শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৮ পূর্বাহ্ন

শাওয়ালের ছয় রোজা

এ এস এম মাহবুবুর রহমান
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৭৮ বার

হিজরি ক্যালেন্ডার অনুসারে দশম মাস হলো ‘শাওয়াল’ মাস। রমজানের পরপরই আগমন ঘটে শাওয়াল মাসের। এ মাস আমল ও ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসটি কিছু বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার দাবি রাখে, তা হলো-শাওয়াল মাসেই মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর পালিত হয়। শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ- এ তিনটি মাসজুড়ে হজের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আর হজ সম্পাদনের তিন মাসের প্রথম মাসই শাওয়াল মাস এবং এ মাসেই অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ছয়টি নফল রোজা রয়েছে।
শাওয়াল মাসে সংঘটিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা : শাওয়াল মাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল যেমন, হিজরতের প্রথম বছরে উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা: এর সাথে নবীর বিবাহ সংঘটিত হয়েছিল, কুদরে বনি সালিমের যুদ্ধ, বনি কাইনুকার যুদ্ধ, আবু আফাককে হত্যা করার জন্য সালেম বিন ওমাইরের অভিযান, উহুদের যুদ্ধ, হামজা বিন আব্দুল মুত্তালিবের শাহাদাত এবং হিজরতের তৃতীয় বছরে হামরা আল-আসাদের যুদ্ধ।

শাওয়াল মাসের রোজার ফজিলত : শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ। নিচে কিছু তুলে ধরা হলো :

১. আল্লাহর কাছ থেকে মহান পুরস্কার লাভ করা যায়। যেমনটি সহিহ মুসলিমে এসেছে, আবু আইয়ূব আল আনসারি রা: থেকে বর্ণিত- রসূলুল্লাহ সা: বলেন- রমজানের রোজা পালন করে পরে শাওয়াল মাসে ছয় দিন সিয়াম পালন করা সারা বছর সওম পালন করার মতো (সহিহ মুসলিম : ২৬৪৮)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে কেউ কোনো নেক আমল করবে তাকে তার দশ গুণ সওয়াব প্রদান করা হবে’ (সূরা আনআম : ১৬০)। অতএব, রমজান মাসের রোজার ১০ গুণ সওয়াব দেয়া হলে তা হবে ৩০০ দিন আর শাওয়ালের ৬ রোজার সওয়াব ১০ গুণ হলে তা হবে ৬০ দিন। আর মোট ৩৬০ দিনে আরবি বছর পূর্ণ হয়ে যায়।

২. এই রোজার মাধ্যমে বান্দা তার রবের নৈকট্য লাভ এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। আবু হুরায়রাহ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো বন্ধুর সাথে শত্রুতা করবে, তার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধের ঘোষণা রইল। আমার বান্দা যেসব জিনিস দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম জিনিস হলো তা, যা আমি তার ওপর ফরজ করেছি। (অর্থাৎ ফরজের দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করা আমার কাছে বেশি পছন্দনীয়) আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালোবাসি, তখন আমি তার ওই কান হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শোনে, তার ওই চোখ হয়ে যাই, যার দ্বারা সে দেখে, তার ওই হাত হয়ে যাই, যার দ্বারা সে ধরে এবং তার ওই পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে। আর সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি তাকে দেই এবং সে যদি আমার আশ্রয় চায়, তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেই (রিয়াদুস সালেহিন-৩৯১)।

৩. রোজা পরাক্রমশালী আল্লাহর জন্য এবং এর পুরস্কার নিজ হাতেই দেবেন। আবু হুরায়রাহ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, আদম-সন্তানের প্রতিটি কাজের সওয়াব ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তবে রোজা ব্যতীত। কেননা তা শুধু আমার জন্য এবং আমিই তার পুরস্কার দেবো (সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৮২৩)।

৪. একজন রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে কস্তুরীর ঘ্রাণের চেয়েও উত্তম। আবু হুরায়রাহ রা: থেকে বর্ণিত- আল্লাহ্ রাসূল সা: বলেছেন, সিয়াম ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সওম পালন করছি। ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেসকের সুগন্ধির চেয়েও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ (সহিহ বুখারি-১৮৯৪)।

৫. রোজা জাহান্নামের আগুন থেকে ঢালস্বরূপ। আবু হুরায়রাহ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন- সিয়াম ঢালস্বরূপ। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫৯৫।

আজকাল অনেককে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায় শাওয়াল মাস আসলেই বিয়ে নিয়ে বেশ মাতামতি শুরু করে দেয়। তারা শাওয়াল মাসে বিবাহ করাকে সুন্নত বলে প্রচার করে থাকে, অনেকে এই মাসে বিবাহ করবে বলে অপেক্ষার প্রহর গুনে থাকে। রাসূল সা: বিশেষ কোনো মাস বা দিনে বিয়ে করতে উৎসাহিত করেননি বা এ জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়কে উত্তম বলেননি। তবে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি আয়েশা রা:কে শাওয়াল মাসে বিয়ে করেছেন। জেনে রাখা উচিত যে, জাহেলি যুগের মানুষের এই ধারণা ছিল যে, শাওয়াল মাসে বিবাহ-শাদির অনুষ্ঠান অশুভ ও অকল্যাণকর। তিনি বিবাহ করার মাধ্যমে জাহেলি যুগের এ ভিত্তিহীন ধারণাকে খণ্ডন করেছেন (শারহে মুসলিম ৯/২০৯)। বাস্তবতা হলো, প্রিয়নবী সা: মা আয়েশা রা:কে যেমন শাওয়াল মাসে বিয়ে করেছেন তেমনি অন্যান্য মাসে অন্যান্য স্ত্রীকেও বিয়ে করেছেন।

পরিশেষে বলতে চাই, শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাসূল সা: নিজে পালন করেছেন এবং আমাদেরও উচিত এই ছয়টি রোজা পালন করা। আর রমজানের ৩০টি রোজা পালনের পর এই ছয়টি রোজা একদমই সহজ হয়ে যাওয়ার কথা। তাই এই ছয়টি রোজা পালনে আরো সচেষ্ট হওয়া দরকার।

লেখক : শিক্ষার্থী, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com