বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দু’টি বেসরকারি ব্যাংক একীভূত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইসলামী শরীয়াহ ধারায় পরিচালিত এক্সিম ব্যাংক এবং সাধারণ ব্যাংকিং ধারায় পরিচালিত পদ্মা ব্যাংক দু’টি একীভূত হওয়ার কথা জানিয়েছে। সোমবার এ সম্পর্কিত চূড়ান্ত সমঝোতা স্মারক দুই ব্যাংকের মধ্যে সই হবে।
এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাদের দুই সপ্তাহ আগে যেকোনো একটি দুর্বল ব্যাংকের সাথে একীভূত হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবেই দুই ব্যাংকের কর্মকর্তারা আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মহোদয় আমাদের অ্যাডভাইস করেছেন যে আপনারা যদি মিলেমিশে যেতে পারেন তাহলে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। আর যদি আপনারা নিজেরা আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারেন তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আমরা পরামর্শ দেবো অথবা সর্বশেষ আমরা ইমপোজ করব।’
‘ইমপোজ করতে গেলে এটা আরো খারাপ দেখা যায়। আমরা নিজেরাই আলোচনা করে দু’টি ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা একত্রিত হয়ে যাবো।’
পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রোম্পট কারেক্টিং অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের সংস্কারের জন্য দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী ব্যাংকের সাথে একীভূত করে দেয়ার যে নির্দেশনা ছিল সে অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক খাত সংস্কারের লক্ষ্য থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংককে একীভূত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে ভালো। তবে এটি আসলেই কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নির্ভর করবে একীভূত ব্যাংকগুলো কতটা ভালভাবে পরিচালিত হতে পারে তার ওপর।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দেশের ৫০টি বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ১০টি ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে। এগুলো টিকে থাকতে হলে অন্যান্য ব্যাংকের সাথে একীভূত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।
২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ব্যাংক খাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রোম্পট কারেকটিভ অ্যাকশন-পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক প্রকাশ করে। ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ থেকে এটি কার্যকর হবে। এর মাঝামাঝি সময়ে দেশের ব্যাংকগুলোকে চারটি আলাদা ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথমদিকের ক্যাটাগরিতে সবল ব্যাংক এবং ক্রমান্বয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে স্থান দেয়া হয়েছে। এই ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংককে নানা ধরণের উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করা।
দুই ব্যাংকের অবস্থা কেমন?
পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে তুলনামূলক শক্ত অবস্থানে রয়েছে এক্সিম ব্যাংক। শরীয়াহ ভিত্তিক এই ব্যাংকটির ক্যামেলস রেটিংও ভালো। ২০২৩ সালের রেটিং অনুযায়ী ‘বি’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে এটি। অবশ্য বাংলাদেশে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোনো ব্যাংক নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্যামেলস রেটিং হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি মানদণ্ড, যা ব্যবহার করে একটি ব্যাংকের সার্বিক অবস্থার মূল্যায়ন করা হয়। ক্যামেলস বা CAMELS এর পূর্ণ রূপ হলও Capital adequacy(মূলধনের পর্যাপ্ততা), Asset quality(সম্পদের গুণগত বৈশিষ্ট্য), Management(ব্যবস্থাপনা দক্ষতা), Earnings(আয়), Liquidity(তারল্য), and Sensitivity(স্পর্শকাতরতা)।
এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার জানিয়েছেন, এক্সিম ব্যাংকের মোট পোর্টফোলিও প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা। আর পদ্মা ব্যাংকের পোর্টফোলিও মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
পদ্মা ব্যাংক অনেক দুর্বল। তাদের পেইড আপ ক্যাপিটাল কম। আমানতের পরিমাণও কম। ঋণ যতটুকু আছে সেটার মান খুবই খারাপ।
‘আমরা চেষ্টা করবো এটাকে উন্নত করার জন্য,’ বলেন তিনি।
পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী, চার ধরনের বা ক্যাটাগরির ব্যাংক আছে। এর মধ্যে পদ্মা ব্যাংক ক্যাটাগরি ফোর-এ ছিল।
তিনি বলেন, পদ্মা ব্যাংকের ব্যালেন্স-শিটের আকারটাও খুব ছোট।
‘এক্সিম ব্যাংকের প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চের যে ব্যালেন্স-শিট তার তুলনায় আমার পুরো ব্যাংকের ব্যালেন্স-শিট ৪০% লোয়ার আর কী।’
তারেক রিয়াজ খান বলেন, এর আগে যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে ফার্মার্স ব্যাংক থেকে পদ্মা ব্যাংক করা হয়েছিল এ ব্যাংকটিকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি। কারণ এই ব্যাংকের এনপিএল বা খেলাপি ঋণ অনেক বেশি ছিল। আয়ের তুলনায় ব্যয় সব সময়ই বেশি ছিল। এ কারণে পরিচালনা ব্যয়ে বছরের পর বছর ধরে ঘাটতি চলছিল। এতে করে মূলধন কমে যাচ্ছিল। এসব কারণে ব্যাংকও আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
২০১৩ সালে অনুমোদন পেয়েছিল ফার্মার্স ব্যাংক। এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। নানা ধরণের অনিয়ম-দুর্নীতিরি কারণে প্রতিষ্ঠার চার বছরের মাথায় সঙ্কটে পড়ে এটি। ২০১৭ সালে পদ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তখন ওই ব্যাংকটিকে বাঁচাতে পরিবর্তন আনা হয় পরিচালনা পর্ষদ এবং নির্বাহী কমিটিতেও। বছর দুয়েক পর নামও পরিবর্তন করে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। তবে তারপরও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ব্যাংকটি।
যা যা বদলাবে
এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার জানিয়েছেন, পদ্মা ব্যাংকের নিজস্ব পরিচয় আর থাকবে না। এটা পুরোপুরি এক্সিম ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়ে যাবে।
সারাবিশ্বে দুই রকমভাবে ব্যাংক একীভূত হয়। একটি মার্জ, আরেকটি অ্যাকুইজেশন।
তবে নজরুল ইসলাম বলেছেন যে “দু’টি ব্যাংকের মধ্যে মার্জিং হচ্ছে। এটা অ্যাকুইজেশন না।”
তিনি আরো জানিয়েছেন, একীভূত হওয়ার পর পদ্মা ব্যাংক আর সাধারণ ব্যাংকিং নিয়মে পরিচালিত হবে না। বরং এটি ইসলামি শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং ধারায় চলে আসবে।
‘পদ্মা এখন অটোমেটিক্যালি হয়ে যাবে। কারণ ও তো মার্জ হয়ে যাচ্ছে। ওরা ট্র্যাডিশনাল ব্যাংক হোক বা যে ব্যাংকই হোক না কেন, ওদের তো আর নিজস্ব আইডেনটিটি থাকতেছে না। ওদের সেলফ আইডেনটিটি আর থাকবে না।’
‘প্রত্যেক জায়গায় ব্যানার হয়ে যাবে এক্সিম ব্যাংক। এটায় পদ্মার কোনো কিছু থাকবে না আর, কোন নাম থাকবে না। শেয়ার হোল্ডাররা যেমন আছে তেমনি থাকবে। আমানতকারীদের আমানতও সুষ্ঠু অবস্থায় থাকবে কারণ এক্সিম ব্যাংক বড় ব্যাংক।’
কাজেই ওদের আমানতকারীদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই বলেও জানান তিনি।
সারাদেশে পদ্মা ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় প্রায় এক হাজার মানুষ চাকরিরত আছে। তাদের চাকরিরও কোনো ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পদ্মা ব্যাংকের যে ৬০-৭০টি শাখা আছে সেগুলো পরিচালনা করার জন্যও এক্সিম ব্যাংকের জনবলের দরকার হবে। সে কারণে এক্সিম ব্যাংক নতুন করে কোন জনবল নিয়োগ করতে চায় না। বরং বর্তমানে থাকা পদ্মা ব্যাংকের জনবল দিয়েই সেগুলো পরিচালনা করতে চায়।
‘যেহেতু ওরা ওই ব্যাংকটাকে বোঝে, আমরা কাউকে সেখান থেকে বিদায় করব না। নিরুৎসাহিত করব যাওয়ার জন্য। উৎসাহিত করব থাকার জন্য। কারণ একসাথে হয়তো আমরা এটিকে ভালো করে তুলতে পারব।’
কেন পদ্মা ব্যাংক?
পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সবল ব্যাংকগুলো নিজেরাই পছন্দ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যে, তারা আসলে কোন ব্যাংকের সাথে একীভূত হতে চায়। এই সময়ের মধ্যে যদি কোনো ব্যাংক নিজেরা একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই সিদ্ধান্ত দিবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে একীভূত হতে হবে।
এর অংশ হিসেবে পদ্মা ব্যাংক বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ব্যাংক হিসেবে এক্সিম ব্যাংকের সাথে একীভূত হয়ে যাবে।
সোমবার এমওইউ সই হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সম্পর্কিত নীতি অনুযায়ী পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হবে।
এক্সিম ব্যাংকই পদ্মা ব্যাংককে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দেয় বলে জানান তিনি। আর পদ্মা ব্যাংক সেটা গ্রহণ করে।
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বাংলাদেশের ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের ডেকে নির্দেশনা দিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশের ক্যামেলস রেটিং এবং পিসিএ ফ্রেমওয়ার্কের র্যাঙ্কে যে স্ট্রং ব্যাংক আছে তাদেরই বলা হয়েছিল যে তারা পছন্দ করবে। এর জের ধরেই এক্সিম ব্যাংক পদ্মা ব্যাংককে বেছে নেয়।’
তিনি জানান, দুর্বল ব্যাংকের আসলে পছন্দ করার কোনো সুযোগ নেই যে, তারা কোন ব্যাংকের সাথে একীভূত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফ্রেমওয়ার্কেও এটা নেই।
এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, খারাপ অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে পদ্মার অবস্থাই তুলনামূলক কম খারাপ। এ কারণেই এটিকে বেছে নেয়া।
”‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’ এ দেখেছি মার্কেটে যেসব ব্যাংক রয়েছে যেগুলোর অবস্থা আরো বেশি খারাপ। পদ্মার চেয়ে আরো খারাপ ব্যাংকও আছে। সে কারণে আমরা সেদিকে যাই নাই।”
তিনি বলেন, ‘গভর্নর সাহেবকে আমি প্রপোজ করলাম। উনি বললেন, আপনারা মিলে গেলে আমার কোনো আপত্তি নাই। এরপর বোর্ড মিটিং করলাম। বোর্ড মিটিংয়ে শতভাগ ডিরেক্টর উপস্থিত ছিলেন এবং এখানেই সর্বসম্মতিক্রমে দুই ব্যাংকের মিলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।”
কতটা কাজ করবে?
পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খান বলেন, একটা দুর্বল ব্যাংককে যখন একীভূত করা হয় তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু পলিসি সাপোর্ট দুই ব্যাংকই নেয়। যাতে করে সবল ব্যাংকের রিটার্ন আর্নিংয়ে কোনো ধরণের প্রভাব না পড়ে।
তিনি বলেন, পদ্মা ব্যাংকের যে নেটওয়ার্ক আছে অর্থাৎ ৬০টি শাখা ও ৪০টি উপশাখা আছে। এগুলো দখল করে তারা তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনার অংশ বানিয়ে ফেলতে পারবে। ‘কারণ আমাদেরও তো একটা কাস্টমার বেইজ আছে। এমন তো না যে আমাদের জিরো কাস্টমার বেইজ।’
তিনি বলেন, পদ্মা ব্যাংকের দুই হাজার ১৮৬ কোটি টাকার একটা ডিপোজিট বেইজ আছে, প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার কাস্টমার আছে। এটা সবল ব্যাংক নিয়ে নিলে তার ব্যাংকিং সুবিধাটা কাস্টমারদের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া যাবে। এতে করে পদ্মা ব্যাংকের কাস্টমারদের ডিপোজিট সুরক্ষিত হয়ে যাবে। আর একইসাথে এক্সিম ব্যাংক পদ্মা ব্যাংকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ব্যবসায়িকভাবে আরো লাভবান হওয়ার কৌশল তৈরি করবে।
