মহামারী করোনাভাইরাসে গতকাল এক দিনেই ৫৪ জন এবং গত দুই সপ্তাহে মোট ৩৩৫ জন মারা যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী সেদেশে তিন সপ্তাহের জন্য লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল রাত সাড়ে আটটায় জাতির উদ্দেদে ভাষণে তিনি সমগ্র দেশবাসীকে নিজ নিজ বাড়িতে থাকার আহবান জানিয়েছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। একইসাথে সরকারের নিদের্শনা না মানলে জরিমানা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদিকে ব্রিটেনে করোনায় মারা যাওয়া ৩৩৫ জনের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী হচ্ছে ১৮ বছর বয়সী এক যুবক। ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস (এনএইচএস) জানিয়েছে, বেশিরভাগ বৃদ্ধ হলেও, ৩৬ বছর বয়সী এক নার্স ও ৪১ বছর বয়সী একজন মারা গেছে ওই ভাইরাসে। এদিকে হেলথ সেক্রেটারি ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, যারা সরকারের স্বাস্থ্য সেবার পরামর্শ মানছেন না তাদেরকে স্বার্থপর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গত রোববার বিভিন্ন পার্কে লোকজনের জনসমাগম ছবি দেখে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রয়োজনে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এছাড়া করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ইন্টারন্যাশনাল ফাস্ট ফুড চেইন রেস্টুরেন্ট ম্যাকডোনাল্ডসসহ জনপ্রিয় খাবারের দোকান নান্দোস, কস্তা ক্যাফে, গ্রেগস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার খাবারের দোকানে বসে খাওয়া নিষিদ্ধ করলেও ওসব দোকান টেইকওয়ে সার্ভিসও বন্ধ করে অতিরিক্ত সতর্কতার কারনে। সোমবার থেকে ওসব দোকান বন্ধ রাখা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার ঘোষণায় বলেছেন, একমাত্র জরুরি প্রয়োজনে কিছু ক্রয় করতে , শরীর চর্চা , জরুরি ওষুধ ও জরুরি কাজের কর্মীরা ঘর থেকে বের হতে পারবেন। শরীর চর্চার জন্য পার্কে একাকি সাইকেলিং ও দৌড়ানো বা পায়ে হাঁটার জন্য বের হতে পারবেন। তবে সেখানে যেনো জনসমাগম না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে শরীরচর্চা করতে হবে। একসাথে দু’জন বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে, একই সাথে পারলৌকিক ক্রিয়া ব্যতীত বিয়েসহ সকল সামাজিক অনুষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় দোকান বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
পার্কের ভিতর খেলা ও অনুশীলন করার অঞ্চলগুলো বন্ধ রাখা হবে। গির্জা ও মসজিদগুলোর মতো অন্যান্য উপাসনা স্থানগুলোও বন্ধ রাখতে হবে। জরুরি কাজ ছাড়া রাস্তা, ট্রেন এবং বাসে চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকার ঘোষিত নিয়ম ভঙ্গকারী যেকোনো ব্যক্তিকে কমপক্ষে ৩০ পাউন্ড থেকে ১ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লোকজন নির্দেশনা মেনে না চলার কারণে ইচ্ছা না থাকলেও লকডাউন শুরু করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। তিনি বলেন কোনো প্রধানমন্ত্রী এ জাতীয় পদক্ষেপ নিতে চান না। আমি জানি এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের জীবন, তাদের ব্যবসা ও তাদের কাজের ব্যাঘাত ঘটাবে। এজন্যই আমরা শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য একটি অভূতপূর্ব কর্মসূচী হাতে নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন সপ্তাহ পর পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। বরিস জনসন বলেন, শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঝুঁকি মোকাবেলা করছে ব্রিটেন। সকলে মিলে এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে হবে, এমন একটি সময় আসবে যখন বিশ্বের কোন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই ভাইরাসের মোকাবেলা করতে পারবে না, কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে ভেনটিলেটর, ইনটেনসিভ বেড, ডাক্তার ও নার্স নেই ।
সোমবার রাতে (এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) করোনা ভাইরাসে ৩৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ব্রিটেনে। যা গতকাল পর্যন্ত ছিলো ২৮১ জনে। আজ নতুন করে ৫৪ জনের মৃত্যু খবর নিশ্চিত করেছে এনএইচএস। এদিকে সর্বমোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৬৫০ জন। এদিকে হেলথ সেক্রেটারী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, যারা সরকারের স্বাস্থ সেবার পরামর্শ মানছেন না তাদেরকে স্বার্থপর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গতকাল রোববার বিভিন্ন পার্কে লোকজনের জমায়েতের ছবি দেখে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এনএইচএস জানিয়েছে গত ২৪ ঘন্টায় যারা মারা গেছেন তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ৪৭ থেকে ১০৫ বছরের মধ্যে। এদিকে শুধুমাত্র লন্ডনে গত ২৪ ঘন্টায় ১৬ জন মারা গেছেন। এর আগে এক দিনে লন্ডনে এত মৃত্যু হয়নি।
এর পরে যুক্তরাজ্যে ম্যাকডোনাল্ডসের ১২৭০টি শাখা, নান্দোসের প্রায় ৪০০টি শাখাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শত শত শাখা বন্ধ রাখা হবে। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ঘোষণার পর থেকে এসকল শাখা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার কর্মচারী চাকিরি হারালেও সরকার ঘোষিত ৮০ পার্সেন্ট বেতনের সুবিধা ভোগ করতে পারবে তারা।