রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন

জান্নাতের পদমর্যাদা

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩
  • ৫৬ বার

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন- ‘আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রাসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তি। আর তাঁদের সান্নিধ্যই হলো উত্তম।’ (সূরা আন-নিসা-৬৯)
যেসব লোক আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত বিষয়ের ওপর আমল করবে এবং আল্লাহ ও রাসূলের নিষিদ্ধ বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকবে, তাদের পদমর্যাদা তাদেরই আমল তথা কৃতকর্ম অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। প্রথম শ্রেণীর লোকদেরকে আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসূলদের সাথে জান্নাতের উচ্চতর স্থানে জায়গা দেবেন এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকদেরকে নবীদের পরবর্তী মর্যাদার লোকদের সাথে স্থান দেবেন। তাদেরকেই বলা হয় সিদ্দিকিন। অর্থাৎ, তারা হলেন সুউচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবায়ে কেরাম, যারা কোনো রকম দ্বিধা-সঙ্কোচ ও বিরোধিতা না করে প্রাথমিক পর্যায়েই ঈমান এনেছেন। যেমন- হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা: প্রমুখ। এরপর তৃতীয় শ্রেণীর লোকেরা থাকবেন শহীদদের সাথে। শহীদ সেসব লোককে বলা হয়, যারা আল্লাহর রাহে নিজেদের জানমাল কোরবান করে দিয়েছেন। আর চতুর্থ শ্রেণীর লোকরা থাকবেন সালেহিনদের সাথে। বস্তুত সালেহিন হলেন সেসব লোক, যারা জাহের ও বাতেন, প্রকাশ্য ও গোপন সব ক্ষেত্রেই সৎকর্মগুলোর যথাযথ অনুবর্তী।
সার কথা- আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যশীল বান্দারা সেসব মহান ব্যক্তিদের সাথে থাকবেন, যারা আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বাধিক সম্মানিত ও মকবুল।

জান্নাতে দেখা-সাক্ষাতের কয়েকটি দিক : ১. নিজ নিজ অবস্থানে থেকেই একে অন্যকে দেখবেন। যেমন- মুয়াত্তা ইমাম মালেক গ্রন্থে হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে রেওয়ায়েতক্রমে উদ্ধৃত করা হয়েছে, রাসূলে করিম সা: ইরশাদ করেছেন, ‘জান্নাতবাসীরা নিজেদের জানালা দিয়ে উপরের শ্রেণীর লোকদেরকে তেমনিভাবে দেখতে পাবে, যেমন- পৃথিবীতে তোমরা তাদেরকে দেখো।’ ২. উপরের শ্রেণীর লোকেরা নিচের শ্রেণীতে নেমে এসেও সাক্ষাৎ করবেন। যেমন- হজরত ইবনে জরির রহ: হজরত রবি রা: থেকে রেওয়ায়েতক্রমে উদ্ধৃত করেছেন, রাসূলে আকরাম সা: এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে ইরশাদ করেছেন- উপরের শ্রেণীর লোকেরা নিচের শ্রেণীতে নেমে আসবেন এবং তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও ওঠাবসা হবে।
তা ছাড়া নিচের শ্রেণীর অধিবাসীদের জন্য উপরের শ্রেণীতে অনুমতি লাভও হতে পারে। আলোচ্য আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ সা: বহু লোককে জান্নাতে নিজের সাথে অবস্থানের সুসংবাদ দিয়েছেন।

প্রেম নৈকট্যের শর্ত : রাসূলুল্লাহ সা:-এর সান্নিধ্য ও নৈকট্য তাঁর সাথে প্রেম ও মহব্বতের মাধ্যমেই লাভ হবে। সহিহ বুখারিতে হাদিসে মুতাওয়াতেরে সাহাবায়ে কেরামের এক বিপুল জামাত কর্তৃক বর্ণিত রয়েছে, রাসূলে করিম সা:-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো যে, সে লোকটির মর্যাদা কেমন হবে, যে লোক কোনো জামাত বা দলের সাথে ভালোবাসা পোষণ করে, কিন্তু আমলের বেলায় এ দলের নির্ধারিত মান পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘আল-মারঊ মাআ মান আহাব্বা’ অর্থাৎ- হাশরের মাঠে প্রতিটি লোকই যার সাথে তার ভালোবাসা, তার সাথে থাকবে।’

