পানীয়ের মধ্যে চা আর কফি যে খুব জনপ্রিয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আড্ডা দিতে, ক্লান্তি দূর করতে, কাজের ফাঁকে আর কিছু না হোক ১-২ কাপ চা বা কফি খাওয়া হয়েই থাকে। এই দুটি পানীয় ছাড়া কোনো কিছুই যেন ঠিকঠাক জমে না।
এই দুই পানীয় আমাদের কাছে নিত্যদিনের খুবই সাধারণ ব্যাপার। তবে উভয়েরই কিছু উপকারিতা, অপকারিতা আছে। এবার চলুন জেনে নিই এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য।
চা গাছ থেকে চা পাতা পাওয়া যায়। আর এই চা পাতা থেকে তৈরি হয় চায়ের গুঁড়ো। যা আমাদের কাছে চা পাতা নামে পরিচিত। ফিগার সচেতন যারা তারা অনেকেই গ্রিন টি বা সবুজ চা খান।
গবেষণায় দেখা গেছে, সবুজ চায়ে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন খনিজ উপাদান যা প্রতিটি মানুষের শরীরেই প্রয়োজন।
লিকার চায়ের কিছু উপকারিতা, পুষ্টি ও ঝুঁকি আছে। সে সম্পর্কে আমরা জেনে নেবো।
লিকার চা পানের উপকারিতা
ক) লিকার চা হার্টের রক্ত সরবরাহ বাড়ায়, হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে।
খ) উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
গ) শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঘ) চায়ে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি করে, মস্তিষ্ককে সচল রাখে।
ঙ) শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দূর করে। রক্ত চলাচল ভালো হয়।
চ) প্রতিদিন চা পান করলে ইউ ভি রেডিয়েশন-এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বকের কোষগুলো রক্ষা পায়। ফলে স্কিন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
ছ) ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে লিকার চা উপকারী। কারণ এটি কোষ থেকে সাধারণের তুলনায় প্রায় ১৫ গুণ বেশি ইনসুলিন নিঃসৃত করে এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
জ) কিডনি রোগের জন্য উপকারী।
ঝ) রক্তে কোলেস্টোরেলের মাত্রা কমায়।
লিকার চা-এর কিছু পুষ্টি গুণাগুণ
জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট অনুসারে, চা-এর মধ্যে রয়েছে-ক্যাফেইন, অ্যামিনো অ্যাসিড, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ক্লোরোফিল, ফ্লোরাইড, অ্যালুমিনিয়াম, মিনারেলস ইত্যাদি। ব্ল্যাক টি বা লিকার চা-তে পলিফেনল, রাসায়নিক যৌগ রয়েছে যা উদ্ভিদকে অতিবেগুণি রশ্মি বা ক্ষতিকারক, রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করে। ফ্ল্যাভোনয়েডস এক ধরনের পলিফেনল।
এই পলিফেনলগুলোতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রভাব থাকে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলো ফ্রি র্যাডিকাল কোষগুলোর ক্রিয়াকলাপকে প্রতিহত করতে পারে। ফ্রি র্যাডিক্যালস স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে এবং এমনকি দেহের কোষগুলোকে মেরেও ফেলতে পারে। ফ্রি র্যাডিকালগুলো ক্যানসারের মতো অনেক রোগের বিকাশেও অবদান রাখে।
লিকার চা পানের অপকারিতা
অতিরিক্ত লিকার চা পান করলে বিপরীত প্রতিক্রিয়াও ঘটতে পারে। সঠিক সময়ে বা সঠিক উপায়ে চা পান না করলে শারীরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। খাবার আগে বা খাওয়ার পরে পরেই চা পান করা উচিত না। এতে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
ক) চা শরীর থেকে ভিটামিন বি শোষণ রোধ করে যা বেরিবেরি রোগের অন্যতম কারণ।
খ) হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত করে, খিদের অনুভূতি নষ্ট করে।
গ) অতিরিক্ত চা পান ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়
ঘ) বেশি চা পান করলে আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়
ঙ) চা খাবার থেকে আয়রন শোষণ করে, অ্যানিমিয়া হতে পারে।
চ) অতিরিক্ত চা বা কফি পানের কারণে এগুলোর প্রতি আসক্তি তৈরি হয়। ফলস্বরুপ একমুহূর্ত চা বা কফি ছাড়া থাকা যায় না, মাথা ব্যথা, ক্লান্তি অনুভব হয়।
ছ) গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চা, কফি পান করা উচিত নয়।
জ) খালি পেটে চা পান করলে অ্যাসিডিটি হতে পারে।