মাহে রমজানুল মোবারকের আজ ঊনত্রিশ তারিখ। হতে পারে আজই এ মাসের শেষ দিন। তা ছাড়া নয়া দিগন্তসহ দৈনিক পত্রিকাগুলোতে আজ থেকে ঈদ উপলক্ষে ছুটি শুরু হয়েছে। আজকের সংখ্যাই ঈদপূর্ব সংখ্যা। তাই পাঠকদের কাছে যাওয়ার সুযোগও আজই শেষ।
মাহে রমজানের পর আসে মুসলিম মিল্লাতের বার্ষিক প্রধান দু’টি আনন্দ উৎসবের একটি ঈদুল ফিতর। ঈদ অর্থ আনন্দ। আর ফিতর বলতে রোজার সমাপ্তি কিংবা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া। হাদিসের গ্রন্থগুলোয় বর্ণিত আছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদিনায় এসে দেখলেন এখানকার বাসিন্দারা বছরের দু’টি দিন আনন্দ উৎসবে কাটায়। যদিও এর আগে এখানকার অনেকে মুসলমান হয়েছিল, কিন্তু প্রথাটি চালু ছিল। যেহেতু এতে পৌত্তলিকতার ছাপ ছিল এ জন্য মুসলমানদের তাতে যোগ দেয়ার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জানালেন, আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের আরো উন্নত ও উত্তম দু’টি উপলক্ষ দান করেছেন আনন্দ উৎসবের জন্য। একটি রমজান মাসের শেষে শাওয়ালের প্রথম তারিখে। আরেকটি জিলহজ মাসের দশম তারিখে বা হজের পরের দিন। দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারার জন্য দু’টি ঈদ নির্ধারিত হয়েছে।
প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী নির্দিষ্ট দিনে আনন্দ করে থাকে। সাধারণত দেখা যায় যারা ধনী, তারা আনন্দ-ফুর্তি করে, গরিব-অসহায়রা তা থেকে বঞ্চিত থাকে। কিন্তু ইসলামে ঈদের খুশি শুধু ধনীরা পাবে তা নয়, বরং গরিব-অসহায়রাও ঈদের খুশি ভোগ করবে। তাই ঈদুল ফিতরের সময় ধনীদের ওপর সাদাকাতুল ফিতর অত্যাবশ্যক করা হয়েছে।
রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস মাহে রমজান। যারা মাহে রমজানকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছেন, তাদের জন্য ঈদ খুশির বার্তা নিয়ে আসে। রমজানের সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে না পারা নিতান্ত হতভাগা হওয়ার আলামত। অন্য দিকে যারা অবারিত রহমতের মাসটিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হন, তাদের নিয়ে গর্ব করেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের শেষে মুমিন বান্দারা যখন তাকবির পাঠ করতে করতে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন, আল্লাহ তায়ালা তখন ফেরেশতাদের বলেন, যে বান্দা তার কর্তব্য সম্পন্ন করে, তার প্রতিদান কী হওয়া উচিত? ফেরেশতারা বলেন, তার প্রতিদার পূর্ণ মাত্রায় দেয়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দারা তাদের ওপর আরোপিত কর্তব্য পালন করে এখন আমার মহিমা ঘোষণা করতে করতে বের হয়েছে। আমি আমার মর্যাদা ও প্রতিপত্তির শপথ করে বলছি, তাদের দোয়া অবশ্যই কবুল করব। তারপর আল্লাহ ঘোষণা করেন, তোমরা ফিরে যাও। আমি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের পাপরাশিকে সওয়াবে পরিণত করলাম। (বায়হাকি শরিফ)
ঈদের দিনটি আমাদের জন্য আনন্দের দিন। মনের সব কালিমা দূর করে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, মান-অভিমান বিসর্জন দিয়ে সবার দেহ-মন এক হওয়া ঈদের আনন্দ। নিজের মনের হিংসা, ঘৃণা, লোভ, অহঙ্কার, অহমিকা, আত্মম্ভরিতা, আত্মশ্লাঘা, রাগ, ক্রোধ, বিদ্বেষসহ যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করার আনন্দ। সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির আনন্দ। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো যখন সে ইফতার করে; দ্বিতীয়টি হলো যখন সে তার মাবুদ আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে। (বুখারি)।
ঈদের দিনে খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, মিসওয়াক করা, মহল্লার (এলাকার) মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ পড়া, গোসল করা, সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা, আতর ব্যবহার করা, নামাজের আগে সদাকাতুল ফিতর আদায় করা, ঈদুল ফিতর নামাজের আগে কিছু মিষ্টান্ন খাওয়া, তিন, পাঁচ বা বেজোড়সংখ্যক খেজুর বা খুরমা খাওয়া, সকাল সকাল ঈদের নামাজ পড়ার জন্য যাওয়া, ঈদের নামাজ ঈদগাহে গিয়ে পড়া সম্ভব না হলে মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়া, আস্তে আস্তে নি¤œলিখিত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ, ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া, এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা, শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে খুশি প্রকাশ করা প্রভৃতি ঈদের সুন্নত। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর সুসংবাদের অধিকারী করুন। প্রকৃত খুশি ও উভয় জগতের কল্যাণ আমাদের নসিব করুন। সবাইকে ঈদ মোবারক।