শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের যেমন কিছু সাফল্য আছে, তেমনি ব্যর্থতাও অনেক। শিক্ষা খাতে সরকারের উদ্যোগের শেষ নেই। খুব স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে, এরই মধ্যে প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ। জেন্ডার সমতা নিশ্চিত হয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে। সরকার এখন মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করায় জোর দিয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে কয়েক বছর ধরে ঝরে পড়ার হার একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। এখনো ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি ঝরে পড়ছে। এটি দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতাই তুলে ধরে। ঝরে পড়ার সঠিক কারণগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য নিয়ে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রাথমিকে ২০১৯ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ১৭.৯ শতাংশ। ২০০৯ সালে মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার ছিল ৫৫.৩১ শতাংশ। উচ্চ মাধ্যমিকে ২০১৮ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ১৯.৬৩ শতাংশ, ২০১৭ সালে ১৯.৮৯ শতাংশ, ২০১৬ সালে ২০.০৮ শতাংশ, ২০১৫ সালে ২০.৭ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ২১.৩৭ শতাংশ। ২০০৯ সালে এই স্তরেও ঝরে পড়ার হার ছিল ৪২.১১ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার নানা কারণ বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা বলছেন, মেয়েদের ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ বাল্যবিয়ে ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। অন্যদিকে শিক্ষাব্যয় ও কর্মমুখী শিক্ষার অভাবেও শিক্ষার্থীরা ঝরে যাচ্ছে। মাধ্যমিকে বেশির ভাগ স্কুলই এমপিওভুক্ত; কিন্তু সেখানকার শিক্ষকরা ততটা দক্ষ নন। এ ছাড়া দুর্বোধ্য করে রাখা হয়েছে পাঠ্য বইয়ের বিষয়বস্তু। একাধিক বিষয় ও অধ্যায় যা কখনোই কাজে লাগে না, তা দিয়ে ভারী করা হয়েছে পাঠ্য বই। এরপর আবার দুর্বোধ্য সৃজনশীলের চাপে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারা ঝরে পড়ছে তা খুঁজে দেখা দরকার। আর সেখানেই উত্তরটা আছে। অতিদরিদ্র, বিশেষ করে নগরদরিদ্র অথবা ভাসমান জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী শিশুরা ঝরে পড়ছে। প্রতিবন্ধীদের স্কুলে আনা হলেও তারা টেকে না। দু-একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার হার ভালো। কিন্তু অন্যান্য জনগোষ্ঠীর অবস্থা খুবই খারাপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝরে পড়ার হার কমাতে সবার জন্য এক পরিকল্পনা করলে হবে না। চাহিদাভিত্তিক পরিকল্পনার পাশাপাশি বিনিয়োগটাও সেভাবে হওয়া উচিত।
শিক্ষা যেন সর্বজনীন হয়, তা রাষ্ট্রকেই দেখতে হবে। মেয়ে ও ছেলের পার্থক্য, ধনী ও দরিদ্রের পার্থক্য, গ্রাম ও শহরের পার্থক্য—এসব যদি খুব বেশি হয়ে যায়, তাহলে শিক্ষার সর্বজনীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি শিক্ষা যাতে ভীতিকর না হয়ে আগ্রহের বিষয় হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আশা করব, এসব বিষয় বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া বন্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।