রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি ব্যাংক অন্য দুটি ব্যাংকের সাথে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। ব্যাংক দুটি হলো বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এর মধ্যে কৃষি ব্যাংকের সাথে একীভূত হচ্ছে রাকাব। আর সোনালী ব্যাংকের সাথে যুক্ত হচ্ছে বিডিবিএল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বুধবার সরকারি ব্যাংক চারটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সাথে আলাদা সভা করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়া হয়।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো: নাছের ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগির ব্যাংকগুলো একীভূত করার বিষয়ে নীতিমালা দেবে। এরপর নীতিমালা মেনে নিজ নিজ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারপর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: মেজবাউল হক বলেন, দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার বিষয় ধারাবাহিক মিটিং হচ্ছে। গতকালও মিটিং ছিল, অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার প্রয়োজন হলে আমরা জানাব। এর বেশি কিছু বলা যাবে না বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ মুখপাত্র।
অনিয়ম-জালিয়াতিতে সঙ্কটে পড়া পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) শরীয়াহভিত্তিক বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের সাথে একীভূত হওয়ার বিষয় ঘোষণা দেয়া হয়। এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গত ২৫ মার্চ বেসরকারি খাতের এ দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সই হয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের পর সরকারি খাতের দুই ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে সরকারি দুর্বল দুই ব্যাংককে সরকারি মালিকানাধীন অপর দুটি ব্যাংকের সাথে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যেহেতু সরকারি ব্যাংকের সাথে সরকারি ব্যাংককে একীভূত করা হবে, তাই রাকাব ও বিডিবিএল ব্যাংকের কর্মীদের চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
গতকালের সভায় সোনালী ও কৃষি ব্যাংককে জানানো হয়, যে দুটি ব্যাংককে একীভূত করা হবে, তাদের খারাপ সম্পদ বা মন্দ ঋণ কিনে নেবে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি। এরপর শুধু ভালো সম্পদ নিয়ে ব্যাংক দুটিকে একীভূত করা হবে। এতে চাপে পড়বে না ভালো ব্যাংকগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিডিবিএল, রাকাবের পর রাষ্ট্রীয় মালিকানার বেসিক ব্যাংকও একীভূত করার আলোচনায় আছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানার আরেক বড় ব্যাংক অগ্রণীর সাথে বেসিককে একীভূত করা হতে পারে। সরকারি ব্যাংকের বাইরে সমস্যাগ্রস্ত পদ্মা ছাড়াও বেসরকারি খাতের আরো ৮টি ব্যাংক একীভূতকরণের আলোচনা রয়েছে।
এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার, মূলধনের পর্যাপ্ততা, নগদ অর্থের প্রবাহ, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আর্থিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সূচক ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। সেই সূচকে কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ডের নিচে থাকা ব্যাংকগুলোকে ‘দুর্বল’ শ্রেণিভুক্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংক টেনে তোলার শেষ পদক্ষেপ হিসেবে অন্য ভালো ব্যাংকের সাথে একীভূত করার বিষয়টি আসবে। সরকারও তাতে সায় দিয়েছে।