বাংলাদেশের নির্বাচন ও সভা সমাবেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে দেশে ও প্রবাসে আলোচনার ঝর বইছে। এতে ভবিষতে যারা সুষ্ঠু, অবাধ ও অশ্রগ্রহনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কড়া হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার কাছে এই বিবৃতির ওপর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। তারা সকলেই বিবৃতিটিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে গ্রহন করেছেন। গুরুত্বারোপ করেছেন বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের ওপর।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, ইউক্রেন থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কোন সমাধান না দিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মাথা ব্যথা কেন তার পর্যালোচনা করা দরকার। আমার মতে, যে ঘোষনা দিয়েছে তা কোন বাস্তব সুফল আনবে না । গত দু নির্বাচনতো বিএনপি/জামাত নির্বাচন শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানের বাধা দিয়েছে । একইভাবে নির্বাচনের আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এ ধরনের হুমকি গনতন্ত্র ও মানবতার জন্য ভয়াবহ। ওরা আরেকটি ১৫ আগষ্ট তৈরির ষড়যন্ত্র করছে। বাংলার মানুষ এখন অনেক সচেতন। ১৭ কোটি মানুষকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরা শেখ হাসিনা ও গনতন্ত্রকে পাহাড়া দেবে।
বিএনপির প্রতি আহবান জানিয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহন করে শান্তিপূর্র্ন পরিবেশ বজায় রাখুন। আসুন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন ও দেশের জন্য একসাথে কাজ করি। মার্কিন প্রশাসন দেখুক, তাদের এক তরফা ভিসা নিষেধাজ্ঞা অমূলক।
তিনি বলেন, বিশ্বের পরাশক্তি হিসেবে অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলা তাদের নুতন কিছুই নয়। তবে জননেত্রী শেখ হাসিনা আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। গাজিপুর পৌরসভার নির্বাচন প্রমান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় নির্বাচন সুন্দর ও অবাধ করার ব্যাপারে কতটা আন্তরিক। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা কার্যত সরকারের পক্ষে বলে আমি মনে করি।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি গিয়াস আহমেদ বলেন,শেখ হাসিনার হাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গনতন্ত্র ও মানবাধিকার আজ ভূলুন্ঠিত। ১৯৭৫ সালেও বাকশাল গঠন কওে বহুদলীয় গনতন্ত্রকে কবর দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশে এখন ভোট ও গনতন্ত্রের নিশানাও নেই। আওয়ামী লীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্যে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। জ্বনাব গিয়াস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা দেখতে চায়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেখতে তারা উদগ্রীব। তাদের পদক্ষেপ কোন দল বা ব্যক্তির পক্ষে নয়। তারা জনগনের মৌলিক অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আমি মনে করি, তত্ত্বাবধায় সরকারের অধীনেই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন এটাই বাংলার জনগনের প্রত্যাশা।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির অপর সদস্য ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান ভূইয়া মিল্টন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে স্টেটমেন্ট দিয়েছে। এটি কোন দল বা গোষ্ঠীর পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের গনতন্ত্রকামী জনগনের পক্ষে। জনতার দাবির পক্ষে। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের তল্পীবাহকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ঘোষণা দিয়ে আমেরিকা বাংলাদেশের জনগনের পক্ষেই শক্ত অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এ ঘোষণায় উল্লাস প্রকাশ করছে। আমি মনে করি, একটি তত্ত্ববধায় সরকারের অধীনেই অবাধ ও অংশগ্রহনমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। দলীয় সরকারের অধীনে কোনভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক আইরিন পারভিন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করার জন্য কাজ করছেন। ইতোমধ্যেই স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলোও সুষ্ঠু হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা গনতন্ত্রের মানষ কন্যা। তার হাতেই গনতন্ত্র সুরক্ষিত। যুক্তরাষ্ট্র সরকারে বিবৃতিতো শেখ হাসিনার পদক্ষেপগুলোরই অংশ। শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠূ নির্বাচনের আয়োজন করে প্রমান করবেন গনতন্ত্র তার হাতে কতটা সুরক্ষিত। আওয়ামী লীগের ইতিহাসই হচ্ছে নির্বাচন ও ভোটের ইতিহাস। দলটি কখনোই পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসা বিশ্বাস করে না।
ট্রাই স্টেট বিএনপির সভাপতি ও ফোবানার ভাইস চেয়ারম্যান কাজি আযম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আমাম ভিসা নিষেধাজ্ঞা শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের অনাস্থা। আওয়ামী সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না বলেই তারা এ স্টেটমেন্ট প্রদান করেছে। তা বাংলাদেশের জনগনের আশা আকাংখার প্রতিফলন। আমি মনে করি, সময়ক্ষেপন না করে হাসিনার সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।আর এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রকৃত গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে।
যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সাধারন সম্পাদক আবু তালেব চান্দু এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সময়োপযোগী একটি স্টেটমেন্ট দেবার জন্য মি:ব্লিনকেনকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ মার্কিন প্রশাসনকে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। বিবৃতিটিতে বাংলাদেশের মানুষের মনের কথাই স্থান পেয়েছে। তবে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে যেন বাংলাদেশের মানসন্মান ভূলু্িঠত না হয়। সরকার ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়ে নির্বাচন করতে পারলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।