‘সার্ভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’। বেঁচে থাকতে যোগ্যতার লড়াইয়ে জিততে হয়। স্রষ্টা নানা জীবকে নানা ধরনের কৌশল দিয়েছেন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। মানুষ তার জীবনের ঝুঁকি সরাসরি প্রতিহত করতে পারে। অন্যেরা তা পারে না। কৌশল, বুদ্ধি ও নানাবিধ উপায়ে প্রাণিকুল তাদের জীবন রক্ষা করে। শত্রুর মোকাবেলা করে। যেমন- কচ্ছপ বিপদ দেখলে নিজকে গুটিয়ে নেয় খোলসে। খরগোশ দ্রুত দৌড়ায়। কাঠবিড়ালি গাছে ওঠে। আর টিকটিকি কী করে? লেজ বিসর্জন দিয়ে সে আত্মরক্ষা করে। বাচ্চারা লেজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এই ফাঁকে টিকটিকি নিরাপদে কেটে পড়ে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত সপ্তাহে সেন্টমার্টিন নিয়ে যে কথাবার্তা শুরু হয়েছে তাকে একজন বেরসিক টিকটিকির লেজের সাথে তুলনা করেছেন। টিকটিকি রক্ষাকবচ তার লেজ। সে তা ফেলে দিয়ে ধরতে চাওয়া শিকারিকে ব্যস্ত রেখে সটকে পড়ে। বিষয়টিকে আমরা সহজভাবে নিলেও কঠিন করে দেখেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রিয়াজ। ফেসবুকে তার বয়ানে বিষয়টি এরকম- ‘গণযোগাযোগ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষকরা দেখিয়েছেন, এজেন্ডা সেটিং তৈরি করেন ক্ষমতাশালীরা। যাদের ক্ষমতা আছে রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক। এসব ক্ষমতাশালীদের অন্যতম হচ্ছে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকেন তারা। তারা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এমন বিষয়কে সামনে নিয়ে আসবেন যা তাদের জন্যে লাভজনক। একই সাথে তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্য কোনো বিষয়কে পেছনে সরিয়ে দেয়া। ক্ষমতাসীনরা এ ধরনের বিষয়ের অবতারণা করেন এক ধরনের পোলারাইজেশন তৈরি করার জন্যে। এই রকম একটি বিতর্কে দেশকে যুক্ত করার অভিপ্রায় থেকেই এখন সেন্টমার্টিন দ্বীপে মার্কিন ঘাঁটি নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে।’
বিতর্কটি গুরুত্ব অর্জন করে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য থেকে। গণভবনে কাতার ও সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। কারো কাছে এ দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। এখন যদি বলি সেন্টমার্টিন দ্বীপ কারো কাছে বিক্রি করব কিংবা লিজ দেবো তাহলে ক্ষমতায় থাকায় কোনো অসুবিধা নেই। আমার দ্বারা এটি হবে না। সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রি কিংবা লিজ দিয়ে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা নেই। আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে খেলতে দেবো না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। সবার সাথে আমাদের বন্ধুত্ব। কারো সাথে শত্রুতা নেই’। বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তারা গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। এখন তারা দেশ বিক্রি করবে। তারা নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে আসতে চায়।’
সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ভিত্তিহীন। বিএনপি কখনো দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়নি। সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি রাজনৈতিক কৌশল।’ অপর দিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নাকি সেন্টমার্টিন দিলে ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। সত্যি কথা হলো, সেন্টমার্টিন দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারলে আগেই দিয়ে দিতেন।’
অবশ্য বিতর্কটির সূচনা করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বাম রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সপ্তাহ খানেক আগে গত ১৪ জুন তিনি জাতীয় সংসদে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন দ্বীপটিকে পাওয়ার লক্ষ্যে চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। এ জন্য তারা রেজিম চেঞ্জ বা সরকার হটাতে চায়। জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ সব কথা বলেন। রাশেদ খান মেনন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যারা বন্ধু, তাদের শত্রুর প্রয়োজন নেই। বেশ কিছু সময় আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে বাগে রাখতে স্যাংশন দিয়েছে। এখন নির্বাচন উপলক্ষ করে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এটি কেবল দুরভিসন্ধিমূলকই নয়, তাদের রেজিম চেঞ্জের কৌশলের অংশ। তারা সেন্টমার্টিন চায়, কোয়াডে বাংলাদেশকে চায়। মেনন বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ছিনিয়ে নিতে তারা বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠায়। তীব্র খাদ্য সঙ্কটের সময় বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বিব্রত করতে মধ্যসমুদ্র থেকে গমের জাহাজ ফিরিয়ে নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে তাদের কালো হাত ছিল। এখন আবার বর্তমান সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে তারা সব কিছু করছে। এরপর জাসদ সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও একই সুরে কথা বলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী নিজে বলার পর বিষয়টির গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে গেছে।
সেন্টমার্টিন নিয়ে বামদের এ ধরনের ঘাঁটাঘাঁটি নতুন নয়। তাদের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু স্বদেশ না হয়ে বিদেশ হয়। পাকিস্তান আমলে যখন রুশ-মার্কিন দ্বন্দ্ব চরমে তখন তারা বাংলাদেশের হাজারো সমস্যা না দেখে, ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন সেনা কেন প্রত্যাহার করা হচ্ছে না তা নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তুলত। বাংলাদেশ হওয়ার পরও তাদের এ প্রবণতা বহাল থাকে। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনে তাদের দিল্লি-মস্কোমুখী রাজনীতিতে ভাটা পড়ে। তখন ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-নিপাত যাক’ স্লোগান দিয়ে তাদের সময় কাটে। ১৯৮০-এর দশকে তারা গুজব ছড়াতেন- সেন্টমার্টিনে ঘাঁটি গড়তে চায় মার্কিনিরা। এ কথার পেছনে তথ্যপ্রমাণ না থাকলেও সোভিয়েত উমেদারি বহাল রাখার প্রয়োজনে তা বলতে হতো। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৮৯ সালে উবে গেলেও তাদের ঘাড় থেকে সোভিয়েত সিন্দাবাদের দৈত্য নেমে যায়নি। তাই এখন মাঝে মধ্যে সেই পুরনো বয়ান তাদের মনে পড়ে।
সেন্টমার্টিন প্রসঙ্গটি তারা এনেছেন এ কারণে যে, তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা বেসামাল হয়ে গেছে। আর এ বেসামাল অবস্থার জন্য তারা দায়ী করছেন সেই পুরনো কায়দায় যুক্তরাষ্ট্রকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতি সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বাইডেন আহূত গণতন্ত্র সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সরকার দাওয়াত পায়নি। সে জন্য গোস্বা তাদের। পরে মানবাধিকার প্রশ্নে যখন র্যাবের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় তখন তাদের রাগ হয়। এ রাগ তাদের তালুতে ওঠে যখন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করে। দেশে-বিদেশে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রয়া দেখা দেয়। শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা যা বলেছেন তা একত্র করলে অসংবদ্ধ কথাবার্তা ছাড়া অন্য কিছু বলা যাবে না। সেন্টমার্টিন হচ্ছে সেই অসংবদ্ধ কথাবার্তার সর্বশেষ নমুনা। অথচ ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ শক্তিশালী ও সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব বজায় রাখে। আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। দেশটির কোনো ভ‚খণ্ডের ওপর আমরা কোনো দাবি করিনি। অবাধ, মুক্ত, উন্নত ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিতে বাংলাদেশের সাথে আমাদের অংশীদারিত্বকে আমরা মূল্য দিই এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ গণতন্ত্রের প্রসারে একসাথে কাজ করার মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ককে জোরদার করার চেষ্টা করি।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সেন্টমার্টিনের মতো বিষয়টি অনেক আগে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র এখানে ঘাঁটি বানাতে আগ্রহী নয়। ‘অন্যান্য ভূ-রাজনীতির কথা বাদ দিয়েও এ কারণে ঘাঁটি প্রসঙ্গ অবান্তর কেননা, টপোগ্রাফির কারণে ওই দ্বীপে কোনো ধরনের সামরিক স্থাপনা তৈরি করা যাবে না। এই প্রসঙ্গ মীমাংসিত।’ প্রবালসমৃদ্ধ সেন্টমার্টিনের মাটি সামরিক ঘাঁটি করার উপযুক্ত নয়। দ্বীপটির মাটি অত্যন্ত নরম। সামরিক ঘাঁটি করার জন্য মাটির নিচে যে পরিমাণ স্থাপনা করতে হয় তার জন্য এই দ্বীপের নরম মাটি অনুপযুক্ত। তা ছাড়া এ ধরনের ছোট্ট পরিসরের জায়গা কোনোক্রমে সামরিক স্থাপনার উপযোগী নয়। এটি সত্যি কথা যে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ দীর্ঘকাল ধরে দেশে দেশে এ ধরনের সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে আসছে। তবে তা হয় স্টেট টু স্টেট নিরাপত্তা চুক্তির মাধ্যমে এবং তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের সাথে যে সমস্ত সামরিক ও বেসামরিক চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে তা প্রকাশ্য ও আনুষ্ঠানিক। নাগরিক সাধারণ ঘূণাক্ষরেও শুনেননি সেন্টমার্টিন নিয়ে মার্কিন প্রস্তাবের কথা। আজকাল গণমাধ্যমের চোখ এড়ানো সম্ভব নয়। সেই গণমাধ্যমেও বিষয়টি কোনোভাবে উপস্থাপিত হয়নি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, ‘কোনো সার্বভৌম দেশের ভ‚খণ্ড কোনো দেশ ক্ষমতায় রাখার বিনিময়ে চাইতে পারে না। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ ধরনের মন্তব্য অবিশ্বাস্য। আসলে এ ধরনের মন্তব্য দিয়ে তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে চান।’ আন্দোলনের তোড় যখন তীব্র এবং সরকার যখন একটি প্রচণ্ড চাপ মোকাবেলা করছে তখন একরকম হাওয়া থেকে পাওয়ার মতো করে বিষয়টি উপস্থাপিত হলো। সত্যি যদি যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের ইচ্ছা, অভিপ্রায় ও পরিকল্পনা পেশ করে থাকে তা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য, নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। অথচ বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। সরকারের হাতে কোনো তথ্য-প্রমাণ থাকলে মার্কিন অস্বীকৃতির মুখে তা প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হোক। আর তা না হলে বুঝতে হবে- একটি কঠিন কূটনৈতিক ব্যত্যয় ঘটেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ক্ষমতাসীন সরকার ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ পৌঁছে গেছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যে ক‚টনৈতিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা অনতিক্রম্য। ভবষ্যতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও সে ক্ষতি কখনো পূরণ হবে বলে মনে হয় না।
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি আমাদের এক অনিন্দ্য সুন্দর সম্পদ। দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমার সীমান্তের কাছে ৮.৩ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এর অবস্থান। দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ এরিয়া হচ্ছে এটি। দ্বীপটিতে স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা মাত্র ৯ হাজার। এটি দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পযটন এলাকা। প্রতিদিন গড়ে ৯ হাজার লোক সেখানে যাতায়াত করেন। আকর্ষণীয়ভাবে দ্বীপটিকে সাজাতে পারলে পর্যটনের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও এর ব্যবহার আরো বাড়বে। সাম্প্রতিক বিতর্কে সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক সচেতন মানুষ বুঝেন, আসলে তাদের নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। স্মরণ করা যেতে পারে, দ্বীপটির ওপর প্রতিবেশী মিয়ানমারের শ্যেনদৃষ্টি রয়েছে। কয়েক বছর আগে মিয়ানমার দ্বীপটিকে তাদের মানচিত্রের অন্তর্ভুক্ত করে। এর ইতিহাস সম্পর্কে যা জানা যায় তা হচ্ছে- ২৫০ বছর আগে আরব নাবিকরা প্রথম এ দ্বীপে বসবাস করেন। তারা এর নাম দেন জাজিরা। ভূগোলবিদরা বলেন, প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল জায়গাটি। ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে চলে যায়। এরপর প্রায় ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণপাড়া জেগে ওঠে। এর ১০০ বছরের মধ্যে উত্তরপাড়া ও পরবর্তী ১০০ বছরের মধ্যে বাকি অংশ জেগে ওঠে। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০০ সালে ভ‚মি জরিপের সময় এ দ্বীপকে ব্র্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেন্টমার্টিন বিতর্কটিকে টিকটিকির লেজ বলাটা অবান্তর নয়। টিকটিকির লেজ ফেলে দিয়ে সে যখন পলায়ন করে তখন সংশ্লিষ্ট লোকেরা তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা লক্ষ করেন না যে, লেজের বিনিময়ে সে তার জীবনের ঝুঁকি হ্রাস করতে পেরেছে। বস্তুত সরকারের তরফ থেকে যে অ্যাজেন্ডা সেটিংয়ের কথা আলী রিয়াজ বলেছেন সেন্টমার্টিন ইস্যুটি সেরকম একটি দৃষ্টি ফেরানোর বিষয়। আগামী নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে গোটা জাতি যখন একটি প্রান্তিক পর্যায় অতিক্রম করছে তখন সেন্টমার্টিন বিষয়ক কথকথা অল্প সময়ের জন্য হলেও জাতির দৃষ্টি বিভ্রম ঘটিয়েছে। তবে এটি সাময়িক। রাজনীতিকে যারা খেলা মনে করেন তাদের জন্য টিকটিকির লেজ উদ্ধার একটি কঠিন কর্ম বটে।