ঢাকায় ফেরদৌসী প্রিয় ভাষিণীর শিল্পকর্ম নকল করে প্রদর্শনী করার অভিযোগ উঠেছে নিউইয়র্কের আখতার আহমেদ রাশা ওরফে ভাস্কর রাশার বিরুদ্ধে। প্রিয় ভাষিণীর অসুস্থতার সময় সহযোগিতা হিসেবে কৌশলে কিছু টাকা দিয়ে তার সৃষ্টিকর্ম নিয়ে এমন জালিয়াতির প্রতিবাদ জানিয়ে বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন ফেরদৌসী প্রিয় ভাষিণীর মেয়ে ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী। ফেসবুকে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে ঘটনার আদ্যোপান্ত তুলে ধরে ফুলেশ্বরী বেশ কিছু প্রশ্নও তুলে ধরেছেন। তিনি এ ধরনের কর্মকা-কে চৌর্যবৃত্তি বলেও জোর দাবী করেছেন।
তিনি বলেন, আমি ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সন্তান, প্রতিবাদ জানিয়েছি, জানাচ্ছি আগামীতেও জানাবো। আমার মা ভাস্কর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর একাধিক ভাস্কর্য জনাব আখতার আহমেদ রাশা অনুপ্রাণিত হবার নামে নির্লজ্জ অনুকরণ বা কপি করে আসছেন। তার মধ্যে শরণার্থী নিয়ে মায়ের অসংখ্য কাজ রয়েছে যা যশোর রোড থেকে শরণার্থী বিভিন্ন শিরোনামে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছে। নকলের ফলাফল বিকৃতি ছাড়া কিছু নয়। আমার বিউটি বোর্ডিং সিরিজের কাজ ছাড়াও জানালা সিরিজের একাধিক কাজ কপি করেছেন তিনি। এর প্রতিবাদ করায় তিনি বিভিন্নজনের ইনবক্সে স্ক্রিনশট পাঠিয়ে আমাকে হেয় করতে গিয়ে আদতে নিজের শিক্ষা, রুচি এবং শিল্পী মনের পরিচয় প্রকাশ করছেন।
ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী বলেন, ইতোমধ্যে তিনি লতা খালার মাধ্যমে আব্বুর হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ে আন্তরিকভাবে খোঁজ নিয়েছিলেন কোভিডকালীন সময়ে। হঠাৎ করেই তিনি ফোন দিয়ে বিশ হাজার চারশ টাকা বিকাশ করেন আব্বুর জন্য। অবাক হই কারণ আমি তেমন কাউকেই জানাইনি আব্বু অসুস্থ। বন্ধু আতিকা রোমার মাধ্যমে লতা খালা জেনে তাকে বলেছেন বলে জানান তিনি। সেজন্য আমি তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মেসেজ পাঠাই। কিন্তু খেয়াল করলাম, ফেসবুকে একের পর এক কপি কাজ, কোনোটার শিরোনামও একই!
ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী অভিযোগ করে বলেন, মায়ের চার্লি চ্যাপলিন, যশোর রোড, শরণার্থী, কাঠ ঠোকরা, নারকেলের পাখি, বৃষ্টির কাজ, জানালার কাজ থেকে শুরু করে অসংখ্য কাজের কপি কাজ করা হয়েছে। শুধু তাই না, আমার জানালার কাজগুলোও তিনি কপি শুরু করেন। সরাসরি শিরোনামসহ। যেমন- বিউটি বোর্ডিং! একটি কাজে আমার মেয়ে মিনিয়েচার ডাকবাক্স যোগ করে, এরপর তিনিও ডাকবাক্স যোগ করেন। আমি ঝুল বারান্দা, সানশেড দিলে তিনিও তাই! সত্যি বলতে বিরক্ত হচ্ছিলাম। কাউকে অনুসরণ করে কাজ করা আর অনুকরণ বা নকল যে এক বিষয় না তার পার্থক্য কী তিনি (রাশা) বুঝলেন না? নাম না প্রকাশ করে আমি একটি পোস্ট দেই যদি তাতে তিনি বুঝতে সক্ষম হন! তাতেও লাভ হয় না দেখে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হই। বিষয়টি সম্পর্কে আমি সুভাশিষ ভৌমিক দাদা এবং মিথুন আহমেদ ভাইকে জানাই।
ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী বলেন, আমার মনে পড়ে যে, মা একবার যশোর রোড কপি কাজটির ছবি কারো মাধ্যমে অনলাইনে দেখে খোঁজ করেছিলেন আমার কাছে যে, কে এই নকলটা করলেন? খুব দুঃখ পেয়েছিলেন তিনি। এই ব্যক্তি যে রাশা ভাই তা বুঝতে আমার সময় লেগে যায়। অথচ তিনি যদি মায়ের অনুপ্রেরণায় নিজের মতো কাজ করতেন, তাতে মা এবং আমরা সকলেই খুশি হতাম!
ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী আরো বলেন, এই নকল কাজ তিনি প্রদর্শনীতে দিচ্ছেন, বিভিন্ন প্রথম সারির দৈনিকে সাক্ষাৎকার ছাপা হচ্ছে অথচ কারো মনে প্রশ্ন উঠছে না? আমাদের পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে এ নিয়ে অনেক সময় আলোচনা হয়েছে।
প্রশ্ন ঠিকই উঠলো যাদের সাথে এই বিষয়ে কোনোদিন আলাপই হয়নি এমন দুইজনের কাছ থেকে- নিশাত জাহান রানা আপা এবং সেলিনা শেলী আপা দুজনেই প্রিয়ভাষিণীকে, তার শিল্পকর্মকে কাছ থেকে দেখেছেন দীর্ঘ সময়। ‘কিছু কাজ একেবারেই ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর কাজের কপি মনে হচ্ছে’- রানা আপার এই মন্তব্য থেকে জানতে পারলাম, আখতার আহমেদ রাশা ঢাকায় প্রদর্শনী করছেন। স্বাভাবিকভাবেই খটকা লাগে যে, আমাকে তিনি বা গ্যালারি কোনো পক্ষ থেকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি! বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি বলা ধরেছেন যে, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে অনুসরণ করলেও তিনি নিজে নানা কিছু যোগ করেছেন যেখানে তিনি ওয়াল আর্টের কথা উল্লেখ করেছেন। যোগ তো কিছু তিনি করেছেন বটে কিন্তু তা বলে ওয়াল আর্ট যেটাকে বলছেন তা আসলে প্রথমে প্রিয়ভাষিণী এবং পরে আমার ত্রিমাত্রিক পেইন্টিং এর নকল! যিনি শিল্পচর্চা করেন তিনি কি চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নেন? সেলিনা শেলী আপা এই অনুকরণের প্রতিবাদে একটি লেখা পোস্ট করেন।
ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী বলেন, মা প্রিয়ভাষিণীকে দেখেছি যখন কোনো ইন্টারনেট, পিনটারেস্টের যুগ ছিলো না। তিনি নানা দেশ ভ্রমণও করেননি। তার অন্তদৃষ্টি আর নিমগ্নতায় প্রতিটি ভাস্কর্য অনন্য সাধারণ হয়ে ধরা দিতো। তার সন্তান হিসেবে কখনো চৌর্যবৃত্তির প্রবণতা মাথায় আসেনি। যা কিছু করতে চেষ্টা করি, তা নিজস্ব। তাই এ অন্যায় কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। এবারে সম্ভবত আখতার আহমেদ রাশা নার্ভাস হয়ে খেই হারালেন! বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্যায়কারী ভীতু হয়ে থাকেন। খেই হারিয়ে এবার জনাব আখতার আহমেদ রাশা আমার বাবার হাসপাতালে যাবার সময় সেই বিশ হাজার চারশ টাকা প্রাপ্তি স্বীকার এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনসূচক যে মেসেজ পাঠিয়েছিলাম তার স্ক্রিনশট জনে জনে ইনবক্সে পাঠিয়ে আমাকে হেয় করার নিকৃষ্টতম পথটা বেছে নিলেন। নানা ধরনের ফোন পেয়েছি সারাদিনে।
ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী বলেন, এখানে বলে রাখি, আমার বাবার চিকিৎসা বাবদ প্রায় ১২ লক্ষ টাকার ৯৯%আমার ভাই তূর্য বহন করেছে, বাকি ১% আমাদের স্বজনেরা। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় বাইরের কারো কাছ থেকে তা নেয়ার দরকার পড়েনি। জনাব আখতার আহমেদ রাশার বিকাশে পাঠানো বিশ হাজার চারশ টাকা যা আমি লতা খালার সম্মানে গ্রহণ করেছিলাম, তা অবিলম্বে কৃতজ্ঞচিত্তে, সবিনয়ে ফিরিয়ে দিতে চাই। তাকে যাতে কষ্ট করে জনে জনে ইনবক্সে না পাঠাতে হয় সেজন্য আমি পাবলিক পোস্টে তা প্রকাশ করছি। একটি প্রশ্ন ছিলো কেবল- উত্থাপিত চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের উত্তর কী এই স্ক্রিনশট থেকে পাওয়া যায়? এটা দিয়ে তিনি মায়ের এবং আমার কাজ অনুকরণের লাইসেন্স প্রাপ্ত হলেন বুঝি?
তিনি বলেন, আমার তো শুরু থেকে আজ অবধি একটিই কথা- শিল্পী হিসেবে তিনি তার স্বকীয়তা অর্জন করুন। অনেকেই বলছেন, মূল শিল্পকর্ম আর নকল কাজটির ছবি দিয়ে প্রমাণ দিতে। সে আমি দিতেই পারি। দেবোও। কিন্তু কোথায় যেন বাঁধছে! ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী কে ছিলেন, কেমন ছিলো তার ভাস্কর্য- তার প্রমাণও আজ দিতে হবে? কেন? আপনাদেরই কী দায়িত্ব ছিলো না তা খুঁজে পাওয়া?
শেলী আপার লেখার সুর টেনেই বলি, পুরুষতন্ত্র তার ক্ষমতার খেল দেখাচ্ছে- নির্লজ্জ নকলবাজিতে পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে অথচ মৃদু প্রতিবাদে জনাবেরা বিব্রত!
আমি ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সন্তান, প্রতিবাদ জানিয়েছি, জানাচ্ছি আগামীতেও জানাবো। আমার মা ভাস্কর ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর একাধিক ভাস্কর্য জনাব আখতার আহমেদ রাশা অনুপ্রাণিত হবার নামে নির্লজ্জ অনুকরণ বা কপি করে আসছেন। তার মধ্যে শরণার্থী নিয়ে মায়ের অসংখ্য কাজ রয়েছে যা যশোর রোড থেকে শরণার্থী বিভিন্ন শিরোনামে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছে। নকলের ফলাফল বিকৃতি ছাড়া কিছু নয়। আমার বিউটি বোর্ডিং সিরিজের কাজ ছাড়াও জানালা সিরিজের একাধিক কাজ কপি করেছেন তিনি। এর প্রতিবাদ করায় তিনি বিভিন্নজনের ইনবক্সে স্ক্রিনশট পাঠিয়ে আমাকে হেয় করতে গিয়ে আদতে নিজের শিক্ষা, রুচি এবং শিল্পী মনের পরিচয় প্রকাশ করছেন।
কে কার কত কালের বন্ধু, কার কি শিক্ষাগত যোগ্যতা, কে কত যুগ আমেরিকায় বসবাস করে বা কার প্রদর্শনীতে কত রথী-মহারথী উপস্থিত হলেন তা দিয়ে চৌর্যবৃত্তি ঢেকে দেওয়া যায় না।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অনেকেই ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনীকে চৌর্যবৃত্তি ও নকল করা বন্ধে আদালতের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ভাস্কর রাসার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুকের ইনবক্সে কয়েক বার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
তবে নবযুগে সংবাদটি প্রকাশের পর শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিটে নবযুগের ঢাকা অফিস প্রধান মেসবাহ শিমুলকে মেসেঞ্জারে আখতার আহমেদ রাশা জানান, তিনি ঢাকার বাইরে রয়েছেন। খুব শিগগিরই তিনি কল করবেন। যদিও এর আগের দিন বৃহস্পতিবার রাত ৯ টা ১২ মিনিটে তার কাছে নবযুগের পরিচয় দিয়ে নিউজের বিষয়ে কমেন্ট চাওয়া হয়।