হজরত আনাস রা: বলেন, পৃথিবীতে কোনো কিছুতেই আমি এতটা আনন্দিত হয়নি যতটা এ হাদিসের কারণে আনন্দিত হয়েছি। কারণ, এ হাদিসে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাথে যাদের গভীর ভালোবাসা রয়েছে তারা হাশরের মাঠেও প্রিয় নবীজীর সাথেই থাকবেন।
রাসূল সা:-এর সান্নিধ্য লাভ বর্ণ-গোত্রের ওপর নির্ভরশীল নয় : তিবরানি রহ: জামে কবির গ্রন্থে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা:-এর এ রেওয়ায়েতটি উদ্ধৃত করেছেন, জনৈক হাবশি ব্যক্তি মহানবী সা:-এর দরবারে এসে নিবেদন করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আমাদের চাইতে আকার-আকৃতি রঙ উভয় দিক দিয়েই সুন্দর ও অনন্য এবং নবুয়তের দিক দিয়েও। এখন যদি আমি এ ব্যাপারেও ঈমান নিয়ে আসি, যাতে আপনার ঈমান রয়েছে এবং সেরূপ আমলও করি, যা আপনি করে থাকেন, তাহলে কি আমিও জান্নাতের মধ্যে আপনার সাথে থাকতে পারব।
মহানবী সা: বললেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। তুমি তোমার হাবশিসুলভ কদাকৃতির জন্য চিন্তিত হয়ো না। সে সত্তার কসম, যাঁর মুঠোয় আমার প্রাণ, জান্নাতের মধ্যে কালো রঙের হাবশিও সাদা ও সুন্দর হয়ে যাবে এবং এক হাজার বছরের দূরত্বে থেকেও চমকাতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (কালেমায়) বিশ্বাসী হবে, তার মুক্তি ও কল্যাণ আল্লাহর দায়িত্বে এসে যায়। আর যে লোক সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি পড়ে, তার আমলনামায় এক লাখ ২৪ হাজার সওয়াব (নেকি) লেখা হয়।’

সিদ্দিকের সংজ্ঞা : দ্বিতীয় স্তর হলো সিদ্দিকিনের। আর সিদ্দিক হলেন সেসব লোক যারা মাআরেফাত বা আল্লাহ তায়ালার পরিচয় লাভের ক্ষেত্রে নবীদের কাছাকাছি। এর উদাহরণ এই যে, কোনো লোক যেন কোনো বস্তুকে দূর থেকে অবলোকন করছে। হজরত আলী রা:-এর কাছে কোনো এক লোক জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন? তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এমন কোনো কিছুর ইবাদত করতে পারি না, যা আমি দেখিনি, এরপর আরো বললেন, ‘আল্লাহকে মানুষ স্বচক্ষে দেখেনি সত্য; কিন্তু মানুষের অন্তর ঈমানের আলোকে তাঁকে উপলব্ধি করে নেয়।’ এখানে ‘দেখা’ বলতে হজরত আলী রা:-এর উদ্দেশ্য হলো স্বীয় জ্ঞানের গভীরতা সূক্ষ্মতার মাধ্যমে দেখার মতোই উপলব্ধি করে নেয়া।
শহীদের সংজ্ঞা : তৃতীয় স্তর হলো শহীদদের। আর শহীদ হলেন সেসব লোক, যারা বিভিন্ন যুক্তি-প্রমাণের মাধ্যমে নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত হন, তারা তা প্রত্যক্ষ করেন না। তাদের উদাহরণ হলো এমন, যেন কোনো লোক কোনো বস্তুকে আয়নার কাছে থেকে অবলোকন করছে। যেমন- হজরত হারেসা রা: বলেছেন, ‘আমার মনে হয় আমি যেন আমার মহান পরওয়ারদিগারের আরশ প্রত্যক্ষ করছি।’

সালেহিনের সংজ্ঞা : চতুর্থ স্তর হলো সালেহিনের। যারা নিজেদের উদ্দেশ্য-লক্ষ্যকে অনুসরণ ও আনুগত্যের মাধ্যমে নিশ্চিত জেনে নেন। তাদের উদাহরণ হলো, কোনো বস্তুকে দূরে থেকে আয়নার মধ্যে দেখা। আর হাদিসে যে বলা হয়েছে, ‘তাতেও দেখা বা প্রত্যক্ষ করার এই স্তরের কথাই বোঝানো হয়েছে’। ইমাম রাগেব ইস্পাহানির এই পর্যালোচনার সার-নির্যাস হচ্ছে, এগুলোই হলো মাআরেফাতে-রব বা আল্লাহ তায়ালার পরিচয় লাভের স্তর। বস্তুত এই মাআরেফাতের স্তরের পার্থক্যহেতু মর্যাদাও বিভিন্ন। অতএব, আয়াতের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। এতে মুসলমানদিগকে এই সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের পরিপূর্ণ আনুগত্যশীল অনুসারীরা তাঁদেরই সাথে থাকবে যাঁরা অতি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী।

লেখক :

  • মাওলানা কাওসার আহমদ যাকারিয়া

কলামিস্ট, মজলিশপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com