শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৫ অপরাহ্ন

শীতের সবজিতে রোগ নিরাময় ও পুষ্টি সংরক্ষণ

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৬৬ বার

শীতের সবজিতে রয়েছে বহুবিধ ঔষধি গুণ। এগুলো স্বাদ ও পুষ্টিমানেও অনন্য। এ জন্য প্রতিদিনের খাবারে শীতের সবজিকে প্রাধান্য দিতে হবে। সচেতনভাবে যদি এ সবজি খাওয়া হয়, তাহলে এর পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয় না।

বাঁধাকপি : খ্রিষ্টপূর্ব চারশ শতক থেকেই বাঁধাকপি ঔষধি হিসাবে স্বীকৃত। রোমানরা উৎসবের দিনে অতিরিক্ত মদ্যপানের আগে বাঁধাকপি কচিপাতা চিবিয়ে খেত মাতাল না হওয়ার জন্য। এটি ক্যাফেটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং যকৃতের উপকার করে। বাইরে ও ভেতরের পাতার চেয়ে একেবারে মাঝামাঝি অংশের পাতায় পুষ্টি বেশি। কারণ এতে ক্যারোটিন বেশি থাকে।

বাঁধাকপির সালফার উপাদান দিয়ে টনিক তৈরি করা হয়। যা কিনা শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণে সাহায্য করে। ভিটামিন কে, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি-এর দারুণ উৎস এ বাঁধাকপি। এ ছাড়া এতে ম্যাঙ্গানিজ, কপার, পটাশিয়াম, আঁশ ও ফলিক অ্যাসিড আছে।

বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা যেমন হৃদরোগ, ভেরিকোজ ভেইন, পায়ের ক্ষত, পেপটিক আলসার, ত্বকের শুষ্কতা, অ্যাকজিমা, মানসিক চাপ প্রতিরোধ করে বাঁধাকপি। স্কার্ভি রোগে এটি ফলদায়ক। রক্তের প্রোথ্রোম্বিন তৈরিতে সহায়তা করে বাঁধাকপি। আমাদের দেশে কিছু কিছু বেগুনি বাঁধাকপি পাওয়া যায়। এটি ফাইকোসিয়ানিন সমৃদ্ধ। ত্বকের সুস্থতা, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, চোখের সুস্থতা ছাড়াও আটিস্টিক শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য বেগুনি বাঁধাকপির রস খুবই উপকারী।

পুদিনাপাতা : বর্তমানে পশ্চিমা ও চীন দেশে নানা ধরনের রোগ সারাতে পুদিনা ব্যবহার হচ্ছে। এটি যন্ত্রণা নিবারক হিসাবে কাজ করে। পুদিনা বদহজম দূর করেও রক্তবাহী নালিকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া দূর ভ্রমণে অসুস্থতা, বমিভাব, পেটের অসুখ, জ্বর, রক্তস্বল্পতা, মাথার যন্ত্রণা ইত্যাদি কমাতে পুদিনা সিদ্ধ পানি বেশ উপকারী। সারা বিশ্বে মিন্ট টি’ বেশ জনপ্রিয়। সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে গেলে পুদিনার পাতা ফুটন্ত পানিতে ফেলে ভাপ নিলে উপকার পাওয়া যায়। দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা ও ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমে পুদিনা ভালো কাজ করে।

টমেটো : টমেটোর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপিন ক্যানসার রোধে বড় ভূমিকা পালন করে। টমেটো রান্না করে খেলে এর লাইকোপিন শরীর ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে। এতে প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড আছে বলে পায়ের ও হাতের তালু জ্বালা করলে এর ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়। চুলপড়া ও হাঁপানিতে টমেটো উপকারী।

ব্রকলি : ব্রকলিতে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, মেলেনিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ব্রকলি ত্বক, চুল, চোখ ভালো রাখে। এটি আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমায়। ক্যানসাররোধী হিসাবে পরিচিত। এ ছাড়া অ্যালার্জি ও প্রদাহের সমস্যা কমায়।

পেঁয়াজ : প্রাচীনকাল থেকেই ঠান্ডাজনিত অসুবিধায় পেঁয়াজ ব্যবহার হয়ে আসছে। আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতকারীরা পেঁয়াজের রসের সঙ্গে মধুমিশ্রিত করে সিরাপ তৈরি করে। এ সিরাপ কফের ওষুধ হিসাবে ভালো কাজ করে। দেহের অস্বস্তিভাব, ঝিমানো, স্নায়ুবিক দুর্বলতা ও বদহজমে পেঁয়াজ উপকারী। এটি রক্তচাপ, কলস্টেরল কমায় ও রক্তজমাট বাঁধা দূর করে।

ফুলকপি : এটি ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটাডমিন সি, ভিটামিন কে ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। ফুলকপি দেহের রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখে। এর মধ্যে বিশেষ যৌগ যেমন-সালফেরাপেন, গ্লুকো-ব্রাসিমিন, গ্লুকোরাফামিন-এর জন্য লিভার সুস্থ থাকে। ফুলকপি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। অন্ত্রের ক্যানসার ও সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। সন্তান প্রসবের পর কোনো কোনো স্ত্রীলোকের মুখে মেছতার দাগ পড়ে। যদি কয়েকদিন ফুলকপি, বাঁধাকপি ও গাজরের জুস খাওয়া হয় তবে তা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়।

গাজর : ভিটামিন এ অর্থাৎ ক্যারোটিন সমৃদ্ধ সবজি। শিশুকে ছয় মাস পর থেকে এক চা-চামচ গাজরের রস খাওয়াতে পারলে ভালো হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণ, চোখ ও ত্বকের সংক্রমণে গাজর খুবই উপকারী। এতে চোখের দীপ্তি বাড়ে, শুষ্ক ত্বক ও চুল সজীব হয়। গাজর ক্যানসার ও হার্টের সমস্যার প্রতিরোধক। কাঁচা গাজর চিবিয়ে খেলে দাঁতে একটা চকচকে ভাব আসে।

লেটুস পাতা : সালাদের অন্যতম অনুষঙ্গ। কাঁচা খাওয়া হয় বলে সম্পূর্ণ পুষ্টি পাওয়া যায়। এতে আছে প্রচুর আঁশ, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২ ও ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি১২। এটি দেহের রক্ত কণিকা গঠন করে ও হজমশক্তি বাড়ায়। লেটুসপাতা কোস্টকাঠিন্য দূর করে। এ ছাড়া দেহে অতিরিক্ত পানি জমতে দেয় না। সানবার্নের ফলে ত্বকে যে কালচে ভাব পড়ে তা দূর করে।

বিট : বিটে রয়েছে পর্যাপ্ত লৌহ, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন এ ও নাইট্রিক অ্যাসিড। কাঁচা বিটের রসদ্ধ রক্ত পরিষ্কারক ও শক্তিবর্ধক। এটি লিভারকে ভালো রাখে, রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং হজমে সহায়তা করে। বিটের রস দেহের অক্সিজেন ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি রক্তচাপ ঠিক রাখে।

ক্যাপসিকাম : লাল-সবুজ-হলুদ এ তিন রঙের ক্যাপসিকাম অথবা বেলপেপার পাওয়া যায়। এটি পেশি সচল রেখে পিঠ ও কোমরের ব্যথা দূর করে। মাথাব্যথা, ত্বকের সুরক্ষা ও পাকস্থলীর অসুস্থতায় বেশ কার্যকর। এটি হজমশক্তি বাড়ায়। চোখের সুস্থতা বজায় রাখে ও অ্যাজমা প্রতিরোধে ভালো ফল দেয়। সবুজ ক্যাপসিকামের চেয়ে লাল-হলুদ ক্যাপসিকামের গুণাগুণ বেশি।

পালংশাক : এ শাক অক্সালিক অ্যাসিড ও লৌহ সমৃদ্ধ। পালংশাক রক্তস্বল্পতায় বেশ উপকারী। কোষ্ঠবদ্ধতা ও মানসিক অবসাদে পালংশাক বেশ ফলদায়ক। অক্সালিক অ্যাসিডের জন্য এর ক্যালসিয়াম তেমন কাজে লাগে না।

লালশাক লৌহ সমৃদ্ধ ও সহজে হজম হয়। এটি রক্তস্বল্পতা রোধে উপকারী।

মুলা : এতে আছে ফসফরাস, লৌহ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সালফার ও ভিটামিন এ। মুলার রস পিত্তাশয়কে গরম করে পিত্তক্ষরণে উদ্দীপনা জোগায়।
পুষ্টি সংরক্ষণ

সবজি কেটে দীর্ঘ সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর সবটুকু ভিটামিন নষ্ট হবে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ব্রকলি পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ৭৪-৯৭ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষয় হয়। বেশিরভাগ সবজি ফ্রিজে পাঁচ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। এ ছাড়া খবরের কাগজ মুড়েও সবজি রাখলে ভালো থাকবে। কম পানিতে কম সময়ে সবজি সিদ্ধ করলে অথবা ভাপিয়ে শীতের সবজি খেলে এর পুষ্টিগুণ বজায় থাকবে। আবার যাদের তেল প্রয়োজন, তারা সিদ্ধ সবজিতে সামান্য তেল মিশাবেন। যাতে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিডের কোনো ঘাটতি না হয় এবং হজমেও অসুবিধা না হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com