শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

করোনায় ঝিমিয়ে পড়ছে ব্যাংকের তদারকি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২০ এপ্রিল, ২০২০
  • ২৮২ বার

ব্যাংকের তদারকি কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ছে। করোনাভাইরাসের কারণে হালনাগদ করা যাচ্ছে না খেলাপি ঋণ, প্রভিশন, নগদ আর্থিক ব্যবস্থাপনাসহ সামগ্রিক সূচক। সীমিত ব্যাংক লেনদেনে শিথিল করা হয়েছে ব্যাংকগুলোর তথ্য পাঠানোর সময়সীমা। এর ফলে ১৫ দিন, মাসিক, ত্রৈমাসিক কোনো হালনাগাদ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারছে না দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই যাচাই-বাছাই করা যাচ্ছে না ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক চিত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা গেছে, নীতিমালা ও নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন সময় ব্যাংকগুলো তাদের আর্থিক লেনদেনের হালনাগাদ তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়ে থাকে। প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে রয়েছে খেলাপি ঋণ, সিআরআর প্রতিবেদন। সাধারণত খেলাপি ঋণ, ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণের অবস্থাসহ সামগ্রিক ঋণকার্যক্রমের তথ্য প্রতি তিন মাস পর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে পাঠিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো। এসব তথ্য নিয়ে প্রতি তিন মাস পর পর প্রতিবেদন তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ব্যাংকগুলোর পাঠানো তথ্যে কোনো গরমিল আছে কি না তা যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকটি বিভাগ। কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা নির্ভর করে এসব তথ্যের ওপর। তাই কোনো ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা কতটুকু সুসংহত তা যাচাই-বাছাই করার অন্যতম মাধ্যম হলো খেলাপি ঋণের প্রতিবেদন। এর ওপর ভিত্তি করেই একজন গ্রাহক ব্যাংকে আমানত রাখে। কেউ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকে। সর্বশেষ ডিসেম্বর প্রান্তিকের তথ্যের ভিত্তিতে হালনাগাদ প্রতিবেদন তৈরি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তথ্য নিয়ে চলতি মাসে প্রতিবেদন তৈরির কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত ব্যাংক লেনদেন হচ্ছে।

এ কারণে গত মার্চ প্রান্তিকের তথ্য চলতি মাসে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তথ্য পাঠানোর নির্দেশনা শিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে গত ১১ এপ্রিল এক সার্কুলারে করোনাভাইরাসের কারণে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে সীমিত ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এ সময়ে ব্যাংকগুলো সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ কারণে বর্তমান প্রেক্ষাপটে খেলাপি ঋণ, প্রভিশন সংরক্ষণসহ সামগ্রিক বিবরণী চলমান অবস্থায় পাঠানোর প্রয়োজন হবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি উন্নতি হলে এবং সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর ব্যাংকগুলো স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসার পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে আলোচ্য বিবরণীগুলো পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অনুরূপভাবে ব্যাংকগুলোর বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার অর্থাৎ সিআরআর সংরক্ষণ ও ব্যাংকগুলোর নগদ আর্থিক ব্যবস্থাপনার তথ্যও পাঠানোর নির্দেশনাও শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট থেকে। সাধারণত প্রতিদিন আমানতের বিপরীতে সিআরআর সংরক্ষণ করতে হয়। আবার ১৫ দিন অন্তে তা সমন্বয় করা হয়। সারা মাসের সিআরআর সংরক্ষণের হিসেব সাধারণত প্রতি এক মাস পরপর ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠিয়ে থাকে। কোনো ব্যাংকের সিআরআর ঘাটতি হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত মার্চ মাসের সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণের তথ্য চলতি মাসে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটির মধ্যে ব্যাংকগুলো স্বাভাবিক লেনদেন করতে পারছে না। এ কারণে ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট থেকে গত ১২ এপ্রিল এক সার্কুলারের মাধ্যমে সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণের নির্দেশনা শিথিল করে দিয়েছে। একই সার্কুলারে প্রতি মাসের ব্যাংকগুলোর তলবি ও চলতি আমানতের তথ্য পাঠানোরও নির্দেশনাও শিথিল করে দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত ওই নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্বাভাবিক ব্যাংকিং শুরু হওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে আলোচ্য তথ্যগুলো পাঠাতে বলা হয়েছে।

একই ভাবে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট থেকেও ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন পাঠানোর ওপর নির্দেশনা শিথিল করেছে। এ বিষয়ে গতকাল সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টে তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ গ্রিন ব্যাংকিং সংক্রান্ত কার্যক্রমের ত্রৈমাসিক বিবরণীসহ অন্যান্য বিবরণী সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর ব্যাংকগুলো স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসলে পরবর্তী ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে আলোচ্য বিবরণীগুলো দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা শিথিল করায় ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন আর্থিক সূচক হালনাগাদ হচ্ছে না। এতে ওই সব সূচক যাচাই-বাছাইও করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনগুলো হালনাগাদ না হওয়ায় তদারকিও করা যাচ্ছে না। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরো কত দিন লাগে তার ওপর নির্ভর করছে বিভিন্ন সূচকের তথ্য হালনাগাদ করা। তত দিন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর চিত্র জানা সম্ভব হবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com