‘১৩ দিন বয়সের অসুস্থ নাতনিকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ডাক্তার পেলাম না। এখন আমি কোথায় যাব? কোথায় ডাক্তার পাব? হাসপাতালের হট লাইনে একাধিকবার ফোন করলেও কেউ রিসিভ করেননি।’ চলমান করোনা দুর্যোগে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাবেক গাড়ী চালক আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী সাহিদা আক্তার (৪৫)।
এছাড়া জয়মন্টপ ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের ৬ মাসের অন্তঃসত্তা রূপা আক্তার পেটে ব্যাথা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে গাইনী বিভাগে ডাক্তার না পেয়ে বিনা চিকিৎসায় ফিরে গেলেন তিনি।
এভাবে আরো অনেক রোগী গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে এসে ডাক্তার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, চলমান মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে একজন মেডিকেল অফিসার ও সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকের দেহে করোনাভাইরাস সনাক্ত হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৪-৫শ’ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসতেন। ভর্তি থাকতেন প্রায় ৪০-৫০ জন রোগী। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ক্রমশ কমতে শুরু করে। বর্তমানে বহির্বিভাগে রোগী আসে ১৫-২০ জন। বেডে ভর্তি রয়েছেন ৮-১০ জন রোগী। ভ
১২ জন মেডিক্যাল অফিসার ও ৩ জন সার্জনের মধ্যে বেশির ভাগই হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। নার্স ও অফিসের অন্য স্টাফরাও অনিয়মিত। পুরো উপজেলা লকডাউনের মধ্যেও গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ২২ এপ্রিল হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আবু হানিফের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তিনি সর্বশেষ ১৬ এপ্রিল হাসপাতালে বর্হিবিভাগে ডিউটি করেন।
এর আগে সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক উম্মে কুলসুম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। হাসপাতালের এ দু’স্টাফ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় অন্যান্য চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া অধিকাংশ হোম কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ায় হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দেন। এতে সরকারি এ হাসপাতাল রোগী শূন্য হয়ে পড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সেকেন্দার আলী মোল্লাহ বলেন, একজন ডাক্তার ও সহকারি স্বাস্থ্য পরির্দকের শরীরে কোভিড-১৯ পজেটিভ হওয়ায় এখানে কর্মরত প্রায় সকলে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তারপরও সীমিত ডাক্তার ও স্টাফ নিয়ে জরুরি বিভাগে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া টেলিমেডিসিন লিংকের মাধ্যমেও জরুরি চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।