বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা জানতে মেডিক্যাল রিপোর্ট চেয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া অ্যাডভান্স (উন্নত) ট্রিটমেন্টের জন্য খালেদা জিয়া সম্মতি দিয়েছেন কি না, দিলে চিকিৎসা শুরু হয়েছে কি না এবং শুরু হলে বর্তমানে কী অবস্থা, তা জানাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) ভিসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রোববার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহুরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি গ্রহণ করে এ আদেশ দেন।
আদেশে আদালত আগামী বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ মেডিক্যাল রিপোর্ট দিতে বলেছেন। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। বুধবার মেডিক্যাল প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য থাকবে। আদালত বলেছেন, বৃহস্পতিবার এ মামলা পরবর্তী আদেশের জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
রোববার শুনানির শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের একমাত্র গ্রাউন্ড হলো- খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। আমরা একমাত্র স্বাস্থ্যগত কারণে আবার আপনার (এই আদালতের) কাছে এসেছি। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা আগের থেকে অনেক খারাপ। তিনি পাঁচ মিনিটও দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। নিজ হাতে খেতেও পারেন না। খাবার খেলেও তিনি প্রায়ই বমি করেন। তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করে এসে গণমাধ্যমকে বলেছেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এভাবে থাকলে উনার কখন কী হয়ে যায় তা বলা যাচ্ছে না। তাই আমরা তার জামিন প্রার্থনা করছি। শুনানির একপর্যায়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রয়োজনে তার স্বাস্থ্যগত সর্বশেষ অবস্থা কী, সে বিষয়ে একটা প্রতিবেদন চাইতে পারেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জামিনের বিরোধিতা করে শুনানিতে বলেন, এর আগে একই আবেদন এই আদালতে করা হয়েছে এবং সেটা আপনার আদালত এবং আপিল বিভাগে খারিজ হয়েছে। আপিল বিভাগে খারিজ হওয়া আবেদন এবং আজকের আবেদন পুনরাবৃত্তি মাত্র। তিনি বলেন, আপিল বিভাগ তো বলেছেনই উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তার সম্মতিতে সেটা করা হবে। এ ছাড়া যে ওষুধ উনার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন তা বাংলাদেশে আছে।
এরপর হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়ে শুনানি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন।
শুনানির সময় আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, মো: আক্তারুজ্জামান, জিয়া উদ্দিন জিয়া, সগীর হোসেন লিয়ন, সালমা সুলতানা, গোলাম আকতার জাকির প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
এ ছাড়া খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি দেখতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আদালতে আসেন।
আদালতের আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা যতটুকু জানি, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া সম্মতি দিয়েছেন। সে অনুযায়ী চিকিৎসাও শুরু হয়েছে, কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না।
এরআগে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এক নম্বরে থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বেলা ২টায় শুনানির জন্য রাখেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন উপস্থাপন করা হলে রোববার শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত।
জামিন আবেদনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তার উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। জামিন পেলে তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান। আবেদনকারীর (খালেদা জিয়ার) শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হচ্ছে। তিনি এখন গুরুতর অসুস্থ। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে ও খেতে পারছেন না। এমনকি ওষুধও নিতে পারছেন না। তাই দ্রুত তাকে যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশে নিয়ে আধুনিক, উন্নত চিকিৎসা বা থেরাপি দেয়া প্রয়োজন। তার অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উন্নত থেরাপি বা চিকিৎসার স্বার্থে নতুন করে এই জামিন আবেদনটি করা হয়েছে।
গত ১২ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এর আগে গত ৩১ জুলাই এ মামলায় হাইকোর্ট জামিন আবেদন খারিজ করেন।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ চার আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করে দুদক।