিলেন ওই হত্যা মামলার বাদি। প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে মেয়েকে হত্যা করে দুই স্ত্রীকে নিয়ে এমন নাটক সাজিয়ে ছিলেন তিনি। হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর পরে মেয়েটির বাবা আকসেদ আলী সিকদার মারা গেলেও আদালতে দেয়া তার দুই স্ত্রীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে আসে।

মঙ্গলবার দুপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রাজশাহী অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পিবিআই রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ।

আবুল কালাম আযাদ বলেন, প্রায় ১৯ বছর আগের ঘটনা এটি। ২০০৪ সালের ১০ জুন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার লক্ষ্মীনগর এলাকায় ১৩ বছরের রেবেকা খাতুনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ২০ জনকে আসামি করে বাঘা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রেবেকার বাবা আকসেদ আলী সিকদার। যদিও মামলার তদন্তের শেষ পর্যায়ে উঠে এসেছে প্রতিপক্ষ মোল্লা বংশকে ফাঁসাতে আকসেদ আলী নিজেই ১৩ বছরের মেয়েটিকে হত্যা করেছিলেন এবং মোল্লা বংশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আকসেদ আলী সিকদার পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, ঘটনার রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে তিনি দুই স্ত্রী ভায়েলা খাতুন (৬৫) ও আফিয়া বেওয়ার (৬০) সাথে বসে গল্প করছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন যে প্রায় ৫০ জন দুষ্কৃতিকারী তার বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে। এ সময় স্ত্রীদের পরামর্শে আকসেদ আলী বাড়ির কিছু দূরে একটা মাঠিয়ালে (ছোট পুকুর) লুকিয়ে পড়েন। দুষ্কৃতিকারীরা তার বাড়ি থেকে চলে গেলে তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। এসে দেখেন যে তার স্ত্রীদের হাত রক্তাক্ত এবং ছুরির আঘাতে রেবেকা খাতুনের পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গেছে। ঘটনাস্থলেই রেবেকার মৃত্যু হয়।

পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, পরে মেয়েকে হত্যার দায়ে মামলা করেন আকসেদ আলী সিকদার। ওই মামলায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করেন তিনি। মামলাটি প্রথম কয়েক দিন বাঘা থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরে মামলাটি রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তদন্তের জন্য নেয়। তারা তদন্ত শেষে ২০০৪ সালের নভেম্বরে মামলায় নাম উল্লেখ করা ২০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। আদালতে ১৮ বছর ধরে মামলাটির কার্যক্রম চলছে। পরে আদালত মনে করেছে, এই মামলটি আরো তদন্ত হওয়া দরকার। তাই ২০২২ সালের ১৬ মে রাজশাহী পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয় আদালত।

তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরপরে পিবিআই তদন্ত শুরু করে। পিবিআইয়ের কাছে একটা বড় প্রশ্ন ছিল যে গ্রামে রাত সাড়ে ১১টা মানে গভীর রাত। এ সময় ৫০ জন লোক এসে একটা ১৩ বছরের মেয়েকে মেরে চলে গেল, বাড়ির টিনে মাত্র দুইটি কোপের চিহ্ন ছিল, এটা কতটা বাস্তব! এই প্রশ্নকে সামনে রেখে মামলাটির তদন্ত শুরু করে পিবিআই রাজশাহীর উপ-পরিদর্শক (এসআই) (নিঃ) খায়রুল ইসলাম। তদন্ত করতে গিয়ে একটা পর্যায়ে বাদি আকসেদ আলী সিকদারের স্ত্রী ভায়েলা খাতুন ও নিহত রেবেকা খাতুনের মা আফিয়া বেওয়া আদালতে স্বীকার করেন যে আসামিদের ফাঁসানোর জন্য তাদের স্বামী আকসেদ আলী রেবেকাকে হত্যা করেছে। খুনের সময় বাধা দিতে গেলে তার দুই স্ত্রীর হাতের বিভিন্ন জায়গায় কোপ দেন তিনি। হত্যার মূল কারণ ছিল, প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো। যদিও তাদের নিজেদের মধ্যে জায়গা জমি নিয়ে দীর্ঘ দিনের মামলা চলমান রয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ বলেন, তারা গত ৯ এপ্রিল আদালতের কাছে স্বেচ্ছায় স্বীকার করেছেন যে আকসেদ আলী তার মেয়েকে হত্যা করেছেন। যদিও আসামি আকসেদ আলী মারা গেছেন। আসামির দুই স্ত্রী এখন এ মামলার সাক্ষী।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com