শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৬ পূর্বাহ্ন

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৭ মার্চ, ২০২০
  • ৩৮০ বার

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের যথার্থ মূল্যায়ন হোক

আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত কৌশলপূর্ণ ভাষায় কার্যত স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাই বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে দিনটি অবিস্মরণীয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দিনে সাবেক রেসকোর্স ময়দানে (পরবর্তীকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১০ লাখের বেশি মুক্তিকামী মানুষের সমাবেশে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি সেদিন পাকিস্তানি শাসকদের সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, লক্ষ্য অর্জনের পথে করণীয়গুলো তুলে ধরেছিলেন। বলেছিলেন, ‘…প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে; এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু—আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।’ সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা—রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব; এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লা।’

১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে নানা রকম তালবাহানা করতে থাকে। বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও পার্লামেন্টের অধিবেশন পর্যন্ত ডাকা হচ্ছিল না। অন্যদিকে, গোপনে চলতে থাকে সামরিক ষড়যন্ত্র। পাকিস্তানিদের এই হীন মানসিকতায় দেশের মানুষ ক্রমেই উত্তেজিত হয়ে উঠছিল। এ অবস্থায় ছাত্র, যুবক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার দাবি উঠতে থাকে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সামরিক সরকারও তৈরি ছিল, ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ট্যাংক, কামান, মেশিন গান নিয়ে রেসকোর্স ময়দানে রক্তের বন্যা বইয়ে দেবে। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে এগিয়ে গেলেন। তিনি কার্যত স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, কী করতে হবে তা বলে দিলেন, আবার পার্লামেন্টে যোগদানের জন্য চারটি শর্ত দিয়ে একটি ধোয়াশা তৈরি করলেন। বঙ্গবন্ধু সেদিন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে তিনি একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবেই চিহ্নিত হতেন। আন্তর্জাতিক সমর্থন থেকে বঞ্চিত হতেন। পাকিস্তানিদের আরো বেশি করে বাঙালি নিধনের ক্ষেত্র তৈরি হতো। এ অবস্থায় উপায়ান্তর না পেয়ে পাকিস্তানের সামরিক সরকার একতরফাভাবে গণহত্যায় নামে। ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ট্যাংক, কামান, মেশিনগান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, যা তারা করতে চেয়েছিল ৭ই মার্চে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দিয়ে গেলেন। সেই রাতেই তৎকালীন ইপিআর ও পুলিশের পক্ষ থেকে সশস্ত্র প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়। পরদিন থেকেই সারা দেশে সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। মার্কিন সাময়িকী নিউজউইকের ভাষায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনীতির ‘কবি’। সে ক্ষেত্রে ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল একটি শ্রেষ্ঠ কবিতা। একই সঙ্গে এই ভাষণে তিনি যে দায়িত্ব সচেতনতা ও ধীশক্তির পরিচয় রেখে গেছেন তা অতুলনীয়। তাই বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির অস্তিত্বের মতোই সত্য হয়ে থাকবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com