স্বীকৃত বিলের মূল্য যথাসময়ে পরিশোধ করা নিয়ে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে। এ গড়িমসির ফলে এ সংক্রান্ত অনিষ্পন্ন বিলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে; সেই সঙ্গে বাড়ছে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ।
চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ স্বীকৃত বিলে ব্যাংকগুলোর আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় চার হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর তিন মাস আগে আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার (প্রায় চার হাজার কোটি টাকা)। অর্থাৎ তিন মাসে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর পাওনা বেড়েছে প্রায় তিন কোটি ৭০ লাখ ডলার (প্রায় ৪০০ কোটি টাকা)। সম্প্রতি এসব বিল পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আবার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্বীকৃত বিল হলো আমদানি, রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ পণ্য সরবরাহের বিপরীতে সৃষ্ট ডকুমেন্ট। এ ধরনের ডকুমেন্টের বিপরীতে ব্যাংকগুলো গ্রাহকের পক্ষে স্বীকৃতি বা নিশ্চয়তা দেয়। সাধারণত আমদানিকারকের ব্যাংকের স্বীকৃতি বা নিশ্চয়তার বিপরীতে রপ্তানিকারকের ব্যাংক কিছু কমিশনের বিনিময়ে বিল কিনে নেয়। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে এটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নিয়ম। এর মাধ্যমে আমদানিকারকের ব্যাংকের দায় সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বীকৃতি প্রদানের পরে বিল পরিশোধ করা না হলে ব্যাংকারদের মধ্যে বিশ্বাসহীনতা ও আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়, যা ব্যাংক ব্যবসার ক্ষেত্রে অনাকাক্সিক্ষত। এ ছাড়া বিদেশেও ব্যাংকগুলোর গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়, যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, বিলে স্বীকৃতি প্রদানের পর তা পরিশোধ না করার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এটা যথাসময়ে পরিশোধ করা ব্যাংকারদের নৈতিক কর্তব্য। কিন্তু কোনো কোনো ব্যাংক বিনা কারণেই বিল পরিশোধে ঢিলেমি করে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, নিয়মানুযায়ী যথাসময়েই স্বীকৃত বিলের মূল্য পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারপরও এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে। কিছু কারণও অবশ্য আছে। অনেক সময় মাস্টার এলসির পেমেন্ট আসতে অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলসির শিপমেন্টে বিলম্ব হতে পারে। আবার কারচুপি বা জালিয়াতির কারণে শিপমেন্ট না হওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে। ফলে নির্ধারিত সময়ে চাইলেও স্বীকৃতদাতা ব্যাংক বিলের মূল্য পরিশোধ করতে পারে না। গত ২০ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে
বাংলাদেশ ব্যাংক-অথরাইজড ডিলার ব্যাংক (বিবি-এডি) ফোরামের নিয়মিত বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেও স্বীকৃত বিলের মূল্য যথাসময়ে পরিশোধ না হওয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে তুলে ধরা তথ্য বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বীকৃত ও মেয়াদোত্তীর্ণ অভ্যন্তরীণ বিলের পরিমাণ ছিল প্রায় ২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা গত মার্চে বেড়ে দাঁড়ায় ২৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারে। এ ছাড়া গত ডিসেম্বরে বৈদেশিক স্বীকৃত বিলের পরিমাণ ছিল প্রায় আট কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা মার্চে বেড়ে হয় ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অভ্যন্তরীণ ও বিদেশিÑ দুই ধরনের বিলই উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তাই এসব বিল দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
ওই বৈঠকে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বারবার নির্দেশনা দেওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন এলসি ইস্যুকারী ব্যাংক মেয়াদপূর্তিতে প্রচ্ছন্ন রপ্তানি বিলের মূল্য পরিশোধ করছে না। অনেক ক্ষেত্রে তা দীর্ঘ সময়ের জন্য বকেয়া থাকে, যা বেশ অস্বাভাবিক এবং ঋণপত্র ব্যবস্থার পরিপন্থি। এতে গ্রাহকের নগদ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং তারা স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে অসুবিধার মুখে পড়ছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সরোয়ার হোসেন দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, স্বীকৃত বিলের মূল্য যেন ব্যাংকগুলো যথাসময়ে পরিশোধ করে, সেটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। এ বিষয়ে কথা হয় বিবি-এডি ফোরামের নিয়মিত বৈঠকেও।