পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের উপর সংঘটিত নৃশংসতার জবাবদিহি নিশ্চিত, তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বা তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসন হচ্ছে রোহিঙ্গা সঙ্কটের টেকসই সমাধান।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সফররত ওআইসি-ইউএনএইচসিআরের (ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা-জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার) যৌথ প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠককালে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব ওআইসি-ইউএনএইচসিআর যৌথ প্রতিনিধি দলকে এই মর্মান্তিক সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে জোরালো আন্তর্জাতিক সমর্থন না পাওয়া ও প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
ওআইসি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মানবিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিকবিষয়ক সহকারী মহাসচিব রাষ্ট্রদূত তারিগ আলী বাখেত; খালেদ খলিফার নেতৃত্বে ইউএনএইচআরসি প্রতিনিধি দল; হাইকমিশনারের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা; উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা (জিসিসি) ভুক্ত দেশগুলোর জন্য ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য উন্নয়ন অংশীজনরা ৬ থেকে ১১ আগস্ট বাংলাদেশ সফর করছেন।
পররাষ্ট্র সচিব উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়েছে।
তিনি রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন এবং তাদের প্রত্যাবাসনের অধিকার নিশ্চিত করতে জাতিসঙ্ঘ, আঞ্চলিক সংস্থা এবং অন্যান্য বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর অর্থবহ সম্পৃক্ততার বিষয়ে বাংলাদেশের অভিপ্রায় পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত মানবিক সহায়তারও প্রশংসা করেন।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওআইসি ও ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি দলের সফরের প্রশংসা করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ। তিনি বলেন, প্রতিনিধি দলটি এই সঙ্কট সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা লাঘবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করেছে।
তিনি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব উৎস থেকে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বাস্তবায়িত ভাসানচর প্রকল্প সম্পর্কেও প্রতিনিধি দলকে জানান।
ওআইসি মহাসচিবের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে পররাষ্ট্র সচিব গাম্বিয়ার দায়ের করা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলার প্রতি দৃঢ় সমর্থন এবং ওআইসির বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোকপাত বজায় রাখার আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য এর মহাসচিবের প্রশংসা করেন।
গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলাটি অপর্যাপ্ত অর্থায়ন এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য মানবিক কার্যক্রমে সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মাসুদ ওআইসির পাশাপাশি উপসাগরীয় দেশগুলোকে রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
বৈঠকে ওআইসির সহকারী মহাসচিব রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, সুরক্ষা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রশংসা করেন।
তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে ওআইসির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘প্রত্যাবাসনই এই সঙ্কটের চূড়ান্ত সমাধান।’
হাইকমিশনারের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং জিসিসিভুক্ত দেশগুলোতে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি অর্থায়নের উৎসে বৈচিত্র্য আনার পরামর্শ দেন।
এর আগে ওআইসি ও ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি দল ১০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে মুখ্য সচিব কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টি সফররত প্রতিনিধি দলের কাছে তুলে ধরেন এবং জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে (জেআরপি) আরো অবদানের আহ্বান জানান।
তিনি সফররত প্রতিনিধি দলকে রোহিঙ্গাদের জন্য যৌথভাবে নিবেদিত কর্মসূচি আয়োজনের অনুরোধ জানান এবং বিষয়টিকে বৈশ্বিক আলোচ্যসূচিতে সক্রিয় রাখতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
ওআইসি ও ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি দলে মিয়ানমারে নিযুক্ত ওআইসির বিশেষ দূত ইব্রাহিম আহদি খাইরাত, ইসলামিক সলিডারিটি ফান্ড (আইএসএফ), কাতার ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (কিউএফএফডি), কুয়েতের যাকাত হাউস এবং কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের (কেএফএইডি) প্রতিনিধিরা রয়েছেন। সূত্র : ইউএনবি