তিনজন পিএইচডি উপদেষ্টা পরপর ১১ বার প্রত্যাখ্যান করেন রাজুবকে। যা চরমভাবে নাড়া দেয় তাকে। এর পরই তিনি সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে আরেকটি ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভর্তি হন এবং দুটি ডক্টরেট একসঙ্গে চালিয়ে যান। রাজুব তার দ্বিতীয় ডক্টরেট শেষ করে তৃতীয় ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভর্তির পরই তার প্রথম সেই ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এভাবে পাশাপাশি দুই বা ততোধিক ডিগ্রি একসঙ্গে করে রাজুব ৩৪ বছর বয়সে মোট চারটি মাস্টার ডিগ্রি এবং চারটি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
বাংলাদেশী-আমেরিকান পুলিশ অফিসার রাজুব ভৌমিক। নোয়াখালীর কবিরহাটে তার জন্ম। জ্ঞান অর্জনকে যিনি জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। দীর্ঘ অধ্যবসায়ের ধারাবাহিকতায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন। এর মধ্যে রয়েছে মোট চারটি ডক্টরেট ডিগ্রি এবং চারটি মাস্টার ডিগ্রি। সেজন্য তাকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিক্ষিত পুলিশ স্বীকৃতি দিল ইউরোপের ‘অফিশিয়াল ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’। এতে তাকে পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষিত বলেও অভিহিত করা হয়। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে এসব ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এর পেছনের গল্প তুলে ধরা হলো আজ।
কুমিল্লা বোর্ডের আওতাধীন ওটারহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫ পেয়ে কৃতকার্য হলেও ২০০৪ সালে সরকারি মুজিব কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করেন রাজুব। পরে ২০০৫ সালে ফের পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন। ২০০৫ সালের শেষের দিকে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন। প্রথমে দেশটিতে ম্যাকডোনাল্ড রেস্তোরাঁয় চাকরি শুরু করেন। পড়াশোনার প্রতি তীব্র আকাঙ্খা থেকেই ২০০৬ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শেফার্ড ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হন।
কিন্তু কম সিজিপিএ’র কারণে ২০০৭ সালের শুরুর দিকে সেখান থেকে ছিটকে পড়েন। এতে দারুণভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। ২০০৭ সালের শেষ দিকে আবার নতুন করে স্নাতক ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা শুরু করেন। অবশেষে ২০১১ সালে তিনি আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এতে বেশ আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় তার এবং দেরি না করেই মাস্টার্সে ভর্তি হন।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার ডিগ্রি হওয়ায় ভর্তি প্রক্রিয়াতে বেশি সময় লাগেনি। মাস্টার্সের সব কোর্সে কোনোমতে পাস করলেও শেষ পরীক্ষায় পর পর দুবার ফেল করেন তিনি। তৃতীয় বার এই পরীক্ষায় ফেল করলে এই মাস্টার ডিগ্রি থেকে তিনি আজীবন বাদ হয়ে যেতেন। ভাগ্যক্রমে শেষ চেষ্টায় তিনি মাস্টার ডিগ্রি শেষ করেন। এতে তার আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন পিএইচডি করার।
শুরুতে তিনি পিএইচডি’র কোর্সগুলো খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন করেন গবেষণামূলক অংশ বাদে। একজন ডক্টরেট শিক্ষার্থীর সাধারণত তিনজন গবেষণা উপদেষ্টা থাকে এবং এদের মধ্যে একজন প্রধান বা চেয়ারের ভূমিকা পালন করেন। একজন ডক্টরেট শিক্ষার্থী গবেষণা সম্পন্ন করার পর তাদের কাছে পাঠান এবং এই তিনজনের চূড়ান্ত অনুমোদন এবং স্বীকৃতি নিয়েই ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন হয়। এখানেই হোঁচট খান তিনি।
রাজুব কখনো চিন্তাও করতে পারেননি তিনজন পিএইচডি উপদেষ্টা পরপর ১১ বার প্রত্যাখ্যান করবেন তাকে। যা তাকে চরমভাবে নাড়া দেয়। এর পরই রাজুব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে আরেকটি ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভর্তি হন এবং দুটি ডক্টরেট একসঙ্গে চালিয়ে যান। রাজুব তার দ্বিতীয় ডক্টরেট শেষ করে তৃতীয় ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভর্তির পরই তার প্রথম সেই ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এভাবে পাশাপাশি দুই বা ততোধিক ডিগ্রি একসঙ্গে করে রাজুব ৩৪ বছর বয়সে মোট চারটি মাস্টার ডিগ্রি এবং চারটি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
বর্তমানে তিনি নিউইর্য়ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে সার্জেন্ট পদে কর্মরত আছেন। সিটি ইউনিভার্সিটিতে আইন এবং অপরাধ বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক এবং সেন্ট এলিজাবেথ ইউনিভার্সিটিতে মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপনা করছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি লেখালেখিতেও সমান পারদর্শী। আয়না সনেট ও আয়না সংগীতের জনক ড. রাজুব ভৌমিকের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টিরও অধিক।
আরো উল্লেখ্য, ড. রাজুব ভৌমিক শুধু শিক্ষানুরাগী-ই নন, তিনি অভিনয় করেন, গানও লিখেন। তার কৃতিত্বের খবর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।