মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ অপরাহ্ন

গরমে লিভার-কিডনি সুস্থ রাখতে খান লিচু

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২ জুন, ২০২৪
  • ১০৩ বার

লাল টুসটুসে রসাল ও মিষ্টি লিচুর স্বাদ এই গরমে আরাম দেয়। জিভে জল আনা এই ফল স্বাদগ্রন্থিতে উদ্দীপিত করে তা নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। স্বাদ ও গন্ধের জন্য লিচু অনেকের কাছেই প্রিয়। রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে ত্বকের সুরক্ষাতেও লিচু দারুণ কার্যকর।

গ্রীষ্মকালীন এই রসালো ফল খুব কম সময়ের জন্য আসে। গ্রীষ্মকালীন এই রসালো ফল শুধু স্বাদই ভরপুর নয়, পুষ্টিগুণও আছে যথেষ্ট পরিমাণ। এ রসাল ফলে রয়েছে প্রচুর মিনারেল। এর বাইরে এতে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট থাকে খুব অল্প পরিমাণে। ফ্যাট না থাকয় সবার জন্য উপকারি একটি ফল। পাশপাশি এতে ক্যালরিও কম, তাই সবার জন্যে উপযুক্ত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমকালে শরীরকে চাঙ্গা ও সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ডায়েটে রাখবেন এই ফল। অনেকে মনে করেন, লিচু বেশি খেলে পেটে ব্যথা শুরু হয়। কথাটি সত্য। তবে সঠিক নির্দেশিকা মেনে লিচু খেলে এই ফলের বিকল্প কিছু হয় না।

বাড়বে ইমিউনিটি

মানুষের শরীরের আশপাশে বসবাস করে একাধিক ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস। আর এসব জীবাণু কিন্তু একটু জায়গা পেলেই শরীরের উপর আক্রমণ শানাতে পারে। তাই বিপদের ফাঁদ এড়িয়ে চলতে চাইলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেই হবে। আর সেই কাজে আপনাকে সাহায্য করবে লিচু। কারণ এই ফলে রয়েছে ভিটামিন সি-এর ভাণ্ডার। নির্দিষ্ট করে বললে, ১০০ গ্রাম লিচু থেকে প্রায় ৭১.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আর এতটা ভিটামিন সি কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজে সিদ্ধহস্ত। তাই তো বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত লিচু খাওয়ার পরামর্শ দেন।

কাছে ঘেঁষবে না ক্যানসার

ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। আর একবার এই রোগের ফাঁদে পড়লে কিন্তু জীবনে কষ্টের শেষ থাকবে না। তাই যেন তেন প্রকারেণ এই রোগের থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে নিতে হবে। আর এই কাজে আপনার হাতের পাঁচ হতে পারে লিচু। কারণ এই ফলে রয়েছে কার্যকরী কিছু অ্যান্টিক্যানসারাস উপাদান। আর এসব উপাদান কিন্তু ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি আটকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই তো বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত এই ফল খেয়ে রসনাবিলাস করার পরামর্শ দেন।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য কার্যকরী একটি খাবার হতে পারে লিচু। এতে ক্যালোরি থাকে খুব কম। যে কারণে ওজন বাড়ার ভয় থাকে না। আঁশযুক্ত হওয়ার কারণে লিচু খেলে তা দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে। নিয়মিত লিচু খেলে হজমশক্তি উন্নত হয়। বেশি পরিমাণে চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট থাকা সত্ত্বেও, নিয়মিত লিচু খাওয়া ক্লান্তি এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ওয়ার্কআউটের পরে এবং পেটের জেদি চর্বিও কমাতে পারে।

কিডনির জন্য উপকারী

কিডনি ভালো রাখতে খাবারের দিকে নজর রাখা জরুরি। লিচুতে পর্যাপ্ত পানি এবং পটাসিয়াম থাকার কারণে তা কিডনিতে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এই ফল ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্বও কমায়। যে কারণে কমে কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি।

লিভার থাকবে সুস্থ-সবল

শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেওয়া, হজমে সাহায্য করা সহ একাধিক জরুরি কাজ একা হাতে সামলায় লিভার। কিন্তু আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের অভিশাপের দরুন ভুগছে যকৃত। এই অঙ্গে বাসা বাঁধছে কিছু গুরুতর অসুখ। তাই বিপদ ঘটার আগেই আপনাকে লিভারের হাল ফেরাতে হবে। আর এই কাজে সাফল্য পেতে চাইলে সবার প্রথমে ফাস্টফুড এবং মদের থেকে দূরত্ব বাড়ান। তার বদলে নিয়মিত সেবন করুন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ লিচু। আশা করছি, তাতেই উপকার মিলবে হাতেনাতে।

ত্বক থাকবে সুস্থ-সবল

গরমে ত্বকের হাল বেহাল হতে সময় লাগে না। তাই এই সময় স্কিন কেয়ারে একটু বেশি মনোযোগ দিতে হবে। আর এই কাজে সাফল্য পেতে চাইলে আজই হাত ধরুন লিচুর। কারণ এই ফলে রয়েছে ভিটামিন সি-এর ভাণ্ডার। আর এই ভিটামিন কিন্তু সূর্যের প্রখর রোদ থেকে ত্বককে বাঁচায়। এমনকী এই ভিটামিনের গুণে ত্বকের ক্ষতও দ্রুত সেরে যায়। তাই আর সময় নষ্ট না করে আজ থেকেই লিচু খাওয়া শুরু করে দিন। আশা করছি, তাতেই উপকার পাবেন হাতেনাতে।

গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে

লিচুতে রয়েছে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫০, যার ফলে ধীরে ধীরে রক্তের মধ্যে সুগার প্রবেশ করে। আর গ্লাইসেমিক লোডের পরিমাণ ৭.৬, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ। যাদের শরীরে রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে, তারা প্রতিষেধক হিসেবে লিচু গ্রহণ করতে পারেন। লিচুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ব্যথা দূর করে

শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করতে কাজ করে লিচু। শুনতে অবাক করা হলেও এটি সত্যি। লিচু একটি কার্যকরী ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এটি খেলে কমে প্রদাহ। সেইসঙ্গে এটি টিস্যুর ক্ষতি প্রতিরোধ করে।

হার্ট ভালো রাখে

হার্ট ভালো রাখার পক্ষে সহায়ক একটি ফল হলো লিচু। এতে থাকে অলিগোনল, যা নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরে রক্ত চলাচলে সাহায্য করে এই নাইট্রিক অক্সাইড। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ভাসকুলার ফাংশন উন্নত করে। ফলে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত লিচু খেলে হার্টের অসুখের ঝুঁকি কমে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

যাদের শরীরে রক্ত নালীতে রক্তচাপ বেড়ে যায় বা প্রেশার বারবার উঠানামা করে, তারা খাবারের তালিকায় নিয়মিত লিচু রাখার চেষ্টা করবেন। কারণ লিচুর রসের মধ্যে থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে কাজ করে। ফলে রক্তচাপ কমিয়ে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

পেটের সমস্যায় মুক্তি

লিচু হজম শক্তি উন্নত করে। এতে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার ও প্রচুর পানি থাকে। যা হজমের জন্য কাজ করে। গরমে আমাদের পেটে নানা সমস্যা হয়। লিচু খেলে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

চোখের ছানি পড়া দূর করে

লিচু আপনার চোখ জোড়াও যত্ন নিবে। এটি খেলে চোখের ছানি পড়ার সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন। লিচুতে রয়েছে বিশেষ ফাইটোকেমিক্যাল।যা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও চোখের সুরক্ষার জন্য দরকারী। যা চোখে ছানি পড়াও আটকাতে সাহায্য করে।

সাবধানতা

লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামের একধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি হতে বাধা দেয়। যে কারণে শিশুরা খালি পেটে অনেকগুলো লিচু খেয়ে ফেললে শরীরের শর্করা কমে শিশুর বমি ও খিঁচুনি হয়। অনেক সময় তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com