‘এটা দুই ব্যাংকের জন্যই একটা উইন-উইন সিচুয়েশন। আমাদের ব্যাংকের আর কনোন অস্তিত্ব থাকবে না। তবে এক্সিম ব্যাংক ম্যাসিভ লেভেলের বেনেফিট পাবে দীর্ঘমেয়াদী।”
সাবেক ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা সবল ও দুর্বল ব্যাংক একীভূত হওয়ার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, দেশের ব্যাংক খাতের সংস্কার ও উন্নয়নে এটি ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে এই একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া কী হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কী ধরণের নির্দেশনা দেয় তার ওপর নির্ভর করবে যে পুরো বিষয়টি আসলে কতটা ফলপ্রসূ হলও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হাসিনা শেখ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যেটা বলেছে যে, মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে সবল ও দুর্বল ব্যাংকের একীভূত করার মাধ্যমে ভালো কিছু তৈরি করা। এটি স্বাগত জানানোর মতো বিষয়।
তবে চূড়ান্ত ফলাফল কেমন হবে সেটা দুর্বল ব্যাংকের সম্পদের কী হবে, দায়ের কী হবে, খারাপ ঋণের কী হবে সেগুলো খতিয়ে দেখা ব্যতীত বলার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
‘সম্পদের বণ্টন কিভাবে হয় এবং ল্যায়াবিলিটিটা অনেক বড় ইস্যু হয়ে যাবে এখানে। এক্সিম ব্যাংকের মতো একটা ভালো ব্যাংক ল্যায়াবিলিটির কতটা শেয়ার করবে? ব্যাড লোনের একটা বড় ইস্যু আছে। তার চেয়েও অনেক বড় ইস্যু আছে মার্কেট রেপুটেশন, কাস্টমারের ট্রাস্ট, কাস্টমারের কনফিডেন্স- এক্সিম ব্যাংকের জন্য এগুলো বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে।’
এছাড়া এক্সিম ব্যাংক হচ্ছে শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক। অন্যদিকে পদ্মা ব্যাংক কনভেনশনাল ব্যাংক। এটা একটা ইস্যু রয়েছে।
‘আমরা চাই না যে, পদ্মা ব্যাংক যেভাবে ফার্মার থেকে পদ্মা হয়েছিল, এক্সিমের মতো ভালো ব্যাংকটা ওইভাবে যাক এটা আমরা ডেফেনিটলি চাই না।’
তিনি মনে করেন এ কারণে, একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এতো নিখুঁতভাবে করা উচিত যাতে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
অনেকটা একই রকমের মত দিয়েছেন সাবেক ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ নুরুল আমিনও। তিনি বলেন, দু’টি ব্যাংক যেহেতু আলাদা ব্যাংকিং নীতিতে চলে। তাই একীভূত হওয়ার পর যেকোনো একটি ধারায় কাজ করতে হবে। কারণ একীভূত ব্যাংক দুই ধারায় কাজ করতে পারবে না। যদি না তারা একটি উইং হিসেবে কাজ করে।
এক্ষেত্রে এক্সিম ব্যাংক যেহেতু সবল এবং তারা ইসলামি ধারায় পরিচালিত হয় তাই পদ্মা ব্যাংককেও তাদের ধারায় চলে যেতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
লাভের দিক থেকে বলা যায়, ব্যবস্থাপনার দিক থেকে কিছুটা ব্যয় কমবে। শাখার সংখ্যা বাড়লে ব্যবসার পরিধি বাড়বে। কিন্তু খারাপ ঋণের বিষয়টি এখান থেকে বাদ দিতে হবে আগে। তবে সব মিলিয়ে লাভের পরিমাণটাই বেশি হবে বলে মনে করেন তিনি।
তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হবে কাস্টমারদের বিশ্বাসের জায়গাটা গড়ে তোলা। আর এর প্রতি মানুষের আস্থা তখনই তৈরি হবে যখন দু’টি ব্যাংক একসাথে ভালোভাবে পরিচালিত হতে পারবে।
সূত্র : বিবিসি