মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগে ড্রেজারের জমানো পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেল ৬টার দিকে এই ঘটনা ঘটে
মারা যাওয়া দুই শিশু হলো চাঁদনী আক্তার (১০) ও মরিয়ম (১১)। চাঁদনী কুমারভোগ গ্রামের শাহ আলমের মেয়ে ও মরিয়ম একই গ্রামের সিদ্দিক হোসেনের মেয়ে।
জানা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মৌছা আমেনা হাকিম দাখিল মাদ্রাসায় যান দুই বান্ধবী। সারাদিন ক্লাস শেষ করে বিকেল ৫টার দিকে মাদ্রাসা থেকে বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে। পরে ৬টার দিকে বাড়ির পাশে ড্রেজারে জমে থাকা পানিতে গোসল করতে যায়। এরপর বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা ডাক দিতে যায়। পরে চাঁদনী নামের শিশুর লাশটি পানিতে ভেসে থাকতে দেখে। এরপর পুকুরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে মরিয়মের লাশটি উদ্ধার করা হয়।
মরিয়মের মা সুমি বেগম বিলাপ করে বলতে থাকেন, ‘বিকেল ৫টার দিকে মাদরাসা থেকে আসার পরে মেয়েকে ভাত দিলাম। খাওয়ার পর বলল, মা আমি গোসল করতে যাই। ভাবলাম গোসলখানায় গোসল করবে। আমার ছোট ছেলেকে মাস্টারের কাছে প্রাইভেট পড়তে দিতে গেলাম। এসে দেখি মরিয়ম নাই। এর প্রায় আধঘণ্টা পরে খুঁজতে খুঁজতে দেখি জমে থাকা পানিতে চাঁদনীর লাশ ভেসে আছে। এর আগে চাঁদনী আমাদের বাসায় আসছিল, তাই ধারণা করলাম, আমার মেয়েও গোসল করতে আসছে। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করে পানির নিচ থেকে আমার মেয়ের লাশ পাওয়া যায়।
নিহত চাঁদনীর ভাই সামিউল আলম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সকালে আমি মাদরাসায় যাব না। তাই বললাম বোন তোরও মাদরাসায় যেতে হবে না। ও (চাঁদনী) বলল, না আজকে মাদরাসায় প্রতিযোগিতা আছে। তাই মাদরাসায় গেল। বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে কোথায় গেল দেখলামও না। এরপর হঠাৎ শুনি পুকুর পাড়ে বোনের লাশ।’
নিহত মরিয়মের মামা শাহীন শেখ বলেন, ‘আজকে হঠাৎ করে পুকুরে গোসল করতে গিয়েছে। ও কখনো একা পুকুরে গোসল করতে যায় না। যদিও সাঁতার জানে। সাঁতার জানার পরেও কিভাবে কি হলো বুঝলাম না।’
মৌছা আমেনা হাকিম দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা মো: মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাদরাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী চাঁদনী ও মরিয়ম। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। নর্ম-ভদ্র। আমরা শোকাহত। আল্লাহ ওদের জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক।’
স্থানীয়রা জানান, মাগরিবের আগে আগে ড্রেজারের পকেট কাটা ওই পুকুর থেকে তাদের লাশ লাশ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ড্রেজার দিয়ে ফেলা চোরা বালুতে পা আটকে গিয়ে তাদের মৃত্যু হয়।
কুমারভোগ ৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য কামাল হোসেন জানান, তাদের মধ্যে একজন সাঁতার জানত। কী করে পানিতে ডুবে মারা গেল বুঝতে পারছি না। সেখানে ড্রেজারের পানি জমানো ছিল। তাছাড়া বৃষ্টির কারণেও পানি জমে ছিল।
এ ব্যাপারে ড্রেজারের মালিক জহির ফকির জানান, আমার ড্রেজারের পাইপ ওইখানে আছে। তবে মাটি কাটা বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া আমার কাছ থেকে স্থানীয় কামাল মেম্বার ড্রেজারটি চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছিল।
পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি আলমগীর হোসাইন জানিয়েছেন, শিশু দুটির পরিবারের কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকায় তাদের দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ গত রাত ৯টার দিকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
সূত্র : বাসস