শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন

গুলিস্তানে আ’লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত যুবক যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসার ছাত্র

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০২৩
  • ৪৬ বার
ছবি : সংগৃহীত

গত শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেদিন গুলিস্তানে এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে আগত দলটির দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ওই সংঘর্ষে হাফেজ রেজাউল করিম (২১) নামে এক যুবক নিহত হন। হাফেজ রেজাউল যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসা নামে পরিচিত ‘জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া’র ছাত্র।

রোববার রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ এ প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, হাফেজ রেজাউল করিম সেখানকার জালালাঈন জামাতের (স্নাতক-১ম বর্ষ) ছাত্র ছিলেন।

একইসাথে হাফেজ রেজাউল করিম কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলেন না এবং তিনি নিরপরাধ ও অত্যন্ত সৎ ছিলেন বলেও ওই শিক্ষক দাবি করেন।

এদিকে, সন্তানকে হারিয়ে রেজাউলের গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলার চরঅষ্টধর ইউনিয়নের নারায়ণখোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামে এখনো শোকের মাতম চলছে। তার বাবা কৃষক আবদুস সাত্তার বড় ছেলেকে এভাবে হারিয়ে দিশেহারা। আর তার মা রেনু বেগমের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে সেখানকার আকাশ-বাতাস।

রেজাউল করিমের এমন মৃত্যুতে শুধু তার পরিবারই নয়; বরং শোকের সাগরে ভাসছে দেশের কওমি মাদরাসার অসংখ্য ছাত্র-শিক্ষক। একজন নিরপরাধ মাদরাসা-ছাত্রের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তারা। রেজাউলকে হারিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তারা যেমন দুঃখ প্রকাশ করছেন, ঠিক তেমনি তাদের কথায় ফুটে উঠছে গভীর আক্ষেপও ।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কওমি আলেম মাওলানা জহিরুদ্দিন বাবর ‘রাজনীতির বলি মাদরাসা-ছাত্র রেজাউল করিম!’ শিরোনাম দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সেদিন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ছিল ক্ষমতাসীন দলের কথিত শান্তি সমাবেশ। সেই সমাবেশ থেকে ফেরার পথে তাদের দুই নেতার অনুসারীরা মারামারিতে জড়ায়। সেই মারামারির মাঝখানে পড়ে প্রাণ যায় রেজাউল করিম। সে কোরআনে হাফেজ। পড়ত যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসায়। বাড়ি শেরপুরে। বিষয়টি জানাজানি হতেও দুই দিন লেগে যায়। কারণ প্রথমে তার পরিচয় শনাক্ত করতে পারছিল না পুলিশ।’

তিনি আরো লেখেন, ‘রেজাউল কোনো দল করত না। রাজনীতির মারপ্যাঁচের ধারেকাছেও ছিল না। তবুও তাকে রাজনীতির বলি হতে হলো। যেহেতু রাজনীতি করত না তাই তার পাশেও কেউ সেভাবে দাঁড়ায়নি…। রাজনীতির যে সঙ্ঘাত শুরু হয়েছে তাতে আরো কত রেজাউলের মায়ের কোল খালি হয়- আল্লাহ জানেন! হে আল্লাহ! তুমি রেজাউলকে ক্ষমা করে দাও আর এই জাতিকে রক্ষা করো!’

রাজধানীর মোহাম্মদপুরস্থ প্রসিদ্ধ মাদরাসা ‘জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া’র শিক্ষক মাওলানা এহসানুল হকের লেখায়ও আক্ষেপ ঝরল। তিনি ‘মাদরাসা-ছাত্রের কি জীবনের মূল্য নেই?’ শিরোনামে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘শান্তি সমাবেশ শেষে দুই গ্রুপের মারামারি হয়েছিল এটা অনেকেই জানি। তুমুল সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে একজন প্রাণ হারিয়েছে এটাও সংবাদমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু সেই ছেলেটি কে? সে কোনো দলের নেতা বা কর্মী নয়, সে আমাদের ভাই যাত্রাবাড়ী মাদরাসার জালালাইন জামাতের ছাত্র হাফেজ রেজাউল করিম। ছেলেটি গোলাপ শাহ মাজার হয়ে মাদরাসায় ফিরছিলো, কিন্তু ক্ষমতার দ্বন্দ্বে উন্মাদ সন্ত্রাসীরা তার প্রাণ কেড়ে নেয়।’

তিনি আরো লেখেন, ‘এত বড় একটি ঘটনা ঘটে গেলো, অথচ এখন পর্যন্ত সবাই অনেকটা নিরব। কারো কোনো উচ্চবাচ্চ নেই। আমরা গতকাল দেখলাম গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমানুল্লাহ আমানকে পিটিয়ে আহত করার পর জামাই আদরে আপ্যায়নের নাটক। অথচ তাদের মারামারিতে একজন মাদরাসা-ছাত্র প্রাণ হারালো, এটা নিয়ে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। শোক প্রকাশের সৌজন্যতাও নেই। এর কারণ কী? মাদরাসা-ছাত্রের কি জীবনের মূল্য নেই?’

মাওলানা এহসানুল হক লেখেন, ‘রেজাউল করিম যাত্রাবাড়ীর মতো বড় একটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। তারা চাইলে কত কিছুই তো সম্ভব। তাহলে কেন এই নিরবতা? এই ঘটনার যথাযথ প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন। কওমি অঙ্গনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। রেজাউল করিমের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আল্লাহ পাক তাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন।’

মাওলানা সাইফুল ইসলাম ফরিদপুরী নামের এক আলেম তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হয়ে একজন কোরআনের হাফেজ এভাবে দিনদুপুরে নৃশংসভাবে নিহত হবে? এটা কখনোই মেনে নিতে পারব না। এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। সকলে আওয়াজ তুলুন।’ এভাবে কওমি মাদরাসার আরো অসংখ্য ছাত্র-শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রেজাউল করিমের এরূপ মৃত্যুতে শোক ও আক্ষেপ প্রকাশ করছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com