অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে একের পর এক ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ হয়ে গেলেও এখনো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-লন্ডন ও ঢাকা-সিঙ্গাপুর রুটে ফ্লাইট নিয়মিতভাবেই চলাচল করছে।
বিদেশ থেকে আসা যাত্রীর মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকলেও কী কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এখনো এসব রুটে ফ্লাইট চলাচল অব্যাহত রেখেছে তা নিয়ে সচেতন যাত্রী ও নাগরিকরাই প্রশ্ন তুলেছেন। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার বেলা পৌনে ২টায় লন্ডনের ম্যানচেস্টার থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইটটি (বিজি-২০৮, ড্রিমলাইনার-৭৮৭-৯০০) সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার যাত্রী নিয়ে (বিজি-০০৭) ম্যানচেস্টারের উদ্দেশে বিমানের ফ্লাইটটি ঢাকা ত্যাগ করেছিল।
বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে (বিজি-০০১) ড্রিমলাইনার (৭৮৭-৯০০) ঢাকা ছেড়ে যায়। ২৯৮ সিটের অত্যাধুনিক উড়োজাহাজে ২৯৩ জন যাত্রী ছিলেন।
এর আগে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে বিমানের (বোয়িং-৭৩৭) ফ্লাইটটি গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করে। ফিরতি ফ্লাইটটি আবার সিঙ্গাপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরে এসেছে বলে জানা গেছে।
গতকাল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, বিমান বাংলাদেশ এযারলাইন্সের দুটি ফ্লাইট শুক্রবার ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ঢাকা-লন্ডন রুটে বিমানের দুটি ফ্লাইট নিয়মিত চলাচল করছে। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর ও ব্যাংকক রুটেও চলছে। তবে শুনেছি ব্যাংকক রুটের ফ্লাইট চলাচল সম্ভবত শনিবার থেকে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে শনিবার (আজ) ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইটের শিডিউল রয়েছে। একইভাবে ম্যানচেস্টার রুটের ফ্লাইটটি রোববার ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার শিডিউল রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মোকাব্বির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ঢাকা-লন্ডন রুটে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট এখনো চলছে।
গতকাল সন্ধ্যার পর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কন্ট্রোল টাওয়ার সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, আজকে (শুক্রবার) সকাল থেকে এ পর্যন্ত বিমানের ঢাকা-লন্ডন ও ঢাকা-সিঙ্গাপুর রুট ছাড়া আর কোনো রুটে ফ্লাইট ছেড়ে যায়নি। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানসহ সব এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটই চলাচল করছে স্বাভাবিকভাবে। তিনি বলেন, বিদেশী এয়ারলাইন্সের মধ্যে কাতার, এমিরেটস, স্পাইস জেড, ইন্ডিগো, এয়ার অ্যারাবিয়া, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স, থাই এয়ারওয়েজ আজকে স্বাভাবিকভাবেই ছেড়ে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় এসেছে। বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলারও একটি ফ্লাইট সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় এসেছে। সেটি আবার রাতে ছেড়ে যাওয়ার শিডিউল রয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের কোনো ফ্লাইট চলাচল করেনি। এগুলো বন্ধ আছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিদেশীদের মাধ্যমে আমাদের দেশে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে। তারপরও কেনো ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করা হচ্ছে নাÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা তো অনেক রিস্কের মধ্যে আছি’। কিন্তু কী করব, চাকরির জন্য তো আমাদের এখানে প্রতিদিন আসতে হচ্ছে। এ ছাড়া তো আর কোনো উপায় দেখছি না বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
গতকাল বিমানবন্দরে প্রতিদিন ডিউটি করছেন এমন একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘আমাদের দেশের বিমানবন্দর যদি এক সপ্তাহ আগে বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হতো তাহলে আজকে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হতো না। মূলত এই ভাইরাসটি বিদেশ থেকেই যাত্রীরা নিয়ে আসছে। সেটাই আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারছি’। বিমান ম্যানেজমেন্টের উচিত হবে তাদের ফ্লাইট আপাতত কয়েক দিন বন্ধ রাখা। বর্তমানে বিমানবন্দর এলাকার অনেক স্থান খা খা করছে। তার পরও যাদের ডিউটি দেয়া হচ্ছে তাদের তো আর না গিয়ে উপায় নেই। যেসব এয়ারক্রাফট চলছে না সেগুলো হ্যাংগারে আছে। তবে এসব মেইনটেন্যান্সের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রকৌশলীরা নিয়মিত অফিস করছেন। তবে সবার মধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।