সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) শুক্রবার পর্যন্ত যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, নতুন করে কারো মৃত্যুর তথ্য না আসায় মৃতের মোট সংখ্যা আগের মতো পাঁচেই রয়েছে। যদিও বাংলাদেশে নতুন করে আরো চারজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যাদের মধ্যে দুজন চিকিৎসক রয়েছেন। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮-এ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে সরকারি-বেসরকারি অফিসসহ সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ওষুধ বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া সব ধরনের দোকানপাট ও গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। ১০ দিনের সাধারণ ছুটির প্রথম দিন কার্যত লকডাউন ছিল দেশ। ‘ঘরবন্দি’ ছিল মানুষ। তবে গণপরিবহন বন্ধ করার আগে ছুটি ঘোষণা করায় ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে রাজধানীর অনেক মানুষ। ফলে গ্রামাঞ্চলেও করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে দেশের মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে ভীতিও কাজ করছে। এমনকি চিকিৎসকদের মধ্যেও কাজ করছে করোনাভীতি। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চিকিৎসকদের এ ব্যাপারে সক্রিয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। চিকিৎসকদের অনেকেই নানা অজুহাতে দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখাতে শুরু করেছেন। কারণ হচ্ছে চিকিৎসকদের অনেকের কাছেই পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট বা পিপিই নেই। করোনাভাইরাসের কারণে তাই তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই জ্বর, সর্দি-কাশি দেখলে কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এ ছাড়া প্রথম দিকে চিকিৎসাকর্মীদের এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য মানসিক ও নিরাপত্তাজনিত প্রস্তুতিও ছিল না। শুধু চিকিৎসক নন, নার্স ও টেকনোলজিস্টদের নিরাপত্তা নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। অনেক আবেদন-নিবেদন করার পরও এখন পর্যন্ত নার্সরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক উপকরণ পাননি বলে খবরে প্রকাশ। সংগত কারণে অনেক এলাকায়ই নার্সরা ভয় পাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চিকিৎসকদের যত ঝুঁকিই থাক না কেন, রোগী ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। যুদ্ধের মধ্যেও চিকিৎসকদের জীবনবাজি রেখেই দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেই ব্রত নিয়েই এ পেশায় আসতে হয় চিকিৎসকদের। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের মনোবল শক্ত রাখার কথা বলছেন চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকেও চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। চিকিৎসকরা মানুষের জীবন বাঁচান, তাই তাঁদের জীবন বাঁচাতে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। চিকিৎসকদের ভয় কাটাতে না পারলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া মুশকিল হবে।
আর সে কারণেই চিকিৎসকদের সবার প্রয়োজনীয়সংখ্যক সুরক্ষা উপকরণ বা পিপিই সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এরই মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ১০ হাজার টেস্ট কিট, ১০ হাজার পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট বা পিপিই এবং এক হাজার ‘ইনফ্রারেড থার্মোমিটারের’ একটি চালান বিশেষ বিমানে ঢাকায় পৌঁছেছে। চীনের আলিবাবা ও জ্যাক মা ফাউন্ডেশন আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ৩০ হাজার টেস্ট কিট ও তিন লাখ মাস্ক পাঠাচ্ছে।
দেশে এখন করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে সম্মুখ সারিতে দাঁড়িয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা এই সময়ের যোদ্ধা। তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিতে হবে সব ব্যবস্থা।