বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন

চট্টগ্রামে স্ত্রী-সন্তানরা মিলে কেটে ৮ টুকরো করে হাসানকে

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৪৯ বার

নিখোঁজের ২৭ বছর পর হঠাৎ মো: হাসান (৬১) নামের বাবাকে পেয়ে যেন অমাবস্যার চাঁদ পেয়েছে পরিবারের সদস্যরা। শুরু হয় সম্পত্তি লিখে নেয়ার পরিকল্পনা। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় আঁকা হয় ঠান্ডা মাথায় খুনের ছক। অতঃপর স্ত্রী-সন্তানেরা ঠান্ডা মাথায় তাকে খুন করে তথ্যপ্রমাণ গোপন রাখতে হাসানের দেহ খণ্ড খণ্ড করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দেন ভিন্ন ভিন্ন স্থানে।

কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তের জালে আটকে গেছেন স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। হত্যায় জড়িত ছোট ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী আনারকলি পলাতক রয়েছেন।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরের ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী রোড এলাকায় একটি বস্তা থেকে মো: হাসানের শরীরের অবশিষ্ট অংশও উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তার স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও সন্তান মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করেছে পিবিআই।

প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘হাসান ২৭-২৮ বছর ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। কোথায় ছিলেন সেটা তার স্ত্রী-সন্তানরা জানতেন না। সম্প্রতি তিনি ফিরে আসেন। বাঁশখালীতে হাসানের পৈতৃক কিছু সম্পদ আছে। স্ত্রী-সন্তানরা সেগুলো তাদের নামে লিখে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন হাসানের ওপর। কিন্তু হাসান সেগুলো দিতে সম্মত ছিলেন না।

নিহত মো: হাসান (৬১) চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলী গ্রামের সাহাব মিয়ার ছেলে। পিবিআইয়ের সংগ্রহ করা তার জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) অস্থায়ী ঠিকানা লেখা আছে, সিলেট সদরের সাধুর বাজার সংলগ্ন রেলওয়ে কলোনির জামাল মিয়ার গ্যারেজ।

একেএম মহিউদ্দিন সেলিম জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানার আকমল আলী সড়কের পকেট গেইট এলাকার জমির ভিলার ৭ নম্বর বাসায় হাসানকে খুন করা হয়েছে। ওই বাসায় হাসানের ছোট ছেলে তার স্ত্রী-সন্তানসহ থাকেন। হত্যার ১০ দিন আগে চিকিৎসার নামে হাসানের স্ত্রী চট্টগ্রাম শহরে ছোট ছেলের বাসায় আসেন। ঘটনার দিন বড় ছেলে মোস্তাফিজুরও সেই বাসায় যান। হাসানকেও ডেকে নেয়া হয়। রাতে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এর একপর্যায়ে স্ত্রী, দুই ছেলে এবং ছোট ছেলের স্ত্রী মিলে পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করে। ঠান্ডা মাথায় লাশ কেটে টুকরো করে ট্রলিব্যাগে করে আট টুকরো ফেলা হয় পতেঙ্গা ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় খালে। মাথা এবং বুকসহ শরীরের আরো কিছু অংশ বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ছোট ছেলেই তার বাবার শরীরের টুকরোগুলো বিভিন্নস্থানে ফেলেন।

নিহতের পরিচয় শনাক্তের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের মর্মস্পর্শী রহস্য উদঘাটনের কথা তুলে ধরে মহিউদ্দিন সেলিম আরো জানান, ট্রলিব্যাগ থেকে মানবদেহের আটটি খণ্ড উদ্ধারের পর আঙ্গুলের ছাপ এবং নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে আমরা প্রথমে হাসানের পরিচয় নিশ্চিত হই। এরপর আকমল আলী রোডে তার ছোট ছেলের বাসার সন্ধান পাই। ওই বাসার আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহর পর পুরো বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে। হত্যার পর শরীরের অংশবিশেষ বস্তায় ভরে বের করার বিষয়টি ফুটেজে স্পষ্ট হয়েছে। আর এটা বের করছিলেন হাসানের ছোট ছেলে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ওই বাসায় হাসানের স্ত্রী ও বড় ছেলে ছিলেন। হাসানের অবস্থানও রাতে সেখানে ছিল।

ঘটনার পর গা ঢাকা দেয়া ছোট ছেলে ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই কর্মকর্তা একেএম মহিউদ্দিন সেলিম।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, আটক হাসানের স্ত্রী ও বড় ছেলের দেয়া তথ্যে নগরীর আকমল আলী সড়কের খালপাড়ে একটি খাল থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় টেপে মোড়ানো শরীরের একটি খণ্ড উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে মাথার সন্ধানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর পতেঙ্গা বোট ক্লাবের অদূরে ১২ নম্বর গেইটে ট্রলিব্যাগটি পাওয়া যায়। কফি রঙের ট্রলিব্যাগে ছিল মানব শরীরের ২ হাত, ২ পা, কনুই থেকে কাঁধ এবং হাঁটু থেকে উরু পর্যন্ত অংশ।

এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদির এক বা একাধিক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com