মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন

বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ পাচ্ছে না সরকার

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৪৭ বার

বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সঞ্চয়পত্র থেকে চলতি অর্থবছরে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবে তিন মাসে (জুলাইি-সেপ্টেম্বর) এক টাকাও ঋণ পায়নি, উপরন্তু আগের নেয়া ঋণের এক হাজার ২৬৫ কোটি টাকা সরকারের বাড়তি ফেরত দিতে হয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংক খাত থেকে সরকারের বাড়তি ঋণের জোগান দিতে গিয়ে কমছে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ; যা কিনা গত ২৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের এক পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে মাসে দেড় হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তিন মাসে মুনাফাসহ গ্রাহকরা তুলে নিয়েছে ২২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা, যেখানে জমা দিয়েছে ২১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এ হিসেবে সঞ্চয়ত্র থেকে নিট ঋণ না পেয়ে বরং ফেরত দিতে হয়েছে এক হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। অথচ তিন মাসে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে এ খাত থেকে ঋণের জোগান দেয়ার কথা ছিল সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নানা কারণে এ খাত থেকে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো মানুষের আয় কমে গেছে। অথচ ব্যয় কমেনি, বরং অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। গরিরের আমিষ বলে খ্যাত মুরগির ডিম এখন নাগালের বাইরে চলে গেছে। এক ডজন মুরগির ডিম এখন ১৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আলু ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে প্রতি কেজি দেড় শ’ টাকা। এভাবে মানুষের অতিপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু সে অনুযায়ী আয় বাড়েনি। বরং অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দার কারণে বেতনভাতা দিতে পারছে না। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে শ্রমিক ছাঁটাই করছে। এতে অনেক কর্মক্ষম শ্রমিক বেকার হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই বাড়তি ব্যয়ের কারণে সংসার চলা দায় হয়ে পড়েছে, সেই সাথে যারা বেকার হয়ে যাচ্ছেন তারা চোখে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখছেন না। এমনি পরিস্থিতিতে যারা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করেছিলেন, তারা সঞ্চয় ভেঙে ফেলছেন। এতেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমে গেছে। সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্রে জমা পড়েছে ছয় হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। সেখানে পরিশোধ করা হয়েছে ছয় হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। নিট বিনিয়োগ কমেছে ১৪৮ কোটি টাকা। আবার তিন মাসের হিসাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিন মাসে ২১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকার বিনিয়োগের বিপরীতে উত্তোলন হযেছে ২২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এ উত্তোলনের মধ্যে মুনাফা উত্তোলন হয়েছে ১০ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। বাকি ১২ হাজার ১০৬ কোটি টাকাই মূলধন উত্তোলন করে নিয়েছেন গ্রাহকরা। এ থেকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে মানুষ সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলছেন।

এদিকে সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো ঋণ না পাওয়ায় সরকার ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ব্যাংক খাত থেকে বাড়তি ঋণ নিচ্ছে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ স্থিতি ছিল দুই লাখ ৩৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। আর গত ১৮ অক্টোবর শেষে স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাস ১৮ দিনে ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৪৯ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ বেড়ে যাওয়াকে মনে করছেন। তাদের মতে, বর্ধিত হারে কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে পারলে ব্যাংক খাত থেকে বাড়তি ঋণ নিতে হবে না।

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com