দামুড়হুদায় মাদকবিরোধী অভিযানে ফেনসিডিলসহ আটক জাহিদ হাসান জাহিদের (৪০) মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বিকেলে পুলিশের হাতে মাদকসহ আটকের পর বুকে ব্যথা অনুভব করে অসুস্থ হয়ে পড়েন জাহিদ। এ সময় পুলিশ জাহিদকে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জাহিদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু জাহিদের পরিবারের অভিযোগ, আটকের পর পুলিশ সদস্যরা জাহিদকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জাহিদের পরিবারের এ অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। নিহত জাহিদ দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের কলোনিপাড়ার মৃত লাল মোহাম্মদের ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার বিকেল চারটার দিকে দামুড়হুদা থানার পুলিশ উপজেলার জয়রামপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় দুই বোতল ফেনসিডিলসহ জাহিদ হাসান ও তাঁর সহযোগী হাবিবুরকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর বুকে ব্যথা অনুভব করে অসুস্থ হয়ে পড়েন জাহিদ হাসান। এ সময় তাঁকে দ্রুত দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পুলিশ সদস্যরা জাহিদ হাসানকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাহাবুবুর রহমান তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যার পর জাহিদ হাসান নামের এক ব্যক্তিকে জরুরি বিভগে নিয়ে আসে পুলিশ। তবে হাসপাতালে নেয়ার পূর্বেই তাঁর মৃত্যু হয়।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবির বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় জাহিদ হাসান নামের এক ব্যক্তিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। এ সময় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জাহিদ হাসানকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক মৃত জাহিদ হাসানের পরিবারের অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে বলেন, দুই বোতল ফেনসিডিলসহ জাহিদ ও তাঁর সহযোগীকে আটক করা হয়। আটকের পর জাহিদ বুকে ব্যথা অনুভব করে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, দামুড়হুদা থানার পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে দুই বোতল ফেনসিডিলসসহ জাহিদ হাসান ও হাবিবুর নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করে। আটকের পর জাহিদ হাসান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জাহিদের মৃত্যুর খবর পেয়ে জাহিদের পরিবারের সদস্যরাসহ আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন। এ সময় জাহিদকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের ওপর অভিযোগ তোলেন তারা।
নিহত জাহিদ হাসানের চাচা পেয়ার আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘শনিবার বিকেলে অকারণে জাহিদ ও হাবিবুরকে পুলিশ আটক করে প্রকাশ্যে তাদের পেটাতে থাকে। এমনকি গাড়িতে তুলে নিয়েও পেটানো হয় জাহিদকে। পুলিশের পিটুনিতেই জাহিদের মৃত্যু হয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বারান্দায় স্বামীর মৃত্যুর শোকে কাতর জাহিদের স্ত্রী লিপি খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ নিজেরাই ফেনসিডিল দিয়ে পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যেয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।’ এ সময় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এদিকে, জাহিদ হাসানের মৃত্যুর খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ছুটে আসেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে জাহিদের মৃত্যুর জন্য পুলিশকে দোষারোপ করে পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন উপস্থিত নেতা-কর্মীরা। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাসপাতাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
পরে শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিব্বির আহম্মেদ ও শিবানী সরকারে উপস্থিতিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কনক কুমার দাশ নিহত জাহিদ হাসানের সুরতহাল রিপোর্ট সম্পন্ন করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাহিদ হাসানের লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের লাশ ঘরে রাখা ছিল।
আজ রোববার ময়নাতদন্ত শেষে জাহিদের মরদেহ তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।