শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন

ঝুঁকি নিয়ে ফিরছেন পোশাকশ্রমিকরা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২০
  • ২৭১ বার

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে রোববার থেকে কিছু কিছু তৈরি পোশাক কারখানা খুলছে। আজ শনিবার ছুটি শেষ হওয়ায় গত দু’দিন ধরে কর্মস্থলে যোগ দিতে ফিরছেন পোশাককর্মীরা। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই ফিরতে নারাজ। তাই অনেক কারখানা বকেয়া বেতন পরিশোধের কথা বলে কর্মস্থলে আনছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে করোনার ঝুঁকি নিয়েই ঢাকা বা আশপাশের কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা।

আজ শনিবার দুপুরে নাটোর থেকে একদল শ্রমিক ট্রাকে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় ফিরছেন। করোনার এই প্রাদুর্ভাবের সময় একজন থেকে আরেকজন কমপক্ষে ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে নির্দেশনা দেয়া হলেও এসব শ্রমিক গায়ের সাথে গা লাগিয়ে ফিরছেন কর্মস্থলে। তাদের বহন করা ট্রাককে নাটোর সদর উপজেলার এ্যাসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু হাসান আটকিয়ে দিলেও পরে ছেড়ে দেন। আবু হাসান তার ফেসবুকে ট্রাকের উপর গাদাগাদি করে পোশাক শ্রমিকদের ঢাকায় ফেরার ছবি দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘এরা ঢাকাগামী ট্রাকের যাত্রী। সকলেই বিভিন্ন গার্মেন্টসে কাজ করে। নাটোর সদরের দত্ত পাড়া ব্রিজের পাশে থেকে বেলা ১২.০০ টায় ছবিটি তুলেছি। হামীম গ্রুপের একজন কর্মীর সাথে কথা বলে জানা গেল বেতন নিতে যাচ্ছে। পরে তার মাধ্যমে উক্ত কোম্পানির এডমিন অফিসারকে ফোন করে বললাম এই যুগে বেতন দিতে হলে অনলাইনেও বেতন দেয়া যায়। খামোখা ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন যে? তিনি বললেন কোম্পানির সিদ্ধান্ত, আমার কিছু বলার নাই। রিস্কি জার্নি ফর করোনা ভাইরাস। ট্রাকটি ছেড়ে দিলাম। ভাবছি…..।’

এ ব্যাপারে কথা হয় অ্যাসিল্যান্ড আবু হাসানের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ওই দিক দিয়ে একটা অভিযানে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার সময় ট্রাকে পোশাককর্মীদের এমন অবস্থা দেখে আটকে দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। ট্রাকে বিভিন্ন পোশাক কারখানার কর্মী ছিলেন। বেতন দেবেন বলে তাদের কারখানায় যাওয়ার কথা বলেছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে এক কারখানার এডমিন অফিসারের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়ার পর ট্রাকটি ছেড়ে দেই।

জানা যায়, রোববার থেকে কারখানা খুলছে। এজন্য শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার তাগাদা দিচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। হাজির না হলে বেতন কাটা যাবে। কারো কারো মালিক চাকরিচ্যুতিরও হুমকি দিয়েছেন। সে কারণে করোনার ভয় নিয়েই কষ্ট করে ঢাকায় ফিরছেন তারা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ট্রাক বা মালবাহী যেকোনো গাড়িতে করে ঢাকায় ফিরছেন তারা। অনেকে আবার ভেঙ্গে ভেঙ্গে অর্থাৎ একই গাড়িতে না এসে কিছু দূর এক গাড়িতে এসে, তারপর আরেক গাড়িতে-এভাবে ঢাকায় পৌঁছছেন। অনেকে আবার পায়ে হেঁটে বা রিক্সা ভ্যানে করেও ফিরছেন কর্মস্থলে।

পোশাক কারখানায় কর্মরত এক শ্রমিক জানান, একটি টি-শার্ট তৈরি করতে ২৫-৩০ জন শ্রমিকের হাতের ছোঁয়া লাগে। একজন ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এদের সবাই আক্রান্ত হবেন। এরপর আশপাশের লোকেরাও আক্রান্ত হবে। পোশাক কারখানায় এখন অবশ্যই ছুটি থাকা উচিত। কিন্তু, তা তো হচ্ছে না। আমাদের কর্মস্থলে যোগ দিতে তাড়া দেয়া হচ্ছে।

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা গার্মেন্টস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত মালিকদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। দেশে প্রায় ১১ শ’ কারখানায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্ডার বাতিল হয়েছে। তারা বলছেন, কারখানা খোলা রাখা বা বন্ধের বিষয়ে সরকারের বাধ্যবাধকতা নেই। কারখানাগুলোতে বিদেশি ক্রেতাদের ক্রয়াদেশে পোশাক তৈরি হচ্ছে। কিছু কারখানায় স্বাস্থ্যকর্মীদের পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) ও মাস্ক তৈরির অর্ডার পাওয়া গেছে। এই অর্ডার হাতছাড়া হলে বড় বিপর্যয় তৈরি হবে এই সেক্টরে।

বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক জানান, আমরা ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছিলাম। এর পর থেকে কারখানাগুলো চালু হবে। কারখানা পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের রক্ষা করার জন্য সব স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকের সব দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মালিকের থাকবে। কারখানা চালু রাখা বা বন্ধ রাখা যেকোনো অবস্থাতেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন যথাসময়ে পরিশোধ করতে হবে।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কেউ চাইলে কারখানা খোলা রাখতে পারবেন। পিপিই ও মাস্ক বানাতে কারখানাগুলো খোলা থাকবে। পাশাপাশি খোলা রাখা কারখানাগুলোতে শ্রমিকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা নতুন করে ছুটির সময় বাড়াব না। যাদের কাজ আছে, তারা কারখানা খুলবে। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে কলকারখানা চলবে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু ক্রেতা এখনো তাদের সাথে কাজ করতে চান। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানায় পিপিই ও অন্য সুরক্ষা পণ্যের রফতানি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। করোনাসংক্রান্ত কিছু উপকরণের বিশ্ববাজারে চাহিদা তৈরি হয়েছে। এসব চাহিদা কাজে লাগানোর জন্য কারখানা খোলার বিষয়টি আসছে- যোগ করেন মোহাম্মদ হাতেম।

বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, আজ শনিবারের পর থেকে কেউ কারখানাটি পরিচালনা করবেন কি না তা একান্তই তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কারখানা পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের রক্ষা করার জন্য সব স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি নিশ্চিত করতে হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের তৈরি পোশাক কারখানা খোলা রাখা যাবে। করোনার এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী নতুন পণ্যর চাহিদা তৈরি হয়েছে। সেই চাহিদা অনুসারে নতুন পণ্য তৈরি করে রফতানি করতে হবে। বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন সুযোগ আসছে। এসব সুবিধা যেন ব্যবসায়ীরা কাজে লাগান। তবে কাজ করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

এ বিষয়ে পোশাক শ্রমিকদের ১১টি সংগঠনের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়কারী মাহবুবুর রহমান ইসমাঈল বলেন, আমরা বার বার বলে এসেছি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে আপাতত কারখানা বন্ধ রাখার জন্য। কিন্তু নানা অজুহাতে সারাদেশে অচলাবস্থার মধ্যেও মালিকপক্ষের অনেকেই কারখানা চালু রেখেